রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন
রিপোর্ট-মেজবাহউদ্দিন মাননুঃ বেচারা আব্দুর রাজ্জাক ভাগ্যবান বটে! একজন মৃতসহ ছিল তার তিন স্ত্রী। মোসাম্মৎ জাহানারা, মোসাম্মৎ রাশিদা বেগম ও মোসাম্মৎ ফুলনেছা। ফুলনেছা মারা গেছেন তাও প্রায় দুই বছর। অথচ, তিন জনের নামেই তিনটি খাদ্যবান্ধব কার্ড ইস্যু করা রয়েছে। ৪০,৪১,৪২। চালও তোলা হচ্ছে নিয়মিত, বছরের পাঁচটি মাস। উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের বলিপাড়া গ্রামে বাড়ি আব্দুর রাজ্জাকের। একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু বিধি বাম। রবিবার ২৫ এপ্রিল দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে কলাপাড়া খাদ্য অফিসের কাছে ধরা পড়ে এমন অনিয়ম। এছাড়া বিত্তবান শত শত কার্ডের প্রাথমিক হদিস মেলে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান- মেম্বারদের এ তালিকায় বিত্তবান, একই পরিবারের স্ত্রী-স্বামী, বাবা-ছেলে, মা-ছেলে, ভাই-ভাই এসব নাম রয়েছে অসংখ্য। বাড়িতে পাকা ভবন, তার নামেও ১০ টাকা কেজি দরের মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাওয়ার কার্ড; এমনসব অনিয়মে ভরা। রয়েছে মৃত ব্যক্তিরও নাম। এলাকায় থাকেন না এমন ব্যক্তির নামেও কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। সরকারের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘গ্রামে বসবাসরত সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবার, ভূমিহীন, কৃষিশ্রমিক, দিনমজুর, উপার্জনে অক্ষম এসব পরিবারকে এই সুবিধার আওতায় আনার। এর মধ্যে আবার বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, স্বামী পরিত্যক্তা, অস্বচ্ছল বয়স্ক নারীপ্রধান পরিবার দুস্থ পরিবারে শিশু বা প্রতিবন্ধী রয়েছে তারা এই সুবিধায় অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। তবে কোন ক্রমেই একই পরিবারের একাধিক কার্ড কিংবা ভিজিডির সুবিধাপ্রাপ্তরা এই সুবিধা পাবেন না।’ কিন্তু সরকারের এসব নীতিমালা উপেক্ষা করে জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দসই সমর্থক ভোটারসহ আত্মীয়-স্বজনকে এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন। তালিকাপ্রাপ্তরা বছরের মার্চ- এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-নবেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস এই খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। কলাপাড়ায় এই সুবিধার আওতাধারী রয়েছেন ২০ হাজার ১৫৩ জন। এই পাঁচ মাস গ্রামীণ জনপদে উপরোক্ত শ্রেণির দরিদ্র মানুষ বেকার হয়ে থাকেন। তাই বিভিন্ন সুবিধার মতো এই খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। অথচ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, নিজেরা দান-অনুদান দিতে পারেন এমন পরিবারের নামও অন্তভর্‚ক্ত রয়েছে এই তালিকায়। বি ত দরিদ্র, দুস্থ মানুষের দাবি তালিকাগুলো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে টানিয়ে দিলে বের হবে এই তালিকার দুর্নীতির সাতকাহন। তবে এবারও তালিকায় কতোটা স্বচ্ছতা আসবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই গেল। কারণ চাল ছাড়িয়ে বিক্রি করছে, এমন নামও পাওয়া গেছে তালিকায়। উপজেলা খাদ্য বিভাগ চেষ্টা করছে তালিকায় যথাযথ নাম তুলে আনার। যাচাই-বাছাই করে নীতিমালা মেনে তালিকা করতে চেয়ারম্যানদের মঙ্গলবার চিঠি দেয়া হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তালিকা তৈরিতে স্বচ্ছতা ফেরাতে এবং সরকারের নীতিমালা যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার লক্ষ্যে এই চিঠি দিয়েছেন।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply