ভাতা নয়, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম দেখে যেতে চান রাজ্জা | আপন নিউজ

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
কাউনিয়ায় প্রাণী সম্পদ সেবা ও প্রদর্শনী মেলা কলাপাড়ায় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ও সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন তালতলীর ইউপি চেয়ারম্যানের নগ্ন ও আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল দীর্ঘদিন বিরতি ও তিব্র গরমের পরে কলাপাড়ায় তিন মিনিটের বৃষ্টি তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল; কমিটি বিলুপ্ত কলাপাড়ায় উচ্ছেদ আতঙ্কে ১৩৬ পরিবারের রাতের ঘুম হারাম; শুধু এক খন্ড খাস জমির দাবি আমতলীতে মুজিবনগর দিবস উদযাপন আমার জন্য ষ্টেইজ ও ফুলের দরকার নেই; আমি গণমানুষের নেতা-গণ সংবর্ধনায় সাংসদ টুকু কলাপাড়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে অধ্যাপক ইউসুফ আলী তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল
ভাতা নয়, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম দেখে যেতে চান রাজ্জা

ভাতা নয়, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম দেখে যেতে চান রাজ্জা

  1. মো: নুরুল আমিনঃ যুদ্ধ করেছেন সমরঙ্গনে, গড়ে তুলেছেন মুক্তি বাহিনী, ট্রেনিং নিয়েছেন বিভিন্ন সেক্টরে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের দিন মাথায় লাল ফিতা বেঁধে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে যোগ দিয়েছেন, স্বাধীনতার পরে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে চাকুরীও করেছেন খুলনা মিরারডাঙ্গা সোনালী জুটসমিলে, বঙ্গবন্ধুর আমলে পেয়েছিলেন যৎসামান্য মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আছে মুক্তিযোদ্ধা পুন:বাসন সোসাইটির পরিচয়পত্র। তবুও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম লেখাতে পারেননি হতভাগ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক খান।

সংসারে দারুন অভাব, পৈতৃক ১৫ শতাংশ জমি ছাড়া স্থায়ী কোনো সম্পদ নেই, জুট মিলে চাকুরী থাকলেও ১০ বছর ধরে বেতন ভাতা বন্ধ। ৩ ছেলে ২ মেয়ে ও স্ত্রীসহ পরিবার পরিজন নিয়ে কাটে মানবতর জীবন। দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির আশায়। শুধু আশার বানী ছাড়া আর কিছু ভাগ্যে জোটেনি তাঁর। ভাতা নয়, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নামটি যেন একবার নিজের চোখে দেখে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আকুতি জানিয়েছেন, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার বৌদ্ধপাড়া গ্রামের মৃত সয়নদ্দিন খানের পুত্র আব্দুর রাজ্জাক খান(৬৯)। কলাপাড়া তাঁর বর্তমান ঠিকানা হলেও তাঁর স্থায়ী ঠিকানা দুমকী উপজেলার রাজাখালী গ্রামে।

