বিশেষ প্রতিবেদকঃ
পটুয়াখালীর মহিপুর থানার ওসি মো: মনিরুজ্জামানের দুর্নীত, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের পর তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ বিভাগ সহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তবে স্ব-কর্মস্থলে তাঁকে বহাল রেখে এ তদন্ত যথাযথ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা মহিপুর ওসি’র বে-আইনী কর্মকান্ড নিয়ে সংক্ষুব্ধ মানুষ, যাদের নাম ঠিকানা প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে তারা যাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা বা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে তাদের আর্থিক ও মানসিক নির্যাতনের তথ্য প্রকাশ না করে সেজন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন ওসি মনিরুজ্জামান। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
মহিপুর থানায় ওসি হিসেবে ২মার্চ ২০২০ যোগদানের মাত্র ক’মাসের মধ্যেই ওসি মনিরুজ্জামান সাধারন জনতার কাছে আবির্ভূত হন মূর্তিমান আতংক হিসেবে।
মুজিব বর্ষে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশিত তাঁর বিট পুলিশিং কার্যক্রম ছিল সাধারন মানুষের কাছে আই ওয়াশ মাত্র। যার কোন সুফল পায়নি মানুষ। কেননা
তাঁর কাছে গিয়ে টাকা ছাড়া কোন আইনী সহায়তা পায়নি ভুক্তভোগীরা। এমনকি অভিযোগ, মামলা কিংবা আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়াই তিঁনি নিরপরাধ নারী, পুরুষকে থানার লকআপে আটক রেখে ১০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে ছেড়ে দেন, এরকম এন্তার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকি দাবীকৃত টাকা না পেলে আটকৃকতদের গুরুতর অপরাধের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকী প্রদানের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এনিয়ে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নড়ে চড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। তবে বিষয়টিকে ধামা চাপা দিতে মরিয়া এখন ওসি মনিরুজ্জামান।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে উদ্ধৃত সংক্ষুব্ধকারীদের সাথে নানান কৌশলে এখন তাদের পক্ষে আনার চেষ্টা চলছে। আর্থিক প্রলোভন সহ ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে তাদের। এতে ফের উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে ওসি’র রোষানলে আর্থিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার পরিবার গুলোতে। এমনকি প্রকাশিত প্রতিবেদনে উদ্ধৃতিকারী জনপ্রতিনিধির সাথেও যোগাযোগ করেছেন ওসি।
এদিকে ২০ জুলাই সোমবার সকাল ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ডালবুগঞ্জ গ্রামের প্রতিপক্ষের নির্যাতনের শিকার মাছুমা বেগম’র অভিযোগ, ১৫ হাজার টাকা না দেয়ায় থানায় একাধিক বার গিয়েও আইনী সহায়তা পায়নি সে। একই দিন বিজ্ঞ কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শোভন শাহরিয়ার’র আদালত ওসি মনিরুজ্জামানকে কে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে কারন দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে বলা হয়েছে পুলিশ আইন, ১৮৬১ এর ধারা ২৯ মোতোবেক ওসি’র অপরাধটি শাস্তিযোগ্য। এবং ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ৩ (তিন) মাসের বেতনের অর্থ জরিমানা দন্ড বা সর্বোচ্চ ৩ (তিন) মাস সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয়।
এমত অবস্থায়, ওসি’র বিরুদ্ধে কেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হইবেনা সে মর্মে অত্র আদেশ প্রাপ্তির ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাঁকে কারন দর্শানোর প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হল।
এর আগে ধূলাসার ইউনিয়নের নয়াকাটা গ্রামের ইব্রাহিম (৫০) বলেন, ’আমার মেয়ে রেবা’র ভাশুর, ননদের সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তার ঝগড়া, মারামারি হয়। এনিয়ে ওসি পুলিশ পাঠিয়ে চরচাপলি থেকে আমার মেয়েকে থানায় ধরে আনে। এরপর তাকে কোর্টে না পাঠিয়ে প্রায় দুই রাত একদিন থানা হাজতে আটকে রাখার পর অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাহেবকে সাথে নিয়ে ওসিকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে রোজার ঈদের আগের দিন শনিবার (২৩ মে) রাত দেড়টা দুইটার দিকে তাকে ছাড়িয়ে আনি। এ কথা কাকে বলবো? বললে তো, আমি স্থির থাকতে পারবো না।’
লতাচাপলি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগ সম্পাদক মো: আনছার উদ্দীন মোল্লা বলেন, ’ওসি আমাকে ফোন করে বলেছেন আমি নাকি তাঁকে বাঁশ দিয়েছি।
তিঁনি আমার কোন ক্ষতি করেননি।’ আনছার মোল্লা আরও বলেন,’তাঁকে স্ব-কর্মস্থলে রেখে তদন্ত সঠিক ও নিরপেক্ষ হবে না। এটা হলে তাঁর সামনে
কেউ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে কথা বলবেনা।’
কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী বলেন, ’যে থানার বিরুদ্ধে রিপোর্ট হয় সাধারনত সেটি তদন্ত হয়। তদন্তের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এসপি স্যার নিজে তদন্ত করতে পারেন। সিকিউরিটি সেল থেকে গোপনে তদন্ত করতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত হতে পারে। এটি আসলে কোন মাধ্যমে হবে সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।’ আহম্মেদ আলী আরও বলেন,’ওসি’র বিরুদ্ধে জনৈক রাসেলের একটি অভিযোগের আমি তদন্ত করেছি। রাসেল আমার কাছে লিখিত দিয়েছে সে উক্ত অভিযোগ দেয়নি। আর ওসিকে স্ব-কর্মস্থলে রেখে তদন্ত যথাযথ হবেনা বলে মনে হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আপনারা জানাতে পারেন।’
পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মো: মইনুল হাসান বলেন,’আমরা ওসি’র বিরুদ্ধে আগেও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সেটিও অনুসন্ধান করে দেখছি। এরমধ্যে গনমাধ্যমেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে আমরা সেটিও অনুসন্ধান করে দেখছি। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিঁনি আরও বলেন, ’একজন ক্লাশওয়ান গেজেটেড অফিসারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনটিতে যেসব তথ্য উপস্থাপন হয়েছে তার ভিত্তি নাই। আমাদের কাছে ইন্টিলিজেন্স আছে যে আপনারা (সাংবাদিকরা) তাকে বিভিন্ন সময় ফোন করতেন।
মৎস্য আড়ৎ মালিকরা তাকে ফোন করতো। অনুরোধ গুলো না রাখার জন্য আপনারা তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছেন। আমরা সেটিও খতিয়ে দেখছি। কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়।’
এ বিষয়ে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সাথে একাধিক বার তাঁর সরকারী মুঠো ফোনের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টার পর ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সংযোগ স্থাপন সম্ভব না হওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা
যায়নি।