কলাপাড়ায় মানবতা বিপন্ন দৃষ্টি হারানো এক শিক্ষার্থীর আর্তনাদ! | আপন নিউজ

শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
বাংলাদেশ অটোরিকশা শ্রমিক লীগ কলাপাড়া উপজেলা শাখার কমিটি অনুমোদন; রাহাত সভাপতি কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ০২ নং ওয়ার্ডের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ১ নং ওয়ার্ডের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত আমতলীতে সুবন্ধির বাঁধ লক্ষাধিক মানুষের মরণ ফাঁদ; কাটার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল কলাপাড়ায় ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় দালালদের দাপটে অসহায় রোগী; ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের মালিকদের সতর্ক কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট; এবার পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা দায়ের আমতলীতে যৌ’তু’ক দিতে অস্বীকার করায় স্ত্রীকে পি’টি’য়ে জ’খ’ম আমতলীতে এক বছরের শিশু পানিতে ডু’বে মৃ-ত্যু
কলাপাড়ায় মানবতা বিপন্ন দৃষ্টি হারানো এক শিক্ষার্থীর আর্তনাদ! 

কলাপাড়ায় মানবতা বিপন্ন দৃষ্টি হারানো এক শিক্ষার্থীর আর্তনাদ! 

বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠুঃ
মানবতা বিপন্ন এক অসহায় নারী শিক্ষার্থীর আগামীর সকল প্রত্যাশিত স্বপ্ন আকাঙ্খা ভেঙ্গে চুরমার হবার পথে। দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধকরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুলেও এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে আর্থিক সংকটের কারনে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনী পটুয়াখালীর কলাপাড়া মহিলা কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী। কেনা হয়নি দ্বিতীয় বর্ষের পাঠ্য বই। কলাপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের এ ছাত্রীর ইচ্ছা প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ভেঙ্গে সে একাই লড়বে অশিক্ষার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। বিদ্যুতের আলো না পৌছলেও ভবিষৎ প্রজন্মকে শিক্ষার আলোয় এনে আলোকিত করবে গোটা গ্রাম।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া আবাসন কেন্দ্রে ১৬০টি পরিবারের বসবাস। একযুগেরও বেশি সময় ধরে সহায়-সম্বলহীন এ পরিবারগুলোকে সরকার এখানে পূনর্বাসন করে। প্রথম দিকে সকল আধুনিক সুবিধা এখানে থাকলেও ২০০৭ সালে সিডরের তান্ডবের পর থেকে আবাসন কেন্দ্রর বেহাল দশার চিত্র ফুটে উঠে। শহর কেন্দ্রীক এ আবাসন কেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও এখনও বিদ্যুত সুবিধা পায়নি এখানকার পাঁচ শতাধিক মানুষ। স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখন প্রায় শূণ্যের কোঠায়। কারন সরকারি নির্মিত ১৬টি টয়লেট এখন রোগজীবানু সৃষ্টির কারখানা।
সরকার শিক্ষার মানউন্নয়ন ও স্কুলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহন করলেও নিশানবাড়িয়া আবাসন কেন্দ্রের শূণ্য থেকে ১০ বা এর বেশি বয়সেরস্কুলগামী শিক্ষার্থীরা সকল সুবিধা থেকে বি ত হচ্ছে। এর প্রধান কারন আবাসন কেন্দ্রের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকা। নতুন প্রজন্মের কিছু শিক্ষার্থী পড়া লেখায় আগ্রহী হলেও তাদের যেতে হচ্ছে মাদ্রাসায়। তাও প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। এ কারণে অশিক্ষার অন্ধকারে থাকা এ আবাসন কেন্দ্রের একমাত্র ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী মাধ্যমিকের গন্ডি পেড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলেও অন্য পরিবারগুলোর মতো আর্থিক