বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০৫ অপরাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধিঃ
আমতলী উপজেলা গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা এলাকার ৩ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে বন বিভাগের সৃজিত সবুজ বেষ্টুনীর বৃহৎ গাছ প্রকাশ্যে দিবালোকে ও রাতের আঁধারে কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে বনদস্যুরা। স্থানীয়রা বন বিভাগ কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা ফিরোজ কবির ঘটনাস্থলে গিয়ে বন দস্যুদের সাথে আতাত করে অভিযোগকারীদের গালমন্দ করেছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে ধরা ছোয়ার বাহিরে রয়ে যাচ্ছে বনদস্যুরা।
জানাগেছে, ১৯৬৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড গুলিশাখালী ইউনিয়নকে বন্যা জলোচ্ছাস ও পায়রা নদীর ভাঙ্গণ রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ করে। ১৯৮৮ সালে ওই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের দুই পাশে বন বিভাগ সবুজ বেষ্টনীর প্রকল্পের আওতায় বাবল, আকাশমনি, জেলাপীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করে। গত ৩২ বছরে ওই গাছ বৃহৎ গাছে পরিনত হয়েছে। গত পনের দিন ধরে গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা এলাকার তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের সবুজ বেষ্টনীর বৃহৎ গাছ প্রকাশ্যে দিবালোকে এবং রাতের আধারে বনদস্যুরা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমতলী বন বিভাগ কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্টো উপজেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা মোঃ ফিরোজ আলম বন দস্যুদের সাথে আতাত করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে অভিযোগকারীদের হুমকি দিচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে বন দস্যুরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বন কর্মকর্তার যোগসাজসে বনের গাছ কেটে উজার করে দিচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রুহুল আমিন বিশ্বাস, লিটন বিশ্বাস, ফজলু বিশ্বাস, সবুজ বিশ্বাস, আলম মৃধা, সোহেল মল্লিক, রুবেল মল্লিক, সগির, সজল ও আমিন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে গেছে। গত ১৫ দিনে অন্তত অর্ধ শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে তারা। যার অনুমানিক মুল্য অন্তত দশ লক্ষ টাকা বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয়রা আরো জানান, খবর পেয়ে বন কর্মকর্তা ফিরোজ আলম ঘটনাস্থলে আসেন কিন্তু তিনি কোন পদক্ষেপ নেয় নি। উল্টো বন দস্যুদের বিরুদ্ধে কিছু বললে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। স্থানীরা আরো অভিযোগ করেন, বন কর্মকর্তার সহযোগীতায়ই নিধন হচ্ছে এ সবুজ বেষ্টনীর গাছপালা। এদিকে খবর পেয়ে মঙ্গলবার বন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে দায়সারা বাবুল ও আকাশমনি গাছের ডাল পালার ৭৪ সিএফটি কাঠ জব্দ করেছে। কিন্তু মুল গাছের কোন হদিস নেই।
মঙ্গলবার গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙ্গুরকাটা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের দু’পাশের সবুজ বেষ্টনীর পরিপক্ক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে গেছে। গাছের গোড়ালি ও ডালপালা পড়ে আছে। ৩ কিলোমিটারে বাঁধের অন্তত অর্ধ শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে বনদস্যুরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, রুহুল আমিন বিশ্বাস, লিটন বিশ্বাস, ফজলু বিশ্বাস, সবুজ বিশ্বাস, আলম মৃধা, সোহেল মল্লিক, রুবেল মল্লিক, সগির, সজল ও আমিন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের গাছ কেটে নিয়ে গেছে। উপজেলা বন কর্মকর্তা এসে দেখে চলে গেছেন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বন কর্মকর্তা যাওয়ার পরে তারা আবার বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা আরো বলেন, রুহুল আমিন বিশ্বাস ও তার লোকজন এসে তিনটি গাছ কেটে নিয়েছে। যার মুল্য অন্তত এক লক্ষ টাকা। আমিন , ছগির ও সজল পর্যায়ক্রমে চেয়ারম্যানের দোহাই দিয়ে সাতটি গাছ কেটে নিয়েছে।
স্থানীয় মিজানুর রহমান, জাফর খলিফা ও মামুন বলেন, গত ১৫ দিন ধরে বনদস্যুরা প্রকাশ্যে ও রাতে বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের লোকজনকে খবর দিলে তারা এসে দেখে যান কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেন না।
জাহেদা বেগম বলেন, বন বিভাগের লোক এসে টাকা নিয়ে চলে যায়। বন দস্যুরা গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা কিছুই বলছে না।
রুহুল আমিন বিশ্বাস গাছ কেটে নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন গাছ কেটে নেইনি।
আমিন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুরুল ইসলামের নির্দেশে একটি জেলাপি গাছ কেটে এনেছি। ওই গাছ দিয়ে আয়রন ব্রীজের পাটাতন দিয়েছি।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে সৃজিত সবুজ বেষ্টনীর গাছ কাটা অন্যায়। আমি এ গাছ কাটতে কাউকে নির্দেশ দেইনি।
আমতলী উপজেলা বন কর্মকর্তা ফিরোজ কবির টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, গাছ কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাবল ও আকাশমনি গাছের কাটা ৭৪ সিএফটি কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে।
পটুয়াখালী বন বিভাগের ডিএফও মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। খতিয়ে দেখে ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply