বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৬ অপরাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি।। সন্ধ্যা নামলেই মাদক সেবীদের মিলন মেলা বসে আমতলী লঞ্চঘাটের যাত্রী ছাউনিতে। রাত পোহালেই বসে পশুদের অভয়রান্য। গত চার বছরে একদিনের জন্যও তালা খোলেনি যাত্রী ছাউনির বিশ্রামাগারের। অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে আমতলী লঞ্চঘাটের যাত্রী ছাউনি। দ্রুত এর বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন লঞ্চ যাত্রীরা।
জানাগেছে, আমতলী লঞ্চঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী লঞ্চে উঠানামা করে। যাত্রীদের সুবিধার্থে সরকার সুন্দর মনোরম পরিবেশে লঞ্চঘাট সংলগ্ন যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করেন। ২০১৮ সালের ২ মে তৎকালিন নৌ পরিবহন মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান লঞ্চঘাট যাত্রী ছাউনির উদ্বোধন করেন। গত চার বছর ধরে ওই যাত্রী ছাউনির বিশ্রামাগার ও বসার কক্ষের তালা বন্ধ রয়েছে। অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে যাত্রী ছাউনিটি। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে যাত্রী ছাউনিতে বসে মাদক সেবীদের মিলন মেলা। রাত পোহালেই পশুদের অভয়ারন্য এবং শিশু কিশোরদের খেলার স্থান। উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় গত চার বছরে লঞ্চ যাত্রীরা ওই যাত্রী ছাউনিতে বিশ্রাম ও অপেক্ষমান কক্ষে বসেনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীরা যাত্রী ছাউনির মধ্যে বসে মনের আনন্দে মাদকসেবন করে। অযন্ত আর অবহেলার পড়ে থাকায় স্থানীয় কিছু লোক ছাগল ও গরু বেঁধে গো-শালায় পরিনত করেছে। তারা আরো অভিযোগ করেন বিআউডবিøউটিএর কন্টোল লস্কর মনির হোসেন নামের একজন থাকলেও তিনি রক্ষনাবেক্ষনে তেমন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
যাত্রী ছাউনির পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও অপরিষ্কার অপরিছন্ন অবস্থায় পড়ে আছে টয়লেটগুলো। যাত্রী ছাউনির টয়লেট ব্যবহারের উপযুক্ত পরিবেশ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এটা যাত্রী ছাউনি নয় যেন মাদকসেবীদের আড্ডা খানা। সন্ধ্যা হলেই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মাদবসেবীরা এসে মাদকসেবক করে। তারা আরো বলেন, মাদকসেবীদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন তাদের প্রতিহত করতে সাহস পাচ্ছে না। দ্রুত যাত্রী ছাউনি মাদকমুক্ত করে লঞ্চ যাত্রীদের বিশ্রামের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির দাবী জানান তারা।
বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, যাত্রী ছাউনির বিশ্রামাগার ও বসার কক্ষে তালা দেয়া। ১০-১২ শিশু যাত্রী ছাউনির বাড়ান্দায় খেলাধুলা করছে। ছাউনির মধ্যে ছাগল বাঁধা। টয়লেটের দরজা খোলা থাকলেও যথেষ্ট অপরিস্কার। তা ব্যবহারের অনপুযোগী। ছাউনির মুল ফটকে টমটম ও কাঠের গুড়ি রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে
জানাগেছে, গত চার বছরে একদিনও ওই যাত্রী ছাউনির বিশ্রামাগারের তালা খোলা হয়নি এবং কোন যাত্রী বিশ্রাম নিতে পারেনি। যাত্রী ছাউনি বাহিরে চাকচিক্য থাকলেও ভিতরের পরিবেশ যথেষ্ট নোংড়া।
শিশু হৃদয়, সোলায়মান, সরোয়ার, সাগর, তানভির, তামিম ও জাবের জানান, গত চার বছরে এক দিনের জন্যও যাত্রী ছাউনির বিশ্রামাগারের তালা খোলা হয়নি। বিশ্রামের জন্য যাত্রী আসলেও তালা দেয়া দেখে তারা চলে যান। তারা আরো জানান, সন্ধ্যা হলেই ওই যাত্রী ছাউনির মধ্যে দলে দলে মাদকসেবীরা এসে মাদক সেবন করে।
আফসানা মিমি রায়হান ও মোঃ রাকিবুল ইসলাম বলেন, সরকার যাত্রীদের সেবায় ছাউনি নির্মাণ করলেও যাত্রীরা সেবা পাচ্ছে না। সার্বক্ষনিক থাকে তালা দেয়া।
যাত্রী আব্দুল আউয়াল বলেন, বেলা ১১ টার দিকে লঞ্চঘাটে এসেছি। বিশ্রামের জন্য যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে দেখি তালা দেয়া তাই নিরুপায় হয়ে টার্মিনালেই বসে আছি।
নারী যাত্রী লাভলী বলেন, ঈদের দুইদিন আগে রাত সাড়ে ৩ টার দিকে এমভি শতাব্দি লঞ্চ আমতলী টার্মিনালে এসেছে। ওই রাতে কোথায় যাব? যাত্রী ছাউনিতে বিশ্রামের জন্য এসে দেখি তালা দেয়া। নিরুপায় হয়েই লঞ্চের টার্মিনামে তিন ঘন্টা কাটিয়েছি।
যাত্রী কাইয়ুম বলেন, যাত্রী ছাউনি না যেন পশুদের অভয়ারন্য এবং নোংড়া পরিবেশ। যাত্রীদের সুবিধার জন্য ছাউনি নির্মাণ করলেও কোন কাজেই আসছে না।
আমতলী উপজেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক বে-সরকারী সংস্থা এনএসএস’র নির্বাহী পরিচালক এ্যাড. শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, লঞ্চঘাটের যাত্রী ছাউনির জঞ্জালমুক্ত করে যাত্রীদের বিশ্রামের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
বিআইডবিøউটিএ কন্টোল লস্কর মোঃ মনির হোসেন বলেন, পল্টন দেখাশুনা করা আমার দায়িত্ব কিন্তু যাত্রী ছাউনি দেখাশুনার দায়িত্ব আমার না হলেও আমি দেখাশুনা করি।
তিনি আরো বলেন, যাত্রী ছাউনিতে মাদকসেবীদের আড্ডা ও পশু চারনের জন্য প্রতিবাদ করলেও আমার কথা শুনছেন না।
বরগুনা বিআইডবিøউটিএ সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, যাত্রী ছাউনি নির্মাণের উদ্দেশ্য ব্যহত করা যাবে না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, বিষযটি আমার জানা না থাকলেও মাদকের বিরুদ্ধে কোন ছাড় নেই। দ্রুত এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply