রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন
মেজবাহউদ্দিন মাননুঃ কলাপাড়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ৮৮ কিলোমিটার পাকা সড়কের চরম বেহাল দশা। খানা-খন্দে একাকার হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্মিত বিটুমিনাস কার্পেটিং এ সড়কের অধিকাংশ সিলকোট উঠে গেছে। বর্ষায় পানি জমে একাকার হয়ে যায়। অধিকাংশ সড়কের কার্পেটিংএর অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। বালু কাদামাটি খোয়া বেরিয়ে গেছে। পাকা এ সড়কগুলো এখন যান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপুর্ণ। প্রতিনিয়ত যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে মানুষ। দীর্ঘ দিনে মেরামত না করায় সড়কগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে। তবে গ্রামের মানুষের দাবি ছয় চাকার অবৈধ দৈত্যাকৃতির যান, হামজা কিংবা ট্রলি অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করে চলাচলের কারনে শুধু পাকা সড়ক নয়, আরও শত কিলোমিটার কাঁচা ও কয়েক কিলোমিটার হেরিংবন্ড রাস্তা ভেঙ্গে গেছে।
এলজিইডির তথ্যমতে, তিন মিটার প্রস্থ এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরনে ৮০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ অবৈধ ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যানের (ট্রলি-হামজা) চাকায় (নির্মাণের ৩-৬ মাসেই) পিস্ট হয়ে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সরকারের শত শত কোটি টাকার পাকা সড়ক ছাড়াও আরও ৫০ কোটি টাকার কাঁচা মাটির কিংবা ইটের রাস্তার সর্বনাশ হয়েছে। অবৈধ এ যান রোধে নেই কোন পদক্ষেপ। ফলে সরকারের গ্রামীণ যোগাযোগের উন্নয়ন চিত্র বিবর্ণ হয়ে গেছে। সড়ক ধংসের এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এলজিইডি সুত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় এলজিইডি নির্মিত পাকা-কাঁচা মোট সড়ক রয়েছে এক হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলা সংযোগ সড়ক রয়েছে ১০টি, যার দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক রয়েছে ২৩টি। যার দৈর্ঘ্য ২২৯ কিলোমিটার। গ্রামীণ গুরুত্বপুর্ণ সড়ক (এ টাইপ) রয়েছে ৫১টি। যার দৈর্ঘ্য ২৪২ কিলোমিটার। গ্রামীণ কম গুরুত্বপুর্ণ ( বি-টাইপ) প্রত্যন্ত এলাকার সড়ক রয়েছে ৪৪৫টি। যার দৈর্ঘ ১৩৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে চার শ্রেণির সড়কের মধ্যে বিটুমিনাস কার্পেটিং (পাকা) সড়ক রয়েছে ৩০৪ কিলোমিটার। এক শ’ সাত কিলোমিটার সড়ক রয়েছে এইচবিবি। আরসিসি ও সিসি সড়ক রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার। এছাড়া কাঁচা মাটির সড়ক রয়েছে এক হাজার ৫৫৪ দশমিক ৬১কিলোমিটার। ১২ টি ইউনিয়নের হিসাব এটি।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্য মতে, ১২ ইউনিয়নের অন্তত ৮৮ কিলোমিটার পাকা বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক খুব খারাপ হয়ে গেছে। গেছে যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে। যার মধ্যে টিয়াখালী প্রায় সাত কিমি, চাকামইয়া সাত কিমি, ধানখালীতে আট কিমি, চম্পাপুরে দেড় কিমি, লালুয়ায় ১২ কিমি, বালিয়াতলীতে ১০ কিমি, ধুলাসারে নয় কিমি, মিঠাগঞ্জে নয় কিমি, নীলগঞ্জে ১৫ কিমি, মহিপুরে দুই কিমি, লতাচাপলীতে সাত কিমি এবং ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে দেড় কিলোমিটার পাকা সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর মধ্যে হেরিংবন্ড ছাড়াও কাঁচা আরও এক শ’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা রয়েছে। বর্ষকালে হাটু সমান কাদা হয়ে যায়। লালুয়ার অধিকাংশ সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এসব সড়ক পাকা না মাটির তা পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস। মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। তারা জনস্বার্থে জীর্ণদশার এই সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের দাবি জানান।
কলাপাড়া এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, আট কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে, য শেষ পর্যায়ে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আরও প্রায় ১৫ কিমি সড়ক মেরামতের টেন্ডার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরও জানান, পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো পাকাকরন করার পাশাপাশি মেরামত করা হবে। এছাড়া সড়ক নষ্ট করতে না পারে এজন্য ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যান হামজা কিংবা ট্রলি চলাচল বন্ধে তারা কলাপাড়া এবং মহিপুর থানার ওসি দ্বয়কে অনেক আগেই চিঠি দেয়া হয়েছে। যা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply