রিপোর্ট-মেজবাহউদ্দিন মাননু।। কলাপাড়ায় ৯০ কিলোমিটার পাকা সড়কের চরম বেহাল দশা। খানা-খন্দে একাকার হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্মিত বিটুমিনাস কার্পেটিং এ সড়কের অধিকাংশ সিলকোট উঠে গেছে। বর্ষায় পানি জমে একাকার হয়ে যায়। অধিকাংশ সড়কের কার্পেটিংএর অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। বালু কাদামাটি বেরিয়ে গেছে। পাকা এ সড়কগুলো এখন মরনফাদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে মানুষ। দীর্ঘ দিনে মেরামত না করার এসব সড়ক এখন ব্যবহার অনপযোগী হয়ে গেছে। তবে গ্রামের মানুষের দাবি ছয় চাকার অবৈধ ৫০টিরও বেশি দৈত্যাকৃতির যান, হামজা কিংবা ট্রলি অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করে চলাচলের কারনে শুধু পাকা সড়ক নয়, আরও শত কিলোমিটার কাঁচা কিংবা হেরিংবন্ড রাস্তা ভেঙ্গে গেছে।
এলজিইডির তথ্যমতে, তিন মিটার প্রস্থ এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরনে ৮০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ অবৈধ ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যানের (ট্রলি-হামজা) চাকায় (নির্মাণের ৩-৬ মাসেই) পিস্ট হয়ে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সরকারের শত কোটি টাকার পাকা সড়ক ছাড়াও আরও ৫০ কোটি টাকার কাঁচা মাটির কিংবা ইটের রাস্তার সর্বনাশ করে হয়েছে। এসব রোধে নেই কোন পদক্ষেপ। ফেেল সরকারের গ্রামীণ যোগাযোগের উন্নয়ন চিত্র বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। সড়ক ধংসের এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এলজিইডি সুত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় এলজিইডি নির্মিত পাকা-কাঁচা মোট সড়ক রয়েছে এক হাজার ৯৮৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলা সংযোগ সড়ক রয়েছে ১০টি, যার দৈর্ঘ্য ১১৯ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক রয়েছে ২৩টি। যার দৈর্ঘ্য ২২৯ দশমিক ১৮ কিলোমিটার। গ্রামীণ গুরুত্বপুর্ণ সড়ক রয়েছে ৫৪টি। যার দৈর্ঘ্য ২৪২ দশমিক ৮২কিলোমিটার। গ্রামীণ কম গুরুত্বপুর্ণ সড়ক রয়েছে ৪৫৬টি। এর মধ্যে চার শ্রেণির সড়কের মধ্যে বিটুমিনাস কার্পেটিং (পাকা) সড়ক রয়েছে দুই শ’ ৫২ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। এক শ’ ১৬ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে ইট বিছানো।
এছাড়া কাঁচা মাটির সড়ক রয়েছে এক হাজার ৬১০ কিলোমিটার। ১২ টি ইউনিয়নের হিসাব এটি। তাঁদের দেয়া তথ্যমতে, ১২ ইউনিয়নের অন্তত ৯০ কিলোমিটার পাকা বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক খুব খারাপ হয়ে গেছে। গেছে যান চলাচল অনুপযোগী। যার মধ্যে টিয়াখালী প্রায় ছয় কিমি, চাকামইয়া সাত কিমি, ধানখালীতে ১৪ কিমি, চম্পাপুরে সাড়ে তিন কিমি, লালুয়ায় চার, বালিয়াতলীতে ১০, ধুলাসারে নয়, মিঠাগঞ্জে আট, নীলগঞ্জে প্রায় সাত, মহিপুরে আড়াই, লতাচাপলীতে ১৬ এবং ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে সাড়ে তিন কিলোমিটার পাকা সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর মধ্যে হেরিংবন্ড ছাড়াও কাঁচা আরও এক শ’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা রয়েছে। হাটু সমান কাদা হয়ে গেছে।
লালুয়ার সকল সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এসব সড়ক পাকা না মাটির তা পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই বলে জানালেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস। সবশেষ ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে সব তছনছ করে দেয়। মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। এলজিইডির প্রকৌশলী মোঃ মহর আলী জানান, অন্তত ১৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্প্রতি করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আরও ১৯ কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো পাকাকরন করার পাশাপাশি মেরামত করা হবে। এছাড়া সড়ক নষ্ট করতে না পারে এজন্য ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যান হামজা কিংবা ট্রলি চলাচল বন্ধে তারা কলাপাড়া এবং মহিপুর থানার ওসিদ্বয়কে চিঠি দিয়েছেন।
কলাপাড়া থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এসব যানবাহন চলাচল বন্ধের চিঠি তার কাছে পৌছেনি। মহিপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামানও একই কথা জানান।