আমতলী প্রতিনিধিঃ
আজ আমতলী (১৪ ডিসেম্বর) মুক্ত দিবস। ৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বরগুনার আমতলী থানা হানাদার মুক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী হটিয়ে আমতলী থানা মুক্ত করেন। ওইদিন সকাল ৮টার দিকে আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত জনতা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমতলী থানাকে মুক্তা ল ঘোষনা করেন।
আমতলী মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে র্যালী ও আলোচনা সভা।
জানাগেছে, আমতলী থানাকে পুলিশ ও রাজাকার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর বরগুনার বুকাবুনিয়া ক্যাস্প থেকে নৌকা যোগে হাবিলদার হাতেম আলী, আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে দু’দল মুক্তিবাহিনী পঁচাকোড়ালিয়া হয়ে আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারে আসে। ১২ ডিসেম্বর আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদারের নেতৃত্বে একদল মুক্তি বাহিনী কুকুয়া ইউনিয়নের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পৌছেন। ওইখানে নিজাম উদ্দিন তালুকদার ও কুতুব উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে অস্থায়ী ক্যাস্প করা হয়। অপর দিকে গলাচিপার মুজিব বাহিনীর হারুন-অর-রশিদ ও আবদুর রব মিয়ার নেতৃত্বে একদল মুজিব বাহিনী ওই ক্যাম্পে আসেন। দু’গ্রুপ আমতলী থানা মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহন করেন। এদিকে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সভাপতি এবিএম আসমত আলী আকন ,ন্যাপ নেতা গাজী আমীর হোসেন ও স্কুল শিক্ষক দলিল উদ্দিন মিয়া আমতলী থানা শান্তিপূর্ণ ভাবে মুক্ত করতে মুক্তি বাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেয় । ওই সময় আমতলী থানায় কোন পাক বাহিনী ছিল না। থানায় ছিলেন ওসি রইস উদ্দিন ভূইয়া, কয়েক জন পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী। ১৩ ডিসেম্বর সকালে তারা ওসি রইস উদ্দিন ভূইয়ার সাথে একটি বৈঠক করেন। ওসি শান্তিপূর্ণ ভাবে আমতলী থানা মুক্তি বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিতে রাজি হয়ে ক্যাম্পে তাদের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠায়। এ চিঠি মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্পে সমোঝোতা কমিটি পৌছে দেয়। মুক্তি বাহিনী সন্ধ্যায় থানার পশ্চিম প্রান্তে চাওড়া নদীর একে স্কুল সংলগ্ন স্থানে অবস্থান নেয়। ওদিকে ওসি রইস উদ্দিন ভুইয়ার সমঝোতা চিঠিটি ছিল একটি ষড়যন্ত্র । মুক্তি বাহিনী থানায় আসলে তাদের গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ওসি’র এ পরিকল্পনা মুক্তি বাহিনী জেনে যায়। রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে মুক্তি ও মুজিব বাহিনী যৌথ ভাবে “জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে জবাবে রইস উদ্দিন ও রাজাকার বাহিনী বর্ষার মত গুলি ছোঁড়ে। শুরু হয় যুদ্ধ। রাতভর গুলি বিনিময়ে এক নৌকার মাঝি শহীদ হয় (তার নাম পাওয়া যায়নি)। কাক ডাকা ভোরে গলাচিপার মুজিব বাহিনীর গেরিলা যোদ্ধা হারুন-অর-রশিদ মতান্তরে ফেরদৌস হায়দার নদী পার হয়ে থানার প্রাচীর ঘেঁষে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বিকট শব্দে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়। পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পরে। অপরদিকে মুক্তিকামী জনতা দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে থানার দিকে আসতে থাকে এবং মুক্তিবাহিনী নদী পাড় হয়ে উত্তর প্রাপ্ত থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়। অবস্থার বেগতিক দেখে ওসি রইস উদ্দিন, পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী সাদা পতাকা উত্তোলন করে আতœসমর্পনের আহবান জানায়। ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৮ টায় মুক্তি - মুজিব বাহিনী যৌথ ভাবে এবং জাগ্রতজনতা “ জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে থানার প্রথম ফটকে প্রবেশ করে। এ সময় ওসি রইস উদ্দিন ভূইয়া ও তার বাহিনী অস্ত্র তুলে আতœসমর্পন করে। পরে আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদার ওসি রইস উদ্দিনসহ তার সহোযোগীদের আটক করে। মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত জনতা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমতলী থানাকে মুক্তা ল ঘোষনা করা হয়। আমতলী মুক্ত দিবস (১৪ ডিসেম্বর) পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে র্যালী ও আলোচনা সভা।