রিপোর্ট: বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠুঃ
কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের মহিপুর বাজার হতে নজিবপুর- কাটাভারানী বেরিবাঁধ সড়ক দিয়ে ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়নের খাপড়াভাঙ্গা-মনসাতলী এবং পার্শ্ববর্তী ধুলাসার ইউনিয়নের তারিকাটাÑনয়াকাটা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ২৫কি.মি. সড়ক চলাচলের সম্পূর্ন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশায় থাকায় প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘ দিনের এ ভোগান্তি নিরসনে এলাকাবাসী দাবী জানালেও সমস্যার সমাধানে উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমন দাবী ভূক্তোভোগী মানুষের। পাকা সড়ক না থাকায় উপজেলার মহিপুর এবং ধুলাসার ও ডালবুগঞ্জ ৩টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোর কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষাকাল এলে এ দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করে। ভোটের সময় অনেক জনপ্রতিনিধিরা এ এলাকার দুঃখ দুর্দশা লাঘবে সড়ক নির্মানের প্রতিশ্রতি দিলেও কখনোই সেই প্রতিশ্রতি বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসী একটি রাস্তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাছে আবেদন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহিপুর বাজার হতে কাটাভারানি বেরিবাঁধ সড়ক দিয়ে মহিপুর, বিপিনপুর, সেরাজপুর, লতিফপুর, নিজ শিববাড়িয়া, কাটাভারানি ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের কাজিকান্দা, সুরডগি, বরকুতিয়া, খাপড়াভাঙ্গা,মনসাতলী মেহেরপুর ,রসুলপুর,পার্শ্ববর্তী ধুলাসার ইউনিয়নের তারিকাটা ,নয়াকাটা, নয়াকাটা দিওর, বৌলতলী, বৌলতলীপাড়া, মুসলিমপাড়া, বেতকাটা, বেতকাটাপাড়া, খোচাউপাড়া. সোনাপাড়া, পক্ষিয়াপাড়াসহ গ্রামের মানুষ মহিপুর থানা সদরে যাতায়াত করে থাকে। সড়কটির বিভিন্ন অংশে মাটি ক্ষয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। এ সড়কের মহিপুর বাজার হতে প্রায় ২কি.মি. ইট সলিং রাস্তা ছিল। বর্তমানে তার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে কাদামাটিতে একাকার হয়ে সম্পূর্ন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
বন্যা নিয়ন্ত্রন বেরিবাঁধ এ সড়কের অধিকাংশ জায়গায় মাটি ক্ষয়ের ফলে বাধঁ হয়ে পড়েছে অপ্রশস্থ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বেরিবাধের স্লোপে বসবাসকারী মানুষ তাদের প্রয়োজনে বেরিবাঁধ থেকে মাটি কেটে নেয়ার ফলে এ দশায় পরিনত হয়েছে। এছাড়াও বেরিবাঁধ র্নির্মানের পর থেকে কোন সংস্কার কাজ না হওয়ায় চলাচলের উপযোগীতা হারানোসহ ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে এ বেরিবাঁধ সড়কটি। বর্ষা হলে রাস্তাটি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। সপ্তাহের একদিন বৃহসপতিবার একটি প্রাচীন বড়হাট এ হাট বসে মহীপুরে। দূরদূরান্ত থেকে কৃষিপন্য ও মালামাল মাথায় করে এলাকাবাসীকে মহিপুর হাটে গিয়ে বিক্রি করতে হয়।
মোনসাতলী গ্রামের মো.জামাল মৃধা জানান, উপজেলার এ ৩টি ইউনিয়ন একেবারেই অবহেলিত। জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে জনগুরুত্বপূর্ন রাস্তাটি পাকাকরণের কথা বললেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। রাস্তাঘাট না থাকায় এ এলাকায় বর্তমান সরকারের আজো উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ভোট এলে নেতারা বিদ্যুৎ,রাস্তা ও নদীতে সেতু নির্মানের স্বপ্ন দেখান। ভোট চলে গেলে তারা আর তা মনে রাখেন না। এ এলাকায় কোনো মাইক্রো বাস, ট্রাক, নছিমন Ñকরিমন, আটো রিকশা, আটো ভ্যান,পায়ে চালিত ভ্যান চলাচল করতে পারেনা। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধান রাস্তা পাকা না হওয়ায় ধান ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় করতে আসেন না। ফলে তাদের ধান কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে তারা ফসলের ন্যায্যমুল্য থেকে বি ত হন। এ এলাকার সন্তান সম্ভবা মা, মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নিতে পার হতে হয় চড়াই উৎরাই।
স্থানীয় নয়াকাটা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো.নোয়াব আলী হাওলাদার জানান,এলাকার রাস্তাঘাট পাকা ও খাপড়াভাঙ্গা নদীতে ব্রিজ নির্মান না হওয়ায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এ এলাকায়। বিদ্যুৎ ও সড়ক এবং সেতু নির্মিত না হওয়ায় এ এলাকা গুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের ছ্ত্রা মো.ছোবহান বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন সাইকেল ও বই কাঁধে নিয়ে কলেজে যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে কষ্টের কোন শেষ থাকেনা। যদি সরকার এই নয়াকাটা থেকে মহিপুর বাজার পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মান করতেন তাহলে এই লাঘব থেকে রক্ষা পেতাম। ধুলাসার ও ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আ: জলিল আকন ও ছালাম শিকদার জানান, ওই রাস্তাটি খুবই জনগুরুত্বপুর্ন ও মানুষের জনস্বার্থে রাস্তাটি পাকা করা উচিত।
মহিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আ.লীগ সভাপতি আ. মালেক আকন জানান, এসব সড়ক সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ১১৪ পটুযাখালী-৪ আসনের এমপি অধ্যক্ষ মুহিব্বুর রহমান মুহিব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সড়ক নির্মানের জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আ. মন্নান জানান, বেরিবাঁধগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এসব বেরিবাধ উচুকরনের কাজ চলমান রয়েছে।
Leave a Reply