বিশেষ প্রতিবেদকঃ কলাপাড়া চৌকি আদালতের কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনজীবী কিংবা আইনজীবী সহকারী নন তিনি। আদালতের কার্যতালিকায় প্রতিদিন তার বিরুদ্ধে মামলাও নেই। এরপরও প্রায় প্রতিদিনই আদালত চত্বরে দেখা যাচ্ছে তাকে। মাঝে মধ্যে বিচারপ্রার্থী মানুষকে সাথে নিয়ে আদালতের বে সহকারী, নকল কারক ও পুলিশ শাখার দায়িত্ব প্রাপ্তদের সাথে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। কখনও মামলার কপি হাতে বিচার প্রার্থী মানুষের পাশে দাড়িয়ে ফিস ফিস করে কথা বলছেন তিনি। কখনও বিচার প্রার্থী মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গুনতে দেখা যায় তাকে। এছাড়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ব্রাদার ও থানার বকশির সাথেও আলাপ চারিতায় দেখা গেছে তাকে। এরা সংখ্যায় একজন নন। আদালত চত্বরে বেশ কয়েকজনকে প্রতিদিন এভাবে দেখা যায়।
এদের একজন মিজান মুসুল্লী (৩২)। পিতার নাম মোতালেব মুসুল্লী। মহিপুর থানার অন্তর্গত লতাচাপলি ইউনিয়নের মুসুল্লীয়াবাদ গ্রামে তার বাড়ী। তিন ভাই বোনের মধ্যে মিজান সবার বড়। বাবা একজন আদর্শবান মাদ্রাসা শিক্ষক। বিনা পূঁজির রমরমা দালালি ব্যবসা করে আর্থিক ভাবে লাভবান এখন মিজান। শুধু মিজান একা নয়, তার মত বেশ কয়েকজন বিনা পূঁজির এ দালালি ব্যবসা করে এখন লাভবান। প্রতিদিন আদালতে এসে বে থেকে দায়েরকৃত নালিশী মামলা ও পুলিশ শাখা থেকে থানায় রেকর্ড হওয়া নতুন মামলার কপি সংগ্রহ করে এরা। এরপর আসামীর নামের তালিকায় থাকা ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে সম্পর্ক গড়ে, পরবর্তীতে হাসিল করে ফায়দা।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিজান মুসুল্লী’র বক্তব্য, ’আসন্ন লতাচাপলি ইউপি নির্বাচনে মুসুল্লীয়াবাদ ওয়ার্ড থেকে আমি সদস্য পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এজন্য আমার গ্রামের বিচারপ্রার্থী মানুষের সাথে দু’একদিন আদালতে যেতে হচ্ছে। এছাড়া আমার নিজেরও মামলা আছে, যার জন্য আমাকে আদালতে যেতে হয়।’
কলাপাড়া চৌকি আদালতের আইনজীবী কল্যান সমিতির সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, ’মিজান মুসুল্লী একজন টাউট, দালাল হিসেবে আদালত চত্বরে চিহ্নিত। তার মত আরও বেশ ক’জন আছে। এদের সকলকে চিহ্নিত করে আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’ খন্দকার নাসির আরও বলেন,’এর আগে বিচারকের বন্ধু পরিচয় দিয়ে হাজতী আসামীর জামিন করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া দু’জনকে গ্রেফতার করে টাউট আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। যে মামলা দু’টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।’
কলাপাড়া চৌকি আদালতের আইনজীবী কল্যান সমিতির সম্পাদক ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন,’ মিজান মুসুল্লী একজন দালাল। মামলার কপি নিয়ে বিচারপ্রার্থী মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে জামিন করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অসহায় মানুষকে প্রতারনার ফাঁদে ফেলেন তিনি।’
আদালতের জিআরও এএসআই মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, ’মিজান মুসুল্লীকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। যেকোন সময় গ্রেফতার হওয়ার শংকার কথাও তাকে জানানো হয়েছে।’