আমতলী প্রতিনিধি: আমতলী উপজেলা পরিষদ পুনঃনির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে সাধারণ মানুষ ও স্বাম্ভব্য প্রার্থীদের মাঝে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে পুরাতন প্রার্থী না নতুন প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন। নির্বাচন তফসিল পরিপত্রে অস্পষ্টতা থাকায় সাধারণ ভোটার ও স্বাম্ভব্য প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্ধ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ শোরগোল পরেছে।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ সেলিম রেজা বলেন, আরো অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কি বলে? আমার কাছেও এর স্পষ্টতা নেই।
জানাগেছে, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়মীলীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব জিএম দেলওয়ার হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলহাজ্ব গোলাম ছরোয়ার ফোরকান, সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু ও গাজী সামসুল হক প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আলহাজ্ব গোলাম ছরোয়ার ফোরকান ঋণ খেলাপীর তথ্য গোপন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ওই বছরের ২১ এপ্রিল ঋণখেলাপির তথ্য সংযোজন করে তার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী আলহাজ্ব সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু বরগুনা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। বরগুনা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আল মামুন ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী ফোরকানকে আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুকে বিজয়ী ঘোষনার আদেশ দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ফোরকান হাইকোর্টে আপিল করেন। উচ্চ আদালত নি¤œ আদালতের রায় স্থগিত করে পুনরায় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য পাঠিয়ে দেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে ওই বছর ৩১ আগষ্ট আদালতের বিচারক মোঃ হাসানুল ইসলাম পুর্বের রায়ের আংশিক বাতিল করে গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষনা করে পুনঃনির্বাচনের আদেশ দেন।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছেন। আগামী ১৬ মার্চ নির্বাচনের দিন ধায্য রেখে মঙ্গলবার উপ-সচিব মোঃ আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তফসিল ঘোষনা করা হয়। তফসিলে পুনঃনির্বাচনে বিদ্যমান প্রার্থীদের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া চারজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জিএম দেলওয়ার হোসেন ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল মারা যান। গোলাম ছরোয়ার ফোরকান, সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু ও গাজী সামসুল হক বর্তমানে জীবিত রয়েছেন। পুনঃনির্বাচনে সকল প্রার্থীর অংশগ্রহন বাধ্যতামুলক থাকলেও একজন প্রার্থী মারা গেছেন তাহলে পুনঃনির্বাচন হবে না উপ-নির্বাচন হবে এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও পরিপত্রে অস্পষ্টতা থাকায় সাধারণ ভোটার ও স্বাম্ভব্য প্রার্থীরা দ্বিধাদ্বন্ধে রয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থী নতুন না পুরাতন নিয়ে বেশ শোরগোল পরেছে। তফসিল ঘোষনার খবরে আমতলী উপজেলার সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও প্রার্থী নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে তারা হতাশ।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ দফতর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন ফকির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন পুনঃনির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হলেও পরিপত্রতে চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। পুরাতন প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন না নতুন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তিনি আরো বলেন মনোনয়নপত্র দাখিল করা চারজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জিএম দেলওয়ার হোসেন মারা গেছেন। তার বিষয়ে ওই তফসিলের পরিপত্রে স্পষ্ট লেখা নেই। এতে সাধারণ ভোটার ও স্বাম্ভব্য প্রার্থীরা দ্বিধাদ্বন্ধে রয়েছেন। দ্রুত প্রার্থীতা স্পষ্ট করণের দাবী জানান তিনি।
আদালতের রায়ে অব্যহতিপ্রাপ্ত সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ¦ গোলাম ছরোয়ার ফোরকান বলেন, পরিপত্রে উল্লেখ আছে বিদ্যমান প্রার্থীরাই পুনঃনির্বাচনে অংশ নিবে। ওই পরিপত্র অনুসারে পুরাতন প্রার্থীরাই পুর্ননির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন। তিনি আরো বলেন, পরিপত্রের আরো স্পষ্টতা জেনে পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, নির্বাচন কশিশন থেকে পুনঃনির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছেন। কিন্তু কিভাবে নির্বাচন হবে কারা প্রার্থী হবে এ বিষয়ে কিছুই জানিনা?
বরগুনা জেলা নির্বাচন অফিসার দীলিপ কুমার হাওলাদার বলেন, আমতলী উপজেলা পরিষদ পুনঃনির্বাচনের অংশ নেয়া একজন প্রার্থীর ইতিমধ্যে মৃত্যুর বিষয়ে কমিশনকে জানিয়েছি। তারা পদক্ষেপ নিয়ে জানাবেন।