আমতলী প্রতিনিধিঃ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসেও বসে নেই আমতলীর গরিবের ডাক্তার মানবতার ফেরিওয়ালা মোঃ আবু জাফর। এই মহামারিকে উপেক্ষা করে জীবনকে বাজি রেখে বিনা পয়সার চলছে তার চিকিৎসা সেবা। করোনা ভাইরাসকে তিনি পাত্তাই দিচ্ছেন না। চিকিৎসা সেবা দিতে ছুটে চলেছেন আমতলীর আনাচে-কানাচে। করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে গত ৮৭ দিনে তিনি বিনা পয়সায় অন্তত এক হাজারেরও বেশী রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন।
নাম আবু জাফর। একজন গরীবের ডাক্তার। সময় পেলেই ছুটে আসেন জন্মভুমি উপজেলা আমতলীর আনাচে-কানাচে। চিকিৎসা দেন বিনা পয়সায়। সাদামাঠা এ মানুষটি রোগীদের কথা শোনেন মনোযোগ সহকারে। আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। বাবা আলহাজ্ব সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু। পটুয়াখালী জুবলি স্কুল থেকে আবু জাফরের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯৯১ সালে ওই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ২০০৩ সালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। এমবিবিএস পাশ করেই শুরু করেন মানবসেবা। প্রথমেই জন্মভুমি আমতলীর মহিষকাটা বাজারে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দেন। এরপরে আমড়াগাছিয়া বাজার ও বর্তমানে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে আমতলী ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার প্রায় ১০ টি স্থানে তিনি বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন। গত ১৭ বছর ধরে চলছে তার বিনা পয়সার চিকিৎসা সেবা। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস দেখা দিলে চিকিৎসক নার্স ও রোগীদের মাঝে চলছে অজানা আতঙ্ক। ঠিক সেই মুহুর্তে করোনা ভাইরাসকে পাত্তা না দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চালিয়ে যান চিকিৎসা সেবা। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরে ছিল ডাক্তারদের ছড়াছড়ি, করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ায় নিমিশেই সেই ডাক্তাররা উধাও। চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে রোগীরা পাচ্ছে না ডাক্তার। সেই ক্লান্তি লগ্নে গরিবের ডাক্তার আবু জাফর মানুষকে সেবা দিতে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণপণ যুদ্ধ। হার না মানা যুদ্ধে তিনিই একজন সফল যোদ্ধা। গত ৮৭ দিনে তিনি বিনা পয়সার অন্তত এক হাজারেরও বেশী রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। যখনই সময় পান তখনই তিনি ছুটে আসেন জন্মভুমি আমতলীতে। প্রতি মাসে তিনি আমতলীর মহিষকাটা, সাহেববাড়ী, আমতলী সদর চেম্বারে বিনা পয়সায় রোগী দেখেন। তিনি আমতলী বাসীর কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা ও গরীবের ডাক্তার নামে পরিচিত। বর্তমানে বরিশাল এ্যাড. হেমায়েত উদ্দিন ডায়াগনিষ্টিক এন্ড জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
আমতলী উপজেলার চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের জলিল গাজী বলেন,সত্যিকার অর্থেই জাফর দক্ষিণা ল মানুষের কাছে একজন গরীবের ডাক্তার। আমতলীতে তিনি বিনা পয়সায় রোগীতো দেখেনই তারপরও বরিশাল এ্যাড.হেমায়েত উদ্দিন ডায়াগনিষ্টিক এন্ড জেনারেল হাসপাতালে আমতলীর কোন রোগী গিয়ে তার পরিচয় দিলেই খরচ অর্ধেকে নেমে আসে। তিনি আরো বলেন, আমার এবং আমার ভগ্নিপতি ফারুকের সড়ক দূর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে গিয়েছিল। ওই হাসপাতালে তার তত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়েছি। অল্প খরচে আমাদের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে।
ডাক্তার আবু জাফর বলেন, করোনা ভাইরাসের মহামারিতে যখন চিকিৎসক ও নার্সরা ভীত সন্ত্রস্ত ঠিক সেই মুহুর্তে জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। গত ৮৭ দিনে বিনা পয়সার অন্তত এক হাজারের বেশী রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। করোনা ভাইরাসে দেশের ক্লান্তি লগ্ন চলছে। এই ক্লান্তি লগ্নে নিজের জীবনের দিকে ফিরে তাকাইনি। ছেলে সন্তান পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন সেবা করে যাব।