আপন নিউজ অফিস: পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জনৈক তরিকুল ইসলাম এর অনৈতিক কর্মকান্ড ও অবৈধ লেনদেন করে অসহায় পরিবারদের নোটিশ দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। এরআগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে খেটে খাওয়া দিনমজুর পরিবারের লোকজন।
ওই অভিযোগে উল্লেখ করেন, কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামের গরীব অসহায় লোক আমরা। আমাদের নিজস্ব জমি জমা না থাকায় ওয়াপদা একোয়ার ভুক্ত জমিতে প্রত্যেকে ৩০-৩৫ বৎসরের উর্ধকাল যাবত বসত ঘর দরজা নির্মাণ করে বসবাসরত আসছি।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জনৈক তরিকুল ইসলাম আমাদের এলাকার একটি অবৈধ ইটভাটা যার মালিক আঃ মান্নান'র পুত্র জহির এর সাথে গোপন মোটা অংকের লেনদেন জহিরের কথা অনুযায়ী ওয়াপদা একোয়ারে প্রায় ২০০-২৫০টি বসত ঘরের মধ্যে মাত্র ১০/১২টি বসত ঘর যার ইট ভাড়ার পাশাপাশি সে বসতবাড়ি ঘর ও দোকান উচ্ছেদ করার জন্য ইং ১০/০১/২০২৩ তারিখ পানি উন্নয়ন বোর্ড নোটিশ দিয়াছে।
ওই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে উন্নয়ন মুলক কোন কাজের পরিকল্পনা না থাকা স্বত্ত্বেও ১০/১২ ঘর ভাঙ্গার নোটিশ প্রদান করে আরো ২০/২৫টি ঘর ভাঙ্গার জন্য লাল রং দ্বারা চিহ্নিত করেছে।
উল্লেখ্য, নাচনাপাড়া গ্রামের অর্ধশত বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় বসবাসরত ভূমিহীন অসহায় পরিবারগুলো উচ্ছেদ আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দশ দিনের উচ্ছেদ নোটিশে বসবাস করার আশ্রয়স্থলটুকু হারাতে হচ্ছে। সহায় সম্ভলহীন অসহায় এ মানুষগুলো এখন যাবে কোথায়। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের জায়গা দখল ও উচ্ছেদের বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের উচ্ছেদ নোটিশের প্রতিবাদে গত বুধবার বিকালে বেড়িবাঁধের পাশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ভুক্তভোগীরা। মানববন্ধনে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানা যায়, উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামের বেড়িবাধের পাশে ছোট্ট কুটির ঘরে দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে বংশ পরাম্পরায় সন্তানাদি নিয়ে বসবাস করে আসছে সেখানকার খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষগুলো। এতগুলো বছর কেটে গেলেও হয়নি কোন সমস্যা। কত সরকার এলো গেলো কেউ কখনও তাদের উচ্ছেদের বিষয়ে আঙ্গুল তুলেনি। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চক্ষুশুল্ম হয়েছে অসহায় মানুষগুলোর বসবাসের এ জায়গাটুকুতে। অভিযোগ উঠেছে পাশেই একটি ইট ভাটার ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে আকশ্মিক ও তড়িগড়ি এ নোটিশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০২৩ সালে ১০ জানুয়ারী ৪৩/১ বি পোল্ডারে বেড়িবাধের পাশে বসবাসরত প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছে। এরমধ্যে রাজু গোলদার, লতিফ গাজী, মনির ডাক্তার, মিলন হাওলাদার, বাহাদুর, জবিউল, পনির, গৌরঙ্গ বাবু, বশির মাষ্টার, মনির মাওলানা, আলমগীর হওলাদার ও সোবাহান হাওলাদারের পরিবারসহ কয়েকটি পরিবারকে দশদিনের উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টি পরিবারকে ক্রোস চিহ্ন দিয়ে উচ্ছেদের সংকেত দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রয়োজনে আমরা জায়গা ছাড়তে বাধ্য। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম সহ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে অবৈধ অর্থের লোভে আমাদের উচ্ছেদ করে অন্য কিছু লোকদের সুবিধা পাইয়ে দেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। আমরা তরিকুলের বিচার চাই।
ভুক্তোভোগী সত্তোরর্ধ আব্দুল মজিদ বলেন, আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে আমিই প্রথম এ জায়গায় বসতি শুরু করি। পরবর্তীতে অনেকগুলো পরিবার একত্রিত হয়ে দীর্ঘ এতগুলো বছর পার করেছি। এ পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। হঠাৎ তরিকুল ইসলাম দশদিনের নোটিশে আমাদের উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে। আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো।
অপর এক ভুক্তোভোগী সাফিয়া বেগম বলেন, আমরা শুনেছি পাশের একটি ইট ভাটাকে অবৈধ সুবিধা দেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড'র তরিকুল ইসলাম আমাদের উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে। আমরা স্থানীয় এমপি মহোদয় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাজই হয়েছে নোটিশ দেওয়া।