বেশ কয়েকদিন আগে কলাপাড়া সাংবাদিক ফোরামে বসে তাঁর সাথে পরিচয় হয়। জিন্ন সিন্ন মানুষটির বিধস্থ চেহারায় কেমন যেন একটা কষ্টের ছাপ। খাল মরলেও যেমন রেত মরেনা জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও সারা জীববনের সংগ্রমী চেতনাকেও তেমনি ইচ্ছে করেও লুকাতে পারেনি নিজের চেহার মধ্যে। কী করেন? জানতে চাইলৈ নিজের মুখেই শুনালেন তাঁর অতীত জীবনের এক সংগ্রামী ইতিহাস। ১৯৭০সালে খুলনা এ্যাজাক্স জুটমিল থেকে বদলি শ্রমিক হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন যার টোকেন নম্বর ১৫২৬৮। কোম্পানীর ব্যাচেলর কোয়ার্টার এর ১৮ নং রুমে বসবাস করা অবস্থায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগ এর অঙ্গ সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের কারখানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালিন সময় শ্রমিক শ্রেনী ছিল অত্যন্ত সংগ্রামী ও রাজপথের লড়াকু সৈনিক। আব্দুর রাজ্জাক জানান, তাদের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ কামরুজ্জামন টুকু ও প্রফেসর আবু সুফিয়ান(শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী)। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭১ সালে লাল বাহিনী গঠন করা হলে শেখ কামরুজ্জামন টুকু ও প্রফেসর আবু সুফিয়ান এর নেতৃত্বে সে ফুটবল খেলার মাঠে লাঠি দিয়া ট্রেনিং গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহন করেন। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের দিন মাথায় লাল ফিতা বেঁধে ও গাঁয়ে লাল জামা পরে ট্রাক ও বাঁশ নিয়ে তারা খুলনা থেকে সরাসরি ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে অংশ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। ওই দিনই রাতে ইষ্টিমার(রকেট) যোগে সে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী,র দুমকী উপজেলার রাজাখালী গ্রামে চলে আসেন। তখন গ্রামের লোকেরা অনেক কিছুই জানতো না। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক সারা গ্রাম ঘুরে ঘুরে গ্রামের যুবক ছেলেদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। বয়সে তাঁর মাত্র এক বছরের বড় সম্পকের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন খান সেসময় গ্রামের মধ্যে উদ্ধমি যুবক ছিলেন। তাকে বলায় সে এবং আরও কতিপয় যুবকদের নিয়ে তারা পটুয়াখালী এসে তৎকালিন আওয়ামীলীগ নেতা সরদার আ: রশিদের সাথে দেখা করেন। সরদার আ: রশিদ ও তাঁর ছোট দুই বোন আনু ও মনু এদের সাথে থেকে পটুয়াখালী শহরে অনেক মিছিল মিটিং এ অংশগ্রহণ করেন বেশ কিছু দিন। এরই মধ্যে ২৫ মার্চ রাতে পশ্চিম পাকিস্থানী বাহিনীর হাতে ঢাকায় শত শত নীরিহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করার খবর শুনে দিশেহারা হয়ে পরেন মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকসহ তাঁর সহকর্মিরা। তিনি জানান, এর পর কয়েক দিন এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করে তাঁর চাচা সানু খাঁ, আনসার কমান্ডার, কাজী আবদুল মোতালেবসহ ১৫-১৬ জন যুবক মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেয়ার উদ্দেশ্যে পটুয়াখালীর শ্রীরামপুর গাবতলী বাজার থেকে নৌকা যোগে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। কিন্তু পথি মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বরগুনার বামনা থানাধীন বুকাবুনিয়া গ্রামে ১৪ দিন ট্রেনিং নিয়ে গ্রাম ও ইউনিয়ন রক্ষী বাহিনীতে যোগদান করেন। এলাকায় হিন্দু বাড়ি ঘরের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোনো কোনো সময় উপবাস এবং কোনো কোনো সময় হিন্দু ভাইদের দেয়া সামান্য মিষ্টি আলু সিদ্ধ খেয়ে প্রায় দুই মাস কাটিয়ে ছিলেন তাঁরা। এ সময় সানু খান, শাহ আলম হাওলাদার, সালাম হাওলাদার, জালাল উদ্দিন হাওলাদার, মজিদ খান, রব কেরানী প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর সাথে ছিল বলে তিনি জানান। গ্রাম পাহারার কাজ ভাল না লাগায় আব্দুর রাজ্জাক আবারও ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং খুলনা এ্যাজাক্স জুটমিল এ নিজ কর্মস্থলে এসে কতিপয় সহকর্মীদের সাথে আবারও নৌকা যোগে বিল ডাকাতিয়া পারি দিয়ে কুষ্টিয়া বারাসাত বায়োন ডাঙ্গা বিল পারি দিয়ে লোহাগরা থানায় পৌছেন। এসময় সোহরাব, অহিদ মুরাদ, শাহজাহান, হাতেম, আলতাফগাজী, ঘ্যানা জালাল, সালাম, রাজ্জাক সভাপতি, নুরু চাচা, আফছার ভাই, কুদ্দুছ মেট, রুহুল আমিন, আউয়াল ও রাজা মিয়াসহ নাম না জানা অনেকেই তাঁর সাথে ছিল। বারাকপুর লাকাও হাঠি দিঘলিয়ার আকাম ও মোকাম এদের বাড়ি তাদের ঘাঁটি ছিল। পেরুলিয়া বাজারে বড় খোকা ও ছোট খোকা এদের বাড়িতেও তাদের ঘাঁটি ছিল। আবালগাতি নদীতে সাব মেরিন এর উপর আক্রমনে আমির মাষ্টার, রাজা, সোহরাপ, সালাম, কালা কাওছার এদের সাথে আব্দুর রাজ্জাক খানও অংশগ্রহন করেন। যুদ্ধে রাজা নামের তাদের একজন সহকর্মী মারা যান। যার লাশ পরবর্তীতে আর খুজে পাওয়া যায়নি। কালিয়া ডাঙ্গা গ্রামে ফহম মল্লিক ও আলেপ খাঁ মেম্বর বাড়ি তাদের ঘাঁটি ছিল। চান্দের চর আফজালেল বাড়ি থেকে তখন তাদের খাবার পাঠানো হতো। যুদ্ধ চলাকালিন অবস্থায় তারা মানিকতলা সি এস ডি গোডাউন থেকে জেডিতে নোঙ্গর করা চাল, গম ভর্তি নৌকা রাত্রে কাচি কেটে নিয়া গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। আব্দুর রাজ্জাক খান সিরমনি ট্যাঙ্ক অবরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং রেল লাইনের পাটি খুলিয়া বড় গর্ত করিয়া শত্রুবাহিনীর সাজোয়া যান যাতে গ্রামে ঢুকতে না পারে সেই অবরোধ সৃষ্টি করতেন। যা তৎকালিন সেক্টর কমান্ডার মেজর আ: জলিল, ক্যাপ্টেন মধু ও শেখ কামরুজ্জামান টুকু জানতেন বলে জানান ।
দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে খুলনা সোনালী জুটমিলস এ স্থায়ী চাকুরী হয় আব্দুর রাজ্জাক খানের। যার শ্রম নম্বর ৩২৫৩। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ্যাজেক্স জুটস মিল সোনালী জুটস মিলের চেয়ে অনেক ছোট হওয়ার পরও সেখানে মুক্তি যোদ্ধা অফিস আছে কিন্তু সোনালী জুটস মিল আয়তনে প্রায় তিন গুন বড় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেশি হওয়া স্বত্বেও কোন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ওই অফিসে সংরক্ষন করা হয়নি বা সরকারের কাছে সরবরাহ করা হয়নি।

তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে তাঁর নির্দেশে সকল শ্রমিকদের ৯ মাসের বেতন ও যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তাদের ২ টি ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে উক্ত দুইটি ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পরেও অজ্ঞাত কারনে আমার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নেই। তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করার জন্য সুদীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন মহলে ধর্না দিয়েও নাম উঠাতে পারেননি। উল্লেখ্য দুমকি থেকে অনলাইনে আবেদন ও খুলনা থেকেও কুরিয়ার সার্ভিসে তিনি তালিকায় নাম অন্তর্ভুবÍ করার জন্য আবেদন করেন ।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!