প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৫, ২০২৪, ১১:৫৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১০, ২০২১, ৭:৫৫ অপরাহ্ণ
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকালে স্বামীর মৃত্যু; নববধূর গগন কাপানো আহাজারি
রিপোর্ট-মেজবাহউদ্দিন মাননুঃ
বিয়ের পরে প্রথমবারের মতো স্বামীর সঙ্গে; স্বামীর বাড়ি ফিরল নববধূ হাফিজা। তবে জীবিত স্বামীর সঙ্গে নয়। নয় কোন ফুলের সাজানো প্রাইভেট কার নিয়ে। একটি এম্বুলেন্সে করে; স্বামীর মরদেহের সঙ্গে। স্বামীর নিথর দেহের পাশেই নববধূ হাফিজা। সেও নির্বাক। অর্ধচেতনাও নেই। বার বার মূর্ছা যাচ্ছিল। যাকে সারাজীবনের জীবনসঙ্গী করেছে কয়েকদিন আগে। একটি দিবসও এক সঙ্গে কাটায়নি। কেবল চেনা-জানা চলছিল।
হাফিজার দু’চোখে অনর্গল অশ্রু ঝরছিল।
কখনও তা আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে। আকাশ কাপানো হাফিজার সেই আহাজারিতে উপস্থিত কেউ চোখের অশ্রু সংবরণ করতে পারেনি। স্বামী কাওছার ২২ ফেব্রুয়ারি ধর্মীয় রীতি আর রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে করে হাফিজাকে। কাওছারের বাড়ি কুয়াকাটার মুসল্লীয়াবাদ গ্রামে। বাবা সুলতান মিয়ার তৃতীয় ছেলে।
মার্চের ১ তারিখে এক দিনের জন্য শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিল কাওছার। ওই শেষ। অনার্সের শিক্ষার্থী ছিল কাওছার। আর আলীপুর বন্দরে হাফিজার বাড়ি। হাফিজা উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য কুয়াকাটার এক নিকটজনের বাড়িতে নেয়া হয় হাফিজাকে। চলছিল সব ঠিকঠাক। গানবাজনা আর উৎসবে সবাই মেতেছিল। ঠিক সেই সময় হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তরুণ, নববিবাহিত কাওছার। সবাই তখনও ভাবছিল হয়তো সামান্য ব্যাপার। অবস্থার অবনতি ঘটায় অনুষ্ঠান থেকে দ্রুত বরিশাল শেবাচিমে নেয়া হয়। পথিমধ্যে কাওছার পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে চীরবিদায় নেয়। নববধূ হাফিজার পৃথিবী কালো অমাবস্যার অন্ধকারে আটকে যায়। ছোট্ট এ নববধূ যেন খেই হারিয়ে ফেলেন। এই কী তার জীবনের পরিনতি! কী করবে এ বধূ! কেবল সাজতেছিল বধূর সাজে। সব শেষ হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। বিধবা হয়ে গেল? কেন এই নিয়ম। তারপরও ¯্রষ্টার অমোঘ নিয়ম মানতেই হবে হাফিজাকে। এখন হাফিজাও যেন জীবন্ত লাশ! চুপটি মেরে অচেতন মানুষের মতো বসে থাকছে। আর দু’চোখ গড়ায়ে অশ্রু ঝরছে আপন গতিতে। এর কবে, কখন শেষ হবে তার জানা কারও নেই। জানা নেই এই কিশোরী নববধূর। আর কাওছার; কুয়াকাটার এক অতি পরিচিত নাম। সমাজ হিতৈষী ছিল। জড়িত ছিল পরোপকারের কাজের সঙ্গে। সঙ্গীরা, বন্ধুরা, শুভাকাঙ্খিসহ সজনেরা মঙ্গলবার সালে বাড়ির কবরস্তানে শুইয়ে দিলেন; কাওছারকে। চীরজীবনের মতো। চলে গেল না ফেরার দেশে। যেন ভুলতে না পারা এক ঘটনার অবতারণ ঘটল; কাওছারের হঠাৎ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
আর হাফিজাও রইল শোকের সাগরে ভাসা এক শ্যাওলা হয়ে। দুচোখে দেখা একদিন আগের বর্ণিল পৃথিবী আজকে বিবর্ণ তার চোখে।
Copyright © 2024 আপন নিউজ. All rights reserved.