গোফরান পলাশঃ
পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী’র এক
হতদরিদ্র পরিবারের লক্ষ টাকার গাছ নিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের বিরুদ্ধে নানা মুখরোচক গুঞ্জন শুরু হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। প্রতিকার পাওয়ার আশায়
জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী হারেচ ব্যাপারী ও তার স্ত্রী পলাশী বেগম। প্রতিকার না পেয়ে গনমাধ্যমের কাছে দেয়া তাদের সরল স্বীকারোক্তি ’গরীব বলে কারো কাছ থেকে তো ন্যায় বিচার পেলাম না’।
জানা যায়, রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের গংগীপাড়া গ্রামের মৃতঃ মফেজ উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে হারেচ ব্যাপারী দীর্ঘ ৪৫ বছর যাবৎ গংগীপাড়া গ্রামে মাটির কিল্লায় বসবাস করে আসছেন। কিছুদিন আগে ’মুজিব কিল্লা’ নামে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে হারেচ ব্যাপারীকে তার ঘরবাড়ি ও গাছপালাসহ অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়। হারেচ ব্যাপারী অন্যত্র ঘরবাড়ি তৈরি করার জন্য তিনি তার লাগানো গাছপালাসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে যেতে চাইলে একই গ্রামের প্রভাবশালী মঞ্জুরুল আলম ও তার দলবল এতে বাঁধা প্রদান করে। এরপর হারেচ ব্যাপারী রাঙ্গাবালী থানার ওসি আলী আহম্মদকে বিষয়টি জানান। ওসি বিষয়টি আমলে নিয়ে এসআই নামজুলকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পাঠান। এসআই নাজমুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হারেচ ব্যাপারীকে গাছ গুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন।
এর একদিন পর ওসি হারেচ ব্যাপারীকে ডেকে থানায় নিয়ে বলেন, গাছগুলো তোমাকে দেওয়া যাবে না। গাছ পাবে মঞ্জুরুল আলম। ওসি হারেচ ব্যাপারীকে গাছ কাটার খরচ নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে বারবার থানায় আসতে বলেন।
হারেচ ব্যাপারীর স্ত্রী পলাশী বেগম জানান, ’আমার স্বামীর শেষ সম্বল এই গাছ কয়টি। মঞ্জুরুল আলম পুলিশকে টাকা দিয়ে আমাদের কাছ থেকে গাছগুলো ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। গাছগুলো নিয়ে গেলে আমরা পথে বসে যাব।’
পলাশী বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, ’গরীব বলে কারো কাছ থেকে তো ন্যায় বিচার পেলাম না। আমার স্বামীর তো কোন টাকা পয়সা নেই, তিনি তো দিন মজুর। বিচার পেতে হলে টাকার প্রয়োজন।’
হারেচ ব্যাপারী বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর আগে আমি রাঙ্গাবালীতে আসি। আমার বয়স এখন ৬০ বছর। এখানে এসে আমি মানুষের সাথে দিন মজুর কাজ শুরু করি। এখানেই আমি বিবাহ করি এবং গংগীপাড়া ৫নং ওয়ার্ডে ভোটার হই। এই সরকারি জায়গার জঙ্গল সাফ করে বসবাস করে আসছি। এখানেই গাছপালা লাগিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে আছি।
গংগীপাড়া ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নবীনুর জানান, আসলেই হারেচ ব্যাপারী একজন গরিব মানুষ, দিন মজুর, অসহায়। এ গাছগুলো তারই লাগানো, একমাত্র তিনিই এর দাবিদার।
রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। হারেচ ব্যাপারী অসহায় একজন মানুষ।
রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ জহির আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি থানায় যাওয়ায় আমি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে পারি না।
রাঙ্গাবালী থানার ওসি আলী আহম্মেদ এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে গাছের বিষয়টি এড়িয়ে যান।