রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন
গোফরান পলাশ, কুয়াকাটা থেকে ফিরে:
করোনা ভাইরাস সংক্রমন এড়াতে দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী কুয়াকাটা লকডাউন করে দেয়ায় পর্যটন খাতে বিনিয়োগ কারীরা বিপাকে পড়েছেন। ১৮মার্চ থেকে ৪এপ্রিল টানা ১৮দিনের লকডাউনে কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পে ধ্বস নামার কথা বলছেন পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারীরা।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদকের দাবী লকডাউনে প্রতিদিন তাদের লোকসান হচ্ছে অর্ধকোটি টাকা, ১৮দিনের লক ডাউনে লোকসানের পরিমান হবে অন্তত: ১০ কোটি টাকা। হোটেল-মোটেল গুলোতে অন্তত: ২হাজার
শ্রমিক কাজ করছে, তাদের বেতন সহ আনুষঙ্গিক আরও খরচ আছে কয়েক লক্ষ টাকা।
এছাড়া পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারী ট্যুর অপারেটর সহ আরও ২০০ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছে তাদের প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। লকডাউনের সময় বাড়লে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে। তাই পর্যটন খাতের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় প্রয়োজন দাবী করে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাশা করছেন মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক মোতালেব শরীফ।
এদিকে নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ঝূঁকি এড়াতে পর্যটকদের ভ্রমনে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারনে পর্যটক শুন্য হয়ে গেছে কুয়াকাটা। ১৮ কি.মি. দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমে এখন কোন পর্যটকের পদচারনা নেই। নেই স্থানীয় মানুষেরও কোলাহল। পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারীরা যার যার অবস্থানে লকডাউন হয়ে এখন অলস সময় পার করছেন।
শনিবার সন্ধ্যার পরে মানুষ শুন্য কুয়াকাটা সৈকতে দেখা গেছে এক ভুতুরে পরিবেশ, সৈকতে নামলে যেন গা ছম ছম করে। দীর্ঘ সৈকত জুড়ে এখন বিরাজ করছে নিরবতা। কোথাও নেই পর্যটকের কোলাহল।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮মার্চ (বুধবার) পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কুয়াকাটায় পর্যটকদের বিচরন নিষিদ্ধ করেছে কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আবাসিক হোটেল মোটেল সহ সকল বিনোদন কেন্দ্র গুলো। পর্যটকদের ভ্রমন নিরুৎসাহিত করতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ মাইকিং করছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। একই সঙ্গে সৈকতের অস্থায়ী সকল দোকানপাট সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কুয়াকাটা সমুদ্র উপকূলের জেলেরাও পড়েছে বিপাকে। সমুদ্রে মাছধরা নিষিদ্ধ না থাকলেও ক্রেতা সংকটের কারনে মাছের দাম কমে গেছে। বাজারজাত করতে পারছেন না আড়ৎদাররা। যার কারনে কোন সরকারী নির্দেশনা ছাড়াই অধিকাংশ জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছেন। এতে বেকার হয়ে পড়েছে মৎস্য নির্ভর কয়েক হাজার শ্রমিক ও জেলে। এমনকি খাদ্য সংকটে সমুদ্র উপকূলে চুরি ডাকাতি শুরু হয়ে গেছে বলে মৎস্যজীবিরা জানিয়েছেন।
আবাসিক হোটেল সৈকতের মালিক জিয়াউর রহমান শেখ বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দশনার পর আমাদের হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ হোটেলের কর্মচারীদের ছুটি দেয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ট্যুরিষ্ট গাইড, পর্যটন নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, ট্যুরিষ্টদের উপর নির্ভরশীল নিন্ম আয়ের মানুষ গুলো কর্মহীন হয়ে পড়ায় সংসার চালানো নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিষ্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই আবাসিক হোটেল বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনো পর্যটককে কুয়াকাটায় আবাসিক সুবিধা না দেওয়ার বিষয়েও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে। এমন নির্দেশের বিষয়টি আমরা কুয়াকাটার প্রায় দেড় শতাধিক আবাসিক হোটেলের মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।’
মোতালেব শরীফ আরও বলেন, ১৮মার্চ থেকে ৪এপ্রিল টানা ১৮দিনের লক ডাউনে প্রতিদিন তাদের লোকসান হচ্ছে অর্ধকোটি টাকা, ১৮দিনের লকডাউনে লোকসানের পরিমান হবে অন্তত: ৯-১০ কোটি টাকা। হোটেল-মোটেল গুলোতে অন্তত: ২হাজার শ্রমিক কাজ করছে, তাদের বেতন সহ আনুষঙ্গিক আরও খরচ আছে কয়েক লক্ষ টাকা।
লক ডাউনের সময় বাড়লে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে। পর্যটন খাতের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় প্রয়োজন দাবী করে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাশা করছেন মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক মোতালেব শরীফ।’
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply