প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ২, ২০২৪, ৭:৫২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০, ৬:৪৬ অপরাহ্ণ
আমতলীতে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা
আমতলী প্রতিনিধিঃ
যৌতুক না পেয়ে গৃহবধু মনিরা আক্তারকে নির্যাতন করে স্বামী নুর মোহাম্মদ হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহত মনিরার মা আসমা বেগম এ অভিযোগ করেন। ঘটনা ঘটেছে রবিবার রাতে তালতলীর পাঁচশোবিঘা হোসেন মিয়ার ইটভাটায়। আমতলী থানা পুলিশ গৃহবধু মনিরার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করেছে এবং মনিরার স্বামী নুর মোহাম্মকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রেখেছেন। জানাগেছে, বরগুনার সদর উপজেলার ছোট লবনগোলা গ্রামের মোঃ কামাল হাওলাদার মেয়ে মনিরা আক্তারের সাথে আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া গ্রামের ছত্তার মোল্লার ছেলে নুর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করে আসছিল। গত বছর মার্চ মাসে পরিবারের অসম্মতিতে দুজনে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে মনিরা তার স্বামী নুর মোহাম্মদের বাড়ীতে অবস্থান করে। গত তিন মাস পূর্বে স্বামী নুর মোহাম্মদ তালতলী উপজেলার পাচশোবিঘা গ্রামের হোসেন মিয়ার ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয়। ওই খানে স্বামীর সাথে স্ত্রী মনিরাও থাকতো। বিয়ের পর থেকে স্বামী নুর মোহাম্মদ যৌতুকসহ বিভিন্ন অযুহাতে স্ত্রী মনিরাকে মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে করায় মনিরা এ নির্যাতনের কথা কাউকে জানায়নি। নিরবে সহ্য করে আসছিল সে। গত এক মাস ধরে স্বামী নুর মোহাম্মদ স্ত্রী মনিরাকে মায়ের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে।
হত-দরিদ্র মনিরার মা তালাকপ্রাপ্ত আসমা বেগম এ টাকা দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে মনিরাকে প্রায়ই নুর মোহাম্মদ নির্যাতন করে আসছিল বলে এমন অভিযোগ মা আসমা বেগমের। মায়ের কাছ থেকে টাকা না আনায় ঘটনার দিন রবিবার দুপুরে মনিরাকে স্বামী নুর মোহাম্মদ অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নির্যাতন করে। ওইদিন সন্ধ্যায়ই ঘরের মধ্যে মনিরার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ সময় ওই ঘরে স্বামী নুর মোহাম্মদ ও স্ত্রী মনিরা ছাড়া আর কেউ ছিল না। দ্রুত নুর মোহাম্মদ মনিরাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। হাসপাতালে এনে নুর মোহাম্মদ কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে জানান ঘুমের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। অনেক চেষ্টা করেও জ্ঞান ফিরছে না। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকদের তার কথায় সন্দেহ হয়। পরে তারা মনিরার গলায় আঘাতের চিহৃ দেখে এবং তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মনিরার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং স্বামী নুর মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রাখেন। সোমবার মনিরার মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরন করেছে। এ ঘটনায় আমতলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এদিকে নুর মোহাম্মদ পুলিশকে জানান, মনিরা গলায় ওড়না পেচিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু নিহত মনিরার মামা মিন্টু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাগ্নিনীকে ওর স্বামী নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নিহত মনিরা মা আসমা বেগম বলেন, গত এক মাস পূর্বে জামাতা নুর মোহাম্মদ আমার মেয়ের কাছে প াশ হাজার টাকা যৌতুক চায়। আমি এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার মেয়েকে নুর মোহাম্মদ নির্যাতন করেছে। ঘটনার দিন আমার মেয়ে আমাকে মোবাইল ফোনে টাকা না দেয়ায় নির্যাতন করেছে বলে জানিয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মোসাঃ তারান্নুম মাহযাবিন বলেন, মনিরার স্বামী নুর মোহাম্মদ তার স্ত্রীকে হাসপাতালে এনে জ্ঞান হারিয়েছে বলে আমাকে জানায়। কিন্তু আমার তার কথায় সন্দেহ হয়। পরে মনিরার শরীর পরীক্ষা করে দেখি তার গলায় আঘাতের চিহৃ রয়েছে এবং মনিরার মৃত্যু হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার বলেন, মনিরার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
Copyright © 2024 আপন নিউজ. All rights reserved.