মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন
বিশেষ আপন নিউজ প্রতিবেদকঃ
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মবিমূখ হয়ে পড়া দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের খাদ্য সহায়তা সঠিক ভাবে বিতরন নিশ্চিতে এবার জেলা সদর থেকে উপজেলা গুলোতে একজন করে পদস্থ সরকারী কর্মকর্তাকে তদারকির দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। যারা জেলা প্রশাসকের কাছে জবাবদিহি করবেন।
এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে উপজেলা সদর থেকে একজন করে সরকারী কর্মকর্তাকে তদারকির দায়িত্ব প্রদান করার জন্য বলা হয়েছে। যারা ইউএনও’র কাছে জবাবদিহি করবেন। এলক্ষে বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চিঠি করে উপজেলা গুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রান ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়। সূত্রটি আরও জানিয়েছে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ দূর্নীতিমুক্ত ভাবে বিতরন নিশ্চিত করার লক্ষে এ উদ্দোগ নেয়া হয়েছে। তবে করোনা বরাদ্দের সরকারী চাল বাজারে বিক্রী করা প্রসংগে দুস্থদের নিত্য পন্য আলু, ডাল, তেল, লবন, সাবান কিনতে বিক্রীর কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এরআগে জেলার উপজেলা গুলোতে ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ উপজেলা গুলোতে চলমান লকডাউনে কর্মবিমূখ হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে প্যাকেজ খাদ্য সহায়তা দিতে বলায় তারা নির্দিষ্ট
ডিলারের কাছে বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক চাল বিক্রী করে আলু, ডাল, তেল, লবন, সাবান ক্রয় করে চালের সাথে সমন্বয় করে বিতরন করেছে। এতে করোনার বরাদ্দকৃত চাল বিতরনে স্বচ্ছতার ব্যত্যয় হয়েছে বলে দাবী মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের। এনিয়ে বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র বলছে দুস্থ মানুষের বরাদ্দকৃত চাল বিক্রী করে সমন্বয় করার কোন সুযোগ নেই। এতে দূর্নীতি ও অনিয়মের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। তবে জেলা ত্রান ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র বলছে দুস্থ পরিবারগুলোর জন্য যে পরিমান নগদ অর্থের বরাদ্দ রয়েছে তা দিয়ে চালের সাথে আলু, ডাল, তেল, লবন ও সাবান দেয়া সম্ভব নয়। তাই বরাদ্দের কিছু চাল বিক্রী করে এটি সমন্বয় করা হচ্ছে। তবে বরাদ্দের চাল আদৌ বিক্রী করার কোন সুযোগ নেই বলছে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্র। নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে চাহিদা অনুযায়ী সরকার সেটি সরবরাহ করবে যাতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মবিমূখ হয়ে পড়া একটি পরিবারও না খেয়ে থাকে। তবে বরাদ্দের চাল থেকে বিক্রী করার কোন বিধান না থাকলেও প্রতিনিয়ত বিক্রী হচ্ছে বরাদ্দকৃত চাল এবং সমন্বয় করার জন্য বিক্রী করা হচ্ছে বলছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র।
এদিকে বুধবার জেলার কলাপাড়া উপজেলা সদরে করোনা বরাদ্দের ২৩ মেট্রিক টন চাল বিক্রী নিয়ে শহর জুড়ে তোলপাড় শুরু হলে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র ওয়ারেন্ট অফিসর হাজির হন সেখানে। এরপর ক্রয়কৃত চালের ডিলার মামুন
হাওলাদারের গুদামে হাজির হয় স্থানীয় প্রশাসন। কলাপাড়ার ইউএনও ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে মামুনের গুদামে চাল যাচাই করে ২৩ মেট্রিক টন চাল দেখা যায় করোনা বরাদ্দের। এসময় উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয় চালের সাথে আলু, ডাল, তেল, লবন ও সাবান দিতে এ পরিমান চাল বিক্রী করে এটি সমন্বয় করা হয়েছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের দাবী ক্রয়কৃত ওই সরকারী চাল বিক্রীর স্বপক্ষে কোন বিধি বিধান, রেজুলেশন কিংবা চাল ক্রয়ের কোন।রশিদ প্রদর্শন করতে পারেনি কোন পক্ষ। এরপর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ডিলার মামুনের গুদামে চাল রেখেই প্রস্থান করেন। তবে সূত্রটির দাবী চাল যাচাইয়ের পূর্বে কিছু সরকারী চাল গুদাম থেকে ট্রলি যোগে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
করোনা বরাদ্দের ক্রয়কৃত চালের ডিলার মো: মামুন হাওলাদার বলেন, ’করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দরিদ্র মানুষের জন্য চালের সাথে আলু, ডাল, তেল, লবন, সাবান সরবরাহের জন্য অর্থের প্রয়োজনে ২৩ মেট্রিক টন চাল আমার কাছে বিক্রী করা হয়েছে।’ তবে কত টাকায় তিনি এ চাল কিনেছেন তা বলতে রাজী হননি মামুন।
ক্রয়কৃত চালের স্বপক্ষে কোন রেজুলেশন কিংবা রশিদ আছে কিনা জানতে চাইলে মামুন বলেন,’পিআইও অফিসে বিক্রী করতে পারার স্বপক্ষে কাগজ পত্র রয়েছে। তাছাড়া ইমার্জেন্সী পরিস্থিতিতে দুস্থ্য মানুষের সহায়তার জন্য রেজুলেশন কিংবা রশিদ ছাড়াই উক্ত পরিমান চাল আমি ক্রয় করেছি।’
জেলা ত্রান ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: মাহবুবুল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মবিমূখ হয়ে উপার্জনহীন হয়ে পড়া জেলার ৮টি উপজেলায় বসবাসরত নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দিতে বরাদ্দকৃত কিছু চাল বিক্রী করার তথ্য জানা গেছে। আসলে বরাদ্দকৃত নগদ অর্থের সাথে চাল বিক্রীর অর্থ যোগ করে আলু, ডাল, তেল, লবন, সাবান কিনে সমন্বয় করে এটি দুস্থ পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাহবুবুল আরও জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় এ পর্যন্ত ৮৬০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে শিশু খাদ্য সহায়তার জন্য রয়েছে ৩লক্ষ টাকা বরাদ্দ। যা উপজেলা গুলোতে বিতরন সম্পন্ন ও কিছু বিতরন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চলমান রয়েছে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভিজিডি, ভিজিএফ ও খাদ্য বান্ধব ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস ও টিসিবি কর্মসূচী।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো: ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, ’করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মবিমূখ হয়ে উপার্জনহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত চাল বিক্রীর কোন সুযোগ নেই। চালের সাথে প্রয়োজনীয় নিত্য পন্য সামগ্রী বরাদ্দকৃত নগদ টাকা দিয়ে ক্রয় করে বিতরন করতে হবে।
বরাদ্দকৃত নগদ অর্থে সংকুলান না হলে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ সরবরাহ করা হবে।’
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply