আমতলী ডায়াগনিস্টক সেন্টারগুলোর নৈরাজ্য; নিরব স্বাস্থ্য বিভাগ | আপন নিউজ

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

প্রধান সংবাদ
কলাপাড়ায় ১৩ বছরের এক মেয়ের মরদেহ উদ্ধার কাউনিয়ায় প্রাণী সম্পদ সেবা ও প্রদর্শনী মেলা কলাপাড়ায় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ও সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন তালতলীর ইউপি চেয়ারম্যানের নগ্ন ও আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল দীর্ঘদিন বিরতি ও তিব্র গরমের পরে কলাপাড়ায় তিন মিনিটের বৃষ্টি তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল; কমিটি বিলুপ্ত কলাপাড়ায় উচ্ছেদ আতঙ্কে ১৩৬ পরিবারের রাতের ঘুম হারাম; শুধু এক খন্ড খাস জমির দাবি আমতলীতে মুজিবনগর দিবস উদযাপন আমার জন্য ষ্টেইজ ও ফুলের দরকার নেই; আমি গণমানুষের নেতা-গণ সংবর্ধনায় সাংসদ টুকু কলাপাড়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে অধ্যাপক ইউসুফ আলী
আমতলী ডায়াগনিস্টক সেন্টারগুলোর নৈরাজ্য; নিরব স্বাস্থ্য বিভাগ

আমতলী ডায়াগনিস্টক সেন্টারগুলোর নৈরাজ্য; নিরব স্বাস্থ্য বিভাগ

আমতলী প্রতিনিধিঃ
সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লাইসেন্স বিহীন ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে বরগুনার আমতলীতে ডায়াগনিস্টিক সেন্টার। সরকারী মুল্য তালিকা ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মুল্য তালিকায় রয়েছে আকাশ পাতাল ব্যবধান। ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলোতে সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে পাঁচগুন মুল্যে টেস্ট করছে। অদক্ষ ও হাতুড়ে প্যাথলজিষ্ট, টেকনেশিয়ান ও এক্সরে টেকনেশিয়ান দিয়ে চলছে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম। এক্সরে মেশিন স্থাপনে সরকারী নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের নানাবিধ হয়রানীর অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নিরব জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলোর এ নৈরাজ্য রোধের কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। ভুক্তভোগীরা ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের এ নৈরাজ্য বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন। সরকারী নির্দেশনা তারা মানছেন না। নিজেদের গড়া অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশনাই তাদের মুল ভিত্তি।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের পঞ্চাশ থেকে এক’শ গজ দুরত্বে চারি পাশে গড়ে উঠেছে ৭ ডায়াগনিস্টিক সেন্টার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঘিরে রেখেছে ডায়াহনিস্টিক সেন্টারগুলো। এর মধ্যে বেলিভিউ, মেডিনোভা, সময় মেডিকেয়ার হসপিস, তামান্না, আমতলী ডিজিটাল, হাসিনা ডায়াগনিস্টিক সেন্টার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গা-ঘেসে পঞ্চাশ থেকে এক’শ গজ দুরত্বে এবং  আমতলী মাতৃসদন ক্লিনিক দুই কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত। সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে এ ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো গড়ে উঠেছে। এ সকল ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারগুলোর মধ্যে অধিকাংশের সরকারী কোন অনুমোদন নেই। অভিযোগ রয়েছে এ ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলোতে সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে পাঁচগুন মুল্যে টেস্ট করছে। সরকারী কোন নিয়মনীতি তারা মানছেন না। তাদের নিজেদের নিয়মই চলছে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো। অদক্ষ প্যাথলজিষ্ট, টেকনেশিয়ান ও এক্সরে টেকনেশিয়ান দিয়ে চলছে আমতলী ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম। এদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
খোজ নিয়ে যানা গেছে, আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে মুল্যের চেয়ে ছয়গুন বেশী নিচ্ছে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো। প্যাথোলজি পরীক্ষা সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয়গুন বেশী নিচ্ছে ডায়াগনিস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। সরকারী হাসপাতালে এক্সরে মুল্য ৮/১০ ইি  ৫৫ টাকা। ওই এক্সরে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে ৩’শ ৫০ টাকা। ১৪/১৪ ইি  এক্সরের মুল্য ৭০ টাকা। ওই এক্সরে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে নিচ্ছে ৪’শ ৫০ টাকা। এভাবেই ডিজিটাল এক্সরে মেশিন বলে পুরাতন মেশিন দিয়ে এক্সরে করে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে পাঁচগুন টাকা। এছাড়া আমতলী হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে ১৮ টি ধরনের পরীক্ষা করা হয়। ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো প্যাথলজি পরীক্ষায়ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচগুন টাকা বেশী নিচ্ছে। সরকারী হাসপাতালে টিসি, ডিসি, ইএসআর ও হিমোগেøাবিন পরীক্ষার মুল্য এক’শ ৫০ টাকা। ওই পরীক্ষায় ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলোতে নিচ্ছে ৪’শ টাকা। আরএ টেষ্ট সরকারী হাসপাতালে ৬০ টাকা। ওই টেষ্ট ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে ৩’শ ৫০ টাকা। এইচবিএসএজি টেষ্ট সরকারী হাসপাতালে এক’শ ৫০ টাকা। ওই টেষ্ট ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে ৪’শ ৫০ টাকা। সরকারী হাসপাতালে  প্রস্বাব পরীক্ষায় বিটি সিটির মুল্য ৩০ টাকা। ওই পরীক্ষা ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে ৩’শ টাকা। প্রেগনেন্সি টেষ্ট হাসপাতালে ৮০ টাকা। ওই টেষ্ট ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে নিচ্ছে ২’শ ৫০ টাকা। আলট্রা¯েœা গ্রাম প্রকারভেদে ডায়াগনিস্টক সেন্টারে নিচ্ছে ৪’শ ৫০ টাকা থেকে ৭’শ টাকা। যা পাশর্^বর্তী কলাপাড়া উপজেলায় ২’শ টাকা। এভাবেই প্রতি পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত মূল্যেও চেয়ে পাঁচ থেকে ছয়গুন বেশী নিচ্ছে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো। এ মুল্য প্রতিরোধে নেই কোন কার্যকারী ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অবস্থা হলেও তিনি দেখে না দেখার ভান করছেন। বিশ্বাস্থ সুত্রে জানাগেছে, চিকিৎসকরা টেস্টের নামে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো থেকে পার্সেন্টিজ (%) সুবিধা নিচ্ছেন। তাদের সুবিধা নেয়ার কারনেই ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে টেষ্টের মুল্য তালিকায় এমন হেরফের। এছাড়া ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মালিকরা চিকিৎসকদের সুবিধা নেয়ায় নিজেরা ইচ্ছা মাফিক মুল্য বাড়িয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা এ কথা বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডায়াগনিস্টিক সেন্টার কয়েকজন কর্মচারী।  প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের মধ্যেও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের নৈরাজ্য থেমে  নেই। চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের গলাকাটা ব্যবসা।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের শাহ আল হাওলাদার বলেন, বেলিভিউ ডায়াগনিস্টিক সেন্টার থেকে ডান  হাতের একটি আঙ্গুলের এক্সরে ৩’শ ৫০ টাকায় করিয়েছি। কম নেয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তারা নেয়নি।
আমতলী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোঃ ফকু মিয়া বলেন, আমতলী ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলোর নৈরাজ্য দেখার কেউ নেই। টেস্টের নামে রোগীদের কাছ থেকে তারা ইচ্ছা মাফিক টাকা আদায় করছে। তিনি আরো বলেন, হাসিনা ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের একটি প্যাথলিজ টেস্টে আমার কাছ থেকে এক হাজার পঞ্চাশ টাকা নিয়েছে। আমি কম নেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তারা নেয়নি।
আমতলী বেলিভিউ ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান বলেন,  সরকার কোন মুল্য তালিকা আমাদের দেয়নি। আমরা উপজেলা ডায়াগনিস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের মুল্য তালিকা অনুসারে টেস্টের টাকা নিচ্ছি। অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তালিকার বাহিরে বেশী টাকা নিচ্ছি না।
আমতলী উপজেলা ডায়াগনিস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সরকারী অনুমোদন ও নির্দিষ্ট দুরত্বে ডায়াগনিস্টিক সেন্টার স্থাপন করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, সরকারী ভাবে টেস্টের কোন মূল্য তালিকা নেই। সরকারী মুল্য তালিকা দেয়া হলে তা মেনে নিয়ে টেস্টের ফি নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শংকর প্রসাদ অধিকারী ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলোতে  মুল্য তালিকায় গরমিলের কথা স্বীকার করে বলেন, সকল ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো হাসপাতালের খুবই কাছাকাছি। এ সকল ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো সরানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ূন শাহিন খান বলেন, উপজেলা হাসপাতালের কাছাকাছি ডায়াগনিস্টিক সেন্টার স্থাপন করা যাবে না। কেউ যদি করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের মুল্য তালিকার সাথে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মুল্য তালিকার অনেক হেরফের রয়েছে। ডায়াগনিস্টিক সেন্টার মালিকদের সাথে কথা বলে সাধারণ মানুষের  ভোগান্তি লাঘবে মুল্য তালিকা সংশোধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!