সংকটে তারও শিক্ষাজীবন থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মাছ বিক্রেতা রানা মুন্সীর তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী। সুস্থ্য ও স্বাভাবিকভাবে তাঁর জন্ম হলেও বাবা-মায়ের অসচেনতায় গ্রাম্য ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় দুই মাস বয়সে বাম চোখের দৃষ্টি হারাতে হয়েছে ফুটফুটে জান্নাতুলকে। দৃষ্টি হারানোর সাথে সাথে সঠিক চিকিৎসার অভাবে চোখটি ক্রমশ ছোট হতে হতে থাকে। বাবা-মায়ের অসচেতনতায় শৈশবে এক চোখের দৃষ্টি হারানো জান্নাতুল দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে এসএসসি পাশ করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়।
কিন্তু যে আবাসনে সবাই অশিক্ষার বেড়াজালে বন্দী, সেখানে শিক্ষার আলো ফোটানো এক জান্নাতুলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। প্রতিদিন প্রায় একা ছয় কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে কলেজে আসলেও বছর শেষে আর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সে। কারন দারিদ্রতা তাকে ঘিরে ধরায় প্রথম বর্ষেই বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া।
জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, ইচ্ছা ছিলো লেখাপড়া শিখে চাকুরী করবে।ছোট দুই ভাই-বোনের সাথে প্রতিবেশীদের ছেলে-মেয়েদেরও লেখাপড়া শেখাবেন। কিন্তু তাদের কীভাবে শেখাবেন, আজতো আমার পড়ালেখাই বন্ধ। টাকার কারনে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারি নি। এরচেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে। এক চোখেই বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখতাম, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে অন্য সবার মতো আমাকেও অশিক্ষার অন্ধকারের কূঁপে ঝাপাতে হলো শুধু আর্থিক কষ্টে।
জান্নাতুলের মা মাসুমা বেগম বলেন,নিজের ভুলের কারনে মেয়ের চোখ হারানোর কষ্টে এখনও তিনি কাঁদেন। সেই ভুল শোধরাতে নিজে সেলাই মেশিন চালিয়ে এতো বছর মেয়েকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার চেষ্টা করলেও আজ সে নিজেও পরাজিত। যেখানে দু’মুঠো ভাত জোগাড় করতে রাত-দিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে, সেখানে কলেজে তিন-চার হাজার টাকার বেতন,পরীক্ষার ফি কীভাবে দিবেন। তাই পরীক্ষায় অংশ নেয়া হয়নি জান্নাতুলের। বই কেনা হয়নি দ্বিতীয় বর্ষের। কারন ওর বাবা মাছ বিক্রি করে  পাঁচ সদস্যের পরিবারের মুখে অন্ন জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে।
জান্নাতুলের প্রতিবেশীরা জানায়, এই গ্রামে (আবাসনে) প্রাথমিকের গন্ডি পেরোলেই বেশিরভাগ মেয়েকে বসতে হয় বিয়ের পিড়িতে। সেখানে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জান্নাতুল কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু টাকার জন্য মেয়েটা পরীক্ষা দিতে পারেনি। ও ছিলো গোটা আবাসনের গর্ব। কিন্তু অশিক্ষা ও আর্থিক দৈণ্যতায় একমাত্র জ্বলতে থাকা শিক্ষা তারাটিও খসে পড়লো এখান থেকে। এখন যদি কেউ ওকে সহযোগীতা করে তাহলেই সম্ভব হবে পরীক্ষায় অংশ নেয়া, নতুন বই কেনা।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান জানান, তাঁর কলেজে টাকার জন্য মেয়েটি(জান্নাতুল) দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি, বিষয়টি দুঃখজনক। তিঁনি সাংবাদিকদের কাছে খবর পাওয়ার পরই পরবর্তী পরীক্ষায় মেয়েটিকে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন। ও যাতে শিক্ষা ভাতা পায় সে ব্যবস্থাও করবেন। তবে এ অসহায় মেয়ের সহযোগীতায় সবার এগিয়ে আসা উচিত।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!