কলাপাড়ায় রোগীর তথ্য ফরম পূরণসহ সব কাজ তাঁকেই করতে হয় | আপন নিউজ

শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:০৩ অপরাহ্ন

প্রধান সংবাদ
কলাপাড়ায় দরিদ্র কৃষকদের লবন সহিষ্ণু ফসলেন বীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ কলাপাড়ায় দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসংস্থানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে জনসংযোগ সংক্রান্ত সেমিনার তালতলীতে এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আ সা মী গ্রে*প্তা*র কলাপাড়ায় প্রতিবন্ধী বোবা কে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করেছে দুর্বৃত্তরা আমতলীর ২৫ হজার শিশু খাবে ভিটামিন “এ” ক্যাপসুল আমতলীতে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা আমতলীতে বিয়েতে বেড়াতে এসে ছিনতাই; গ্রেপ্তার-২; পিকআপ ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ বাউফলে বলৎকারের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রের লা*শ সেপটি ট্যাংক থেকে উ দ্ধা র কলাপাড়ায় জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকলরী’র চাপায় দুই জন গুরু*ত র আ*হ ত তালতলীতে মামলার স্বাক্ষীকে পি টি য়ে জ*খম
কলাপাড়ায় রোগীর তথ্য ফরম পূরণসহ সব কাজ তাঁকেই করতে হয়

কলাপাড়ায় রোগীর তথ্য ফরম পূরণসহ সব কাজ তাঁকেই করতে হয়

বিশেষ প্রতিবেদকঃ 

উপকূলের মানুষজনের কাছে তিনি ‘বিপদের বন্ধু’। কারো দেহে করোনার লক্ষণ আছে এমন খবর পেলে নমুনা সংগ্রহের জন্য তিনি সেখানে ছুটে যান। যার কারণে মানুষজন তাঁকে এখন এভাবেই চেনেন। বিপদের এ বন্ধু হলেন মো. হাফিজুর রহমান।
কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট (ল্যাবরেটরী) পদে তিনি কর্মরত রয়েছেন। ১৯৮৭ সালে তিনি এ পদে যোগদান করেন। মাঝখানে বরগুনার আমতলী এবং বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৬ বছর চাকুরি করেন। ২০১৬ সালে তিনি পূনরায় বদলী হয়ে কলাপাড়া হাসপাতালে ফিরে আসেন।
গত মার্চ মাসে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য কলাপাড়া হাসপাতালে একজন চিকিৎসকসহ ছয়জন মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে এক সপ্তাহ ধরে প্রশিক্ষণ নেন। তাঁদেরকে ঢাকা থেকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। হাফিজুর রহমানও এ সময় প্রশিক্ষণ নেন।
হাফিজুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, কলাপাড়া পৌর শহরের রহমতপুর এলাকা থেকে তিনি নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। ওই দিন প্রশিক্ষণ নেয়া এক সহকর্মীও তাঁর সাথে ছিল। ওই সহকর্মী ভয়ে রোগীর কাছে যায়নি। দুরে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন সাহস নিয়ে তিনি রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই থেকেই তাঁর এ কাজের শুরু, এখনও তিনি নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন।
মো. হাফিজুর রহমান বলেন, হাসপাতালে শ্বাস কষ্ট, হাঁচি-কাশি, সর্দি-জ্বরে অসুস্থ কোনো রোগী আসলে নমুনা সংগ্রহের কাজ করতে হয়। এমনকি উপজেলার প্রত্যন্ত অ লে এ ধরণের লক্ষণ থাকা কোনো রোগীর খবর পেলে সেখানেও ছুটে যাই। নিজেই মোটরসাইকেল ভাড়া করে যাই। রোগীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে রোগীর আত্মীয়স্বজনদের সহায়তায় নমুনা সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করি। এ পর্যন্ত ৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। হতাশার কথা হলো, প্রশিক্ষণ নেয়া কোনো সহকর্মীকে পাশে পাইনা। আমিও করোনায় আক্রান্ত হতে পারি, সবকিছু জেনেও মানবতার টানে কাজটা করছি।
কষ্টের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দু’জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করি। এরপর রোগীর তথ্য ফরম পূরণ করে সেখানকার চিকিৎসা কর্মকর্তার কাছে স্বাক্ষর চাইলে তিনি দিতে অসম্মতি জানায়। এর কারণ ছিল, আমি রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছি। রোগীর তথ্য ফরমটি পূরণ করেছি। তাতে আমার হাতের ছোঁয়া লেগেছে। ওই রোগীর যদি সত্যিই করোনা হয়, আমার কারণে ওই চিকিৎসক আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য সে স্বাক্ষর দিতে চায়নি। শুধু তাই নয়। নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ফিরে আসলে আমার কাছে কেউ আসতে চায়না। সহকর্মীরাও আমাকে এড়িয়ে চলে।
নমুনা সংগ্রহের পর কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন রোগীর সফ্টওয়্যারে ডাটা এন্ট্রি ফরম পূরণ, রোগীর তথ্য ফরম পূরণ তাঁকেই করতে হয়। এমনকি সংগ্রহ করা নমুনা কুল ভ্যাকসিন ক্যারিয়ারে ঢুকিয়ে তা অ্যাম্বুলেন্সেও তাঁকে তুলে দিতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ কাজের জন্য দুটি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলকে একটানা ১৫ দিন হাসপাতালে নিয়োজিত থাকা এবং দায়িত্ব পালন শেষে হোম কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কলাপাড়া হাসপাতালে কাগজে-কলমে দল দুটিই আছে। কিন্তু কাজ করছেন হাফিজুর একাই। তিনি কলাপাড়া হাসপাতাল পক্ষে মাঠ পর্যায়ে গত ২৫ দিন ধরে কাজ করছেন। আরও যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁরা ভয়ে কাজ করেন না। আবার দু-একজন অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে দুরে রয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলা থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুর করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। ৩৩ টি নমুনার ফলাফল পাওয়া গেছে। তা নেগেটিভ এসেছে।
হাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, ‘প্রথম যেদিন সে নমুনা সংগ্রহ করতে যায়, আমাকে বলে যায়নি। বাড়ি ফিরে নিজে পরিচ্ছন্ন হয়ে আমাকে জানায়। তখন ভয় পেয়েছিলাম। এখন সে বাড়িতে আমাদের থেকে আলাদা থাকছে। আমি এবং আমার সন্তানরা তাঁকে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকি। সে মানবসেবা করছে, এটাই আমাদের বড় শান্তি।’
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) চিন্ময় হাওলাদার বলেন, হাফিজুর রহমান যদি এ কাজ না করতো, তাহলে এ উপজেলায় এ কঠিন কাজটি করার জন্য কাউকেই পাওয়া যেতনা। সে নিজের পরিবারকে ফেলে রেখে, নিজের ঝুঁকি রয়েছে তা জেনে একটানা কাজ করছে। তাঁকে এর প্রতিদান কেউই দিতে পারবেনা। এ উপকূলের মানুষজন যেমন তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ, তেমনি আমরাও কৃতজ্ঞ।’

ব্যক্তিগত জীবনে হাফিজুর রহমান দুই পুত্র এবং এক কন্যার জনক। তাঁর কণ্যা নাবিলা মাহজাবিন সবার বড়। সে ঢাকায় গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের বিএসসি শেষ বর্ষের ছাত্রী। পুত্রদের মধ্যে নাফিজ মাহমুদ এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সবার ছোট পুত্র নাবিল মাহমুদ সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর স্ত্রী রেহেনা আক্তার স্কুল শিক্ষক।

লেখক: নেছারউদ্দিন আহমেদ টিপু,

প্রথম আলো, কলাপাড়া প্রতিনিধি।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগঃ
সদর রােড (উকিলপট্টি) কলাপাড়া, পটুয়াখালী।
হটলাইনঃ +৮৮ ০১৭১৯৯৩৫৫০৮
বরিশাল অফিসঃ গনি ভবন, জর্ডন রোড বরিশাল।
হটলাইনঃ +৮৮ ০১৬১১৫৭৪৪১৫
মেইলঃ alomgirsikderkalapara@gmail.com

© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!