আমতলী প্রতিনিধিঃ
বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের নাজমুল হুদার শিশু পুত্র আব্দুল্লাহ আল নোমানকে (৭) একই এলাকার ওসমান মৃধা (৪৫) নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আমতলী থানায় অভিযোগ দেয় শিশুর পরিবার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসমান মৃধা অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটার দিয়েছে শিশুর পরিবারকে। নইলে শিশু নোমানকে তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। মোটর সাইকেল চালক মাদক বিক্রেতা ওসমানের হুমকিতে আতঙ্কিত শিশু ও তার পরিবার। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে।
জানাগেছে, উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের নাজমুল হুদার ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমান, ওসমান মৃধার ছেলে তামিম ও শুভসহ এলাকার ৮-৯ জন শিশু গত শনিবার ফুটবল খেলতেছিল। ওই সময় শিশু শুভ ও নোমানের সাথে তামিমের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় শিশুদের সাথে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষিপ্ত হয় তামিমের বাবা মোটর সাইকেল চালক ও মাদক বিক্রেতা ওসামান মৃধা। ওইদিন সন্ধ্যায় নোমানের বাড়ীতে এসে ওসমান মৃধা শিশু নোমানকে ঘর থেকে নামিয়ে বেধরক মারধর করে। নোমানকে রক্ষায় তার নানী আলিনুর বেগম (৫৫) ও নানা আজাহার মিয়া (৭০) এগিয়ে এলে তাদেরকেও বেধরক মারধর করে। স্বজনরা উদ্ধার করে শিশু নোমান ও নানা আজাহার মিয়াকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ছয় দিন চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার শিশুকে নিয়ে বাড়ীতে আসে। ওইদিনই শিশু নোমানের নানা আজাহার মিয়া বাদী হয়ে আমতলী থানায় ওসমান মৃধাকে প্রধান অভিযুক্ত করে চার জনের নামে অভিযোগ দাখিল করেন। থানার অভিযোগ দেয়ার পরে ক্ষেপে বসে মাদক বিক্রেতাসহ নানা অপরাধের নায়ক ওসমান মৃধা। এ অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য আজাহার মিয়াকে চাপ প্রয়োগ করে ওসমান মৃধা। কিন্তু আজাহার মিয়া অভিযোগ তুলে নিতে নারাজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসামান মৃধা শুক্রবার বিকেলে তাকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে থানা থেকে অভিযোগ তুলে না নিলে শিশু নোমানকে তুলে নিয়ে যাবে বলে অভিযোগ করেন শিশুর নানা আজাহার মিয়া। তার হুমকিতে শিশু নোমানসহ পরিবারের লোক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ওসমান মৃধা মোটর সাইকেল চালানোর আড়ালে মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধে জড়িত। তার বাড়ীতে রাত-বিরাতে অপরিচিত মানুষের আনাগোনা রয়েছে। তার এহেন অপরাধের প্রতিবাদ করলেই তার উপর নেমে আসে নির্যাতন। তার অপরাধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই এলাকার ৫-৬ টি পরিবার তার হামলার শিকার হয়েছেন। তার নির্যাতনে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তার ভগ্নিপতি এই ঘটনার অভিযুক্ত জাকির সিকদারের বিরুদ্ধে আমতলী থানায় মাদকের মামলা রয়েছে। তিনি সম্প্রতি মাদকের মামলায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
পটুয়াখালী জজ কোর্টের আইনজীবি ও ওই গ্রামের বাসিন্দা এ্যাড. পলাশ চৌকিদার, ফিরোজ মৃধা, সোয়েব, হিরন মৃধা, সাইফুল ইসলামসহ একাধিক লোক অভিযোগ করে বলেন, ওসমান এলাকার মাদক নারীসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। তার এহেন অপরাধের প্রতিবাদ করলেই তার উপর নেমে আসে নির্যাতন। তারা আরো বলেন, শিশু নোমানকে ওসমান যেভাবে নির্যাতন করেছে সেটা বরর্বরতাকে হার মানিয়েছে। এ ঘটনার সুস্থ বিচার দাবী করছি।
শিশু নোমানের নানা আহাজার মিয়া বলেন, নাতিসহ মারতো খেয়েছিই এখন মাইরের দাম দিতে হবে। থানায় অভিযোগ করে আমি নাতিসহ পরিবার নিয়ে বিপাকে পরেছি। আমাকে ওসমান ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। থানা থেকে অভিযোগ তুলে না আনলে আমার নাতিকে তুলে নিয়ে যাবে এবং আমাকে মেরে ফেলবে। ওসমানের হুমকিতে আমি আমার নাতি ও পরিবার নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। দ্রুত পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মাদক বিক্রেতা ওসমানের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই।
কান্নাজনিত কন্ঠে শিশু আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, তামিমকে আমি মারধর করেনি। তারপরও তামিমের বাবা আমাকে খালি খালি মারছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
অভিযোগ তুলে নিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম ও শিশু নোমানকে তুলে নেয়ার কথা অস্বীকার করে ওসমান মৃধা বলেন, আমার ছেলে তামিমকে শিশু নোমান মারধর করেছে। আমি এ কথা জিজ্ঞেস করতে গেলে আমার সাথে নোমানের নানা আজাহার মিয়ার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে।
গাজীপুর পুলিশ ফাড়ির এস আই মোঃ ইউসুফ মিয়া বলেন, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে নোমান, শুভ ও তামিমসহ শিশুরা মারামারি করেছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিশু তামিমের বাবা ওসমান মৃধা শিশু নোমানকে তার নানা বাড়ীতে এসে মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন, নাতি নোমানকে রক্ষায় তার নানা আজাহার মৃধা এগিয়ে আসলে ওসমান তাকেও লাি ত করেছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।