মেজবাহউদ্দিন মাননুঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১০টাকা কেজি দরের ফেয়ার প্রাইস কার্ডের অন্তত চার হাজার দরিদ্র ব্যক্তির চাল কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে। ডিলাররা মার্চ মাসের এ পরিমান চাল বিক্রি করে দিয়েছে। কার্ডধারী এসব মানুষ জানেন না তার নামে এ চালের বরাদ্দ রয়েছে। যেন সাধারণ দরিদ্র মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সুবিধার চাল নিয়ে চলছে হরিলুট। বছরের পর বছর এভাবে শত শত টন চাল কালোবাজারে বিক্রি করেছে ডিলাররা। বিতরনের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে হরিলুটের কল্পকাহিনী বের হয়ে আসছে। তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে বিত্তবান, একই পরিবারের একাধিক, এমনকি একটি সামাজিক সুবিধা পাওয়া ব্যক্তির নামও বেরিয়ে আসছে। ফলে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চরমভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে।
কলাপাড়ায় ১২টি ইউনিয়নে এ তালিকার কার্ডধারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ১৫৩ জন। যারা বছরের মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে প্রত্যেককে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু ফি বছরে এ পাঁচ মাসে অন্তত তিন সহ¯্রাধিক কার্ডধারীর প্রায় ৬০ টন চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দেয় ৩২ ডিলার। এর সঙ্গে তদারকি কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বিপদাপন্ন বাঁধ ভাঙ্গা জনপদ লালুয়ায় ফেয়ারপ্রাইস কার্ডের সুবিধাভোগীর নাম রয়েছে ১৫৯৬ পরিবার। নিয়ম রয়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু তালিকা তৈরিতে করা হয়েছে চরম দুর্নীতি আর অনিয়ম। অতিসম্প্রতি জনকন্ঠে রিপোর্ট প্রকাশের পরে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক। প্রকাশ পায় দুর্নীতির সাতকাহন। যেন গল্পের মতো। লালুয়ার পশুরবুনিয়া গ্রামের জেলে সেলিম ফরাজীর তালিকায় নাম থাকলেও তিনি জানেন না। অথচ মাসের পর মাস তার চাল উত্তোলন দেখিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। সেলিম ফরাজিকে কোন কার্ড পর্যন্ত দেয়া হয়নি। ইউপি মেম্বার ইউনুচ ফরাজি জানান, এভাবে তার ওয়ার্ডের অন্তত ৪০ জনের নামে ১০ টাকা কেজির চালের নাম থাকলেও তারা জানেন না। আর কোনদিন চাল তোলেননি। এছাড়া একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায়। একটি সুবিধা পায় এবং এচালের নামের তালিকায়ও তাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে। ছয় নম্বর ওয়ার্ডে যাচাই-বাছাইতে অর্ধশতাধিক নাম বেরিয়ে আসছে। এভাবে লালুয়ার একটি ইউনিয়নে কার্ড দেয়া হয়নি এমন নাম রয়েছে প্রায় কমপক্ষে ৩০০ জন। বছরের পাঁচটি মাস এ চাল উত্তোলন দেখিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। একই দশা মিঠাগঞ্জ, নীলগঞ্জ, চাকামইয়া, টিয়াখালী, ধুলাসার, বালিয়াতলী, চম্পাপুর, ধানখালী, মহিপুর, লতাচাপলীসহ সকল ইউনিয়নের। এক শ্রেণির সরকারি দলের ক্যাডাররা নিজেরা কাগজপত্রে ডিলার সেজে সরকারের মহতি উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য এমন হরিলুটে নেমেছে বলে ত্যাগী আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর অভিযোগ রয়েছে।
ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা রয়েছে ডিলারের দোকানে কার্ডধারীর নামের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হবে। কিন্ত এটি দৃশ্যমান পাওয়া যায়না। আর ডিলাররা অধিকাংশ ব্যবসায়ী নয়। সবচেয়ে বেশি অরাজকতা হয়েছে মার্চ-২০২০ মাসের ফেয়ার প্রাইস কার্ডের চাল বিতরণে। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের মাখন লাল বিশ্বাসের নাম রয়েছে এই তালিকায়। এ দরিদ্র মানুষটি মার্চ মাসের ১০ টাকা কেজির কোন চাল পায়নি। তার কার্ডটি পর্যন্ত নেই। কবে চাল পেয়েছেন তা তার মনেও নেই। একই দশা মিঠাগঞ্জের ৬৫০ নম্বর তালিকার ব্যক্তির। সব কয়টি ইউনিয়নের একই দশা। কলাপাড়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিএম শফিকুল ইসলাম জানান, অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে তালিকা সংশোধন করা হয়।
ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, সকল ডিলার ও তদারকি কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। জড়িতদেও বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply