শনিবার, ০৩ Jun ২০২৩, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন
মতামতঃ প্রভাষক মো. আবু ইউসুফঃ
এ মুহুর্তে চিকিৎসার চেয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্তরোধে সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা অনেক ভালো, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক হওয়া ছাড়া কিছুই করার নাই। করোনা সচেতনতার প্রধান হাতিয়ার গৃহবন্দী বা লকডাউন, যদিও এটা অনেক কষ্টকর ব্যাপার। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে, জীবন বাঁচাতে আমাদের সবাইকে লকডাউন মানতে হবে। দেশের এই ভয়াবহ মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কিছুদিন চলতেই হবে। সবাইকে মনে রাখা উচিৎ কাউকে মারার জন্য লকডাউন বা গৃহবন্দী ঘোষণা করা হয়েনি, জীবন একমাত্র আপনার বেঁচে থাকলে আপনি সবার কাছে মূল্যবান। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ মৃত্যুর যন্ত্রণা কেউ বুঝতে পারলে বা উপলব্ধি করলে কোন মানুষ ঘরের বাইরে যাওয়ার সাহস করতো না। এই ভয়াবহ মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে আমাদের সকলকে মহান আল্লাহ্ হেফাজত করুণ।
লকডাউন বা গৃহবন্দী অনেক কষ্টসাধ্য সেটা সবাই বুঝতে পারছি কিন্তু তার চেয়ে কষ্টসাধ্য বিষয় হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হওয়া। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তরা যেভাবে ঘরে-বাইরে হয়রানি এবং কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা বিবেচনায় নিয়ে সকলকে আরেকটু সময় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এত কড়াকড়িভাবে নির্দেশ আরোপ করার পরেও লকডাউন বা গৃহবন্দী কোনো কাজে আসছে না। লকডাউন সত্ত্বেও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে কারণ বাংলাদেশের মানুষ সচেতন নয়। এমনভাবে সবাইকে জানান দেওয়ার পরেও করোনার ভয়াবহতা আমলে নিচ্ছে না। প্রতিদিন যেখানে-সেখানে দেখা যায় জনসমাগম। জনগণ মনে হয় করোনা সম্পর্কে অনুভূতিহীন।
করোনাভাইরাস এর কোন ওষুধ বা চিকিৎসা নেই। তবে এই ভাইরাস প্রতিরোধে আগে থেকেই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যেমন ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া এবং টিস্যু ব্যবহার করা। অবশ্যই মাস্ক পরে থাকা।
হিউম্যান করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ
★হাঁচি বা কাশির পরে হাত ধুয়ে নিন।
★কাশি বা হাঁচির আগে মুখ ঢেকে নিন।
★আপনার যদি মনে হয় যে আপনি সংক্রামিত, তাহলে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলুন।
★রান্না না করা গোশত ও ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
★নিজেকে সারাক্ষণ হাইড্রেট রাখুন।
★লক্ষণগুলো দেখা দেয়া মাত্রই ওষুধ খান এবং পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠতে দেবেন না।
★ধোঁয়াটে এলাকা বা ধূমপান করা এড়িয়ে চলুন।
★যথাযথ বিশ্রাম নিন।
★ভিড় থেকে দূরে থাকুন।
কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাসঃ
এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। কোনো সুস্থ ব্যক্তি যখন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেওয়া হাঁচি বা কাশির সুক্ষ্মকণা শ্বাসপ্রশ্বাস বা হাতের স্পর্শের মাধ্যমে মুখে নেন, তখন তার দেহেও করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
ভাইরাসটির উৎসস্থল চীনের বেশ কিছু হাসপাতাল কোনো ব্যক্তির মাঝে দশ মিনিটের বেশি সময় ধরে হাঁচি দেওয়া বা কাশি দেওয়ার লক্ষ্মণ দেখা দিলে তাকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করে। এছাড়াও, কোনো ব্যক্তি ইতোমধ্যেই আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ছয় ফুটের মধ্যে থাকলে তাকেও উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকির কাতারে ফেলা হয়।
পূর্বলক্ষ্মণ দেখা না দেওয়া ব্যক্তিদের থেকেও ছড়াতে পারেঃ
করোনায় আক্রান্ত অনেকের মাঝে রোগের উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। এসব রোগীর মাধ্যমেও ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করতে পারে। কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা থাকায় এই রোগীদের থেকে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি ঠিক কতটা বেশি তা জানা যায়নি।
সামাজিক বিস্তারঃ
এছাড়াও আক্রান্ত রোগীর লালা, থুথু বা সর্দির ফোটা থেকে কোনো বিদ্যালয়ের বেঞ্চ বা বাসের সিট সংক্রমিত হতে পারে। সেখান থেকে সহজেই তা অন্যদের দেহে ছড়াতে পারে।
সুরক্ষার উপায়-
★নিয়মিত হাত ধোয়াঃ
নিজের দুই হাত মাঝে মধ্যেই পরিষ্কার, স্বচ্ছ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর হাতে সাবান লাগিয়ে হাতের তালু এবং পৃষ্ঠতল ঘষে ফেনা তুলুন। আঙ্গুলগুলোর মাঝেও একইভাবে পরিষ্কার করুন। এরপর আবারও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
★হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢাকতে হবেঃ
এরপর সেই টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে আবারও নিজের হাত পরিষ্কার করুন। হাঁচি বা কাশি আটকাতে কখনোই নিজের হাত বা কনুই ব্যবহার করবেন না।
★মুখে মাস্ক পড়ে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারেঃ
করোনা ভাইরাসের তরল উৎস হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। তবে এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো সম্ভব নয়। এছাড়া, মাস্ক পড়লেও চোখ খোলাই থাকে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ব্যক্তির দেহে চোখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
★লক্ষ্মণ দেখা মাত্রই চিকিৎসা সেবা নিনঃ
আপনার যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনি সম্প্রতি কোথায় ভ্রমণ করেছেন, সেসব কথা তাকে খুলে বলুন।
★পশুবাজার এড়িয়ে চলাঃ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আসলে ফ্ল্যাবিও ভাইরাস, যা দ্রুত সংক্রামিত হয়। চিনের ইউহানের প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা নজরে আসে। তারপর থেকে নতুন নতুন জায়গাতেও ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে চলেছে। মূলত গবাদি পশু থেকে ছড়ায় বলে করোনার ক্ষেত্রে বিপদ অনেক বেশি। পশু-পাখি ও গবাদি পশুর সংস্পর্শে থাকা মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। পশুর লোম, মল থেকেই এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। সরাসরি মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় এই ভাইরাস, মানুষ থেকেও পশুর দেহে ছড়াতে পারে। ভাইরাস আক্রান্ত অঞ্চলে জীবন্ত পশুর বাজার এড়িয়ে চলুন এবং পশুপাখিকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
★কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলুনঃ
আক্রান্ত এলাকা থেকে ফিরে থাকলে ১৪ দিন নিজেকে জনসমাগম থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ রাখুন। এর মানে, এই সময় কর্মস্থল থেকে শুরু করে অন্যান্য জনসমাবেশস্থল এড়িয়ে চলতে হবে।
সবাইকে বলছি লকডাউন মেনে নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচতে দিন। গৃহবন্দী থেকে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচানো আমাদের কর্তব্য।
লেখকঃ হিসাববিজ্ঞান বিভাগ) সরকারি মোজাহারউদ্দিন বিশ্বাস কলেজ, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply