আগুনমুখার তাণ্ডব বাজার ও লঞ্চঘাটে, হুমকিতে ৬ গ্রাম | আপন নিউজ

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
আমতলীতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দশ হাজার টাকা অর্থদন্ড আমতলীতে চাঁদা না দিলে বিধরা নারীকে প্রাণ নাশের হুমকি; সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ কলাপাড়ায় মুরগীসহ পালনের উপকরণ দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে উধাও প্রতারক সংস্থা আমতলী সরকারী কলেজের সামনের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কলাপাড়ায় স্ত্রী কর্তৃক প্রবাসী স্বামীর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ কলাপাড়ায় পূর্ব শত্রুতা বসত ফের ব্যবসায়ীর বাড়িতে চু’রি; ৮ লক্ষ টাকার মালামাল লু’ট কলাপাড়ায় শিক্ষককে মারধর, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও সমাবেশ গলাচিপায় কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির উদ্বোধন কলাপাড়ায় আইপিএম পদ্ধতিতে চিনা বাদাম উৎপাদন শীর্ষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় জমি জমা বিরোধ; এক নারীকে পি’টি’য়ে জ’খ’ম
আগুনমুখার তাণ্ডব বাজার ও লঞ্চঘাটে, হুমকিতে ৬ গ্রাম

আগুনমুখার তাণ্ডব বাজার ও লঞ্চঘাটে, হুমকিতে ৬ গ্রাম

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা: আগুনমুখা নদীর সর্বনাশা তাণ্ডব যেন থামছেই না। প্রমত্তা আগুনমুখা একের পর এক গ্রাস করে নিচ্ছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।

এ বছর আগুনমুখা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে আগুনমুখা নদী পানপট্টি লঞ্চঘাটের একটি অংশ গিলে খেয়েছে। সড়কের একাংশ বিলীন হয়ে গেছে। বহু মানুষ তাদের বসতবাড়ি, দোকানপাট একাধিকবার স্থানান্তর করেছে। কিন্তু এতেও রেহাই মিলছে না।

অন্যতম বড় পানপট্টির মাছের বাজারসহ দুই শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গনের প্রায় দ্বার প্রান্তে রয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে অন্তত ৬টি গ্রাম। পানি উন্নয়ন বোর্ড এক দফা জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙ্গন ঠেকাতে পারছে না। এ মুহুর্তে বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে একাধিক প্রকল্প। অন্যদিকে, নদীপাড়ের মানুষের দিন কাটছে সর্বনাশা ভাঙ্গনের আতঙ্কে। পটুয়াখালী জেলায় যে কয়েকটি নদী অত্যন্ত ভাঙ্গন প্রবণ, তারমধ্যে গলাচিপার দক্ষিণ প্রান্তের আগুনমুখার অবস্থান প্রায় শীর্ষে। গত দুই থেকে তিন দশকে বিশাল আয়তনের পানপট্টি ইউনিয়ন এখন একটি ছোট্ট গ্রামে রূপ নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে হাজারো পরিবার নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। আগুনমুখা নদী সরাসরি বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত। যে কারণে বঙ্গোপসাগরের উথালপাতাল ঢেউ দক্ষিণ দিক থেকে আগুনমুখায় এসে আঘাত হানছে। এতে আগুনমুখা সর্বগ্রাসীতে রূপ নিয়েছে।
আগুনমুখার তীব্র জোয়ার ও ঢেউ পানপট্টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোকে বিলীন করে দিচ্ছে। সরেজমিন খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর আগস্ট মাস থেকে আগুনমুখার কড়াল গ্রাসে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। পানপট্টির আগুনমুখার পাড়ে রয়েছে পটুয়াখালী জেলার অন্যতম বড় মাছের বাজার। সাগর ও আগুনমুখাসহ আশেপাশের কয়েকটি নদ-নদীর জেলেরা এ বাজারে মাছ কেনাবেচা করে। এ বাজার কেন্দ্র করে আশেপাশে দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গত দুই বছরে মাছ বাজারের বেশ বড় অংশ আগুনমুখা গিলে খেয়েছে। বহু ব্যবসায়ী একাধিকবার তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছে।

এ বছর আবারও মাছ বাজারে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। পূর্ব দিকে লঞ্চঘাট যাতায়াতে বাঁধের ওপর আরসিসি সড়কটি ভেঙে আগুনমুখার তীরে এসে পরেছে। বাঁধও ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেকেই তাদের দোকানপাট সরিয়ে নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, পানপট্টি লঞ্চঘাট গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী দুই উপজেলার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ পয়েন্ট। এখান থেকেই লঞ্চ, ট্রলার কিংবা স্পিডবোটে আগুনমুখা পাড়ি দিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলায় যাতায়াত করে মানুষ। রাঙ্গাবালী উপজেলায় যাতায়াতে এর চেয়ে সহজ আর কোন পথ নেই। অনেকে তাদের মোটরসাইকেল নিয়ে এ ঘাট দিয়ে দুই উপজেলায় যাতায়াত করে। চলতি মাসে উঁচু জোয়ারের প্লাবনে পানপট্টি লঞ্চঘাটটিতে যাতায়াতে বাঁধের ওপর সড়কটি বাঁধসহ ভেঙ্গে পড়ায় এখন আর যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। নদী ভাঙনে বহু মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

পানপট্টি লঞ্চঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী জলিল সিকদার জানান, প্রতি বছরই তারা আগুনমুখার ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছেন। এরই মধ্যে তার হোটেলটি ৯ বার সরিয়ে নিতে হয়েছে। বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেলে পাশের তুলারাম গ্রামে তার বাড়িঘর ও ফসলি খেতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে। এ নিয়ে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন।

এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মু. ইলিয়াস মিয়া বলেন, আগুনমুখার উত্তাল ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে পানপট্টি এলাকা। পানপট্টি জেলার অন্যতম মাছের বাজার। ভাঙ্গন ঠেকানো না গেলে বাজারটি বিলীন হয়ে যাবে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পাউবো এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করছি।

পানপট্টি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রানা বলেন, পানপট্টি থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের ৫০০ মিটারই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। খারিদা গ্রাম থেকে তুলাতলী গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁধই এখন আগুনমুখার ঢেউয়ের আঘাত পড়ছে। বাঁধ রক্ষায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। কিন্তু তাতে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।

পাউবোর গলাচিপায় দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিরাজ গাজী জানান, গত দুই বছরে পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকার ৮২০ মিটার বাঁধ ও বাঁধের ওপর সড়ক আগুনমুখায় বিলীন হয়েছে। এরমধ্যে ৩২০ মিটার বাঁধ জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৫০ মিটার কাজ দ্রুত শুরু হচ্ছে।

পাউবোর পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, পানপট্টি আগুনমুখার তীরবর্তী বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্লক বাঁধ দিয়ে প্রতিরক্ষার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!