রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
আমার বাড়ি খেপুপাড়ায়। ছোট বেলা থেকে এই দশ নং মহা বিপদ সংকেত এর সাথে আমরা খেপুপাড়াবাসী অতি পরিচিত। তবে আপনারা শুনলে অবাক হবেন এই সংকেতে আমরা শংকীত নই। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি রেডিওতে অনর্গল প্রচার হচ্ছে ১০ নং মহাবিপদ সংকেত চলছে কিন্তু এমন সংকেতেও ছোটবেলায় মা বাবাকে ভয় পেতে দেখি নাই। নদীর ধারে ওয়াপদার বাহিরে কাঠের নড়বড়ে ঘর আমাদের। ঝড়ের তান্ডবে দুলছে ঘর। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর সাথে জোয়ারের পানি। তাও বাবা মা আবহাওয়ার আরো কিসের সংকেতের অপেক্ষায় ছিলেন আমার সেই বয়সে জানা সম্ভব হয়নি, আমার মাকে দেখেছি আকাশের বিদ্যুৎ চমকানোর ধরন দেখে বলে দিতেন আবহাওয়া কেমন হবে। তবে আমরা সকলে অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাড়ি ছেড়ে মজবুত নিরাপদ ঘরে যেতে হবে। যখন জোয়ারের পানি বাবা মায়ের কোমড় অব্দি হয়ে যেতো আর ঘরের টিনের চাল উড়ে যেতো তখন আমাদেরকে নিয়ে বাবা মা আমাদের ঠিক পাশের বাড়ি কাঠের বড় খুঁটি মজবুত ঘর নেশেমাদের নানা বাড়িতে নিয়ে যেতেন (এখন যে বাড়িতে নেশেমারা থাকে)। আবার বন্যার পানি যখন ৫/৭ ফুট উচু হয়ে যেতো তখন ওয়াপদার ভিতরে মিনুদের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এভাবেই প্রতি বছর এই দূর্যোগ মোকাবেলা করে আমরা বড় হয়েছি। এখানে একটা কথা না বল্লেই নয়, যাদের বাড়িতে বন্যায় আশ্রয় নিয়েছি তাঁদেরকে কখনো বিরক্ত হতে দেখি নাই। তাদের যা ছিলো খাবার দাবার আমাদের সাথে শেয়ার করে খেয়েছে।
তিনি বলেন, আজ ২০২৪ সাল ২৬ শে মে! টিভি তে ১০ নং মহাবিপদ সংকেত খেপুপাড়ায় চলছে নিউজে বার বার প্রচার হচ্ছে। প্রথমেই নেশেমাকে কল দিয়েছি যদিও তাদের ঘর মজবুত। তবুও ছোট বেলার স্মৃতিকে উপেক্ষা করতে পারি নাই। তারপর খোঁজ নিয়েছি গোড়া আমখোলা পাড়ায় যেখানে দ্বিতীয় সাব মেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামীণ ফোন নেটওয়ার্ক দূর্বল হওয়ার কারণে কারো সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। শুধু টেলিটক নং এ জেমার সাথে যোগাযোগ হলো। তখন বিকাল ৪ টা। জেমা বল্লো আন্টি, আমরা কয়েকজন সাব মেরিন অফিসে, মোবাইলে চার্জ দিচ্ছি এখানে ইলেক্ট্রিসিটি আছে। (জেমার বুদ্ধিমত্তায় মোবাইলে চার্জ থাকার কারণে ভোর চারটা অব্দি একমাত্র জেমার মোবাইলে আমখোলা পাড়ার খবর নিতে পেরেছি) আর জেমা বল্লো সাব মেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন ইন-চার্জ তরিকুল স্যার বলেছেন আমাদের অফিস খোলা থাকবে আপনারা আমাদের এখানে আশ্রয় নিতে পারবেন। পরবর্তীতে মো: রবিউল ইসলাম কলাপাড়া উপজেলার ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে জানতে পারি তিনি সাব মেরিন সহ কুয়াকাটার সকল হোটেল মোটেল ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় ইউএনও মহোদয়কে রাত ১২ টায় ফোন দিয়ে আমখোলা পাড়ায় ঘূর্ণিঝড়ে আটকিয়ে পড়া রাখাইন পরিবারগুলোর জন্য সহযোগিতা চাওয়া হলে তিনি তাৎক্ষণিক গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা নেন। যদিও প্রবল ঝড়ে বিল বোর্ড রাস্তায় পড়ে থাকায় গাড়ি আমখোলা পাড়ায় পৌঁছা সম্ভব হয়নি। আর জেমার মাধ্যমে জানতে পারি জোয়ারের পানি কমতে শুরু করছে। তবে বাতাসের বেগ কমেনি। সারারাত জেগে প্রার্থনা করছি এই “ঘূর্ণিঝড় রেমাল” এর তান্ডব থেকে আমাদের উপকূলবাসী রক্ষা পাক।
**আজ আমি ঢাকায় নিরাপদ সু-উচ্চ দালানকোঠায় অবস্থান করলেও ছোট বেলায় ঘূর্ণিঝড়ে বাবা মায়ের সাথে একসাথে কাটানোর স্মৃতিটা আমার মনকে বড় অশান্ত করে তোলে। ঝড়ে মুরগী যেমন তার শরীরের উষ্ণতা দিয়ে বাচ্চাদের আগলিয়ে রাখে আজকে আমি সেই উষ্ণতার অভাব অনুভব করছি। কল্পনা করি – যদি এমন হতো এই ঝড়ে আমি খেপুপাড়ায়, আমার সাথে আমার মা আছেন বাবা আছেন আবার আমরা একসাথে মিনুদের বাসায় আশ্রয় নিতে যাচ্ছি। এভাবে তিনি তাঁর শৈশবের স্মৃতিচারণ করেন ফেইসবুক সট্যাটাসের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তার (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) আওতায় রাখাইন সম্প্রদায়ের জন্য আমাদের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঘর উপহার দিয়েছেন। সেই কাঠের ঘর গুলো ৮ ফুট উঁচুতে মজবুত সিমেন্ট এর খুঁটি দ্বারা নির্মিত হওয়াতে আমাদের রাখাইন পরিবার গুলো এই জলোচ্ছ্বাসে নিরাপদে নিজ ঘরে অবস্থান করছে। নিউ নিউ খেইন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা কৃষক রত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপকূলীয় এলাকার রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
যেহেতু জলোচ্ছ্বাসে এলাকার সকলের রান্না ঘর ডুবে গিয়েছে বিশেষ করে যারা কাঠের চুলায় রান্না করে তাদের সকলের জন্য খাদ্য ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য কলাপাড়া ইউএনও মহোদয়কে অনুরোধ করেছি।
–নিউ নিউ খেইন,
বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক এবং প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ পটুয়াখালী ও বরগুনা।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply