শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
রিপোর্টঃ মেজবাহউদ্দিন মাননুঃ
নুর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ৫৫ জন শিক্ষার্থী। অথচ ডিসেম্বর মাসের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩৪ জন। ২১ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। এরা কেউ শ্রমজীবী হিসেবে শিক্ষার পাঠ চুকিয়েছে। কেউ কাজের জন্য ঢাকায় চলে গেছে। প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব আলীর দাবি আবার কেউ কেউ পাশের মাদ্রাসায় চলে গেছে। ডালবুগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ছিল ১২৮ জন। অথচ বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১০৭ জন। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই ২১ জন। লালুয়া এসকেজেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ছিল ৬০ জন। বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪৬ জন। নেই ১৪ জন। এভাবে খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই ২০ জন। চরচাপলী ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নেই ৩০জন। তুলাতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই ১৬ জন। মধুখালী হাই স্কুলে নেই ১০ জন। ফাতেমা হাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই ২২ জন। এভাবে কলাপাড়া উপজেলার ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩১টির তথ্যমতে শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে এক বছরে ঝরে গেল ৩৩১ শিক্ষার্থী। অভিভাবক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভাষ্যমতে গরিব, শ্রমজীবী জীবিকার প্রয়োজনে এসব শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে উপার্জনে নেমেছে। সংসারের যোগান দিচ্ছে। আর ছেলে কিংবা মেয়ে এদের একটি অংশ ঢাকায় গার্মেন্টে কাজের সন্ধানে চলে গেছে। ৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ৩৩২৬ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু ডিসেম্বরের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৯৯৫ জন। এ তথ্য প্রধান শিক্ষকদের নিজেদের দেয়া। কোন কোন শিক্ষক বলেছেন কেউ অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছে। কিন্তু কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। কলাপাড়ার শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণির এই একটি চিত্র বলে দেয় ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক। শতকরা ১০ ভাগ শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণি উত্তীর্ণের আগেই ঝরে যাচ্ছে। খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন বিশ^াস বলেন, আসলে শ্রমজীবী পরিবারের সন্তানেরা জীবিকার প্রয়োজনে সংসারের যোগান দিতে অভিভাবকের সঙ্গে কাজে যোগ দেয়। মাছ ধরে কিংবা কোন যানবাহন চালায় এসব শিশুরা। তিনি প্রথমে এসব সমস্যা চিহ্নিত করে উত্তরণের পথ বের করতে হবে বলে মনে করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান খান জানান, এই অ লে শ্রমজীবী ছাড়াও জেলে পরিবারের দরিদ্র সন্তানেরা আসলেই পরিবারের সহায়তায় কাজে যায়। তারপরও শিক্ষকদের বলা হয়েছে হোম ভিজিট করে ক্লাশে ফেরা কিংবা ঝরে পড়া রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক। ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষকদের নিয়ে সমস্যার উত্তরণ ঘটানো হবে। তবে অভিভাবকরা জানান, স্কুলের অত্যাধুনিক ভবন, ল্যাবসহ বিদ্যুত সুবিধা বাড়ছে। অবকাঠামো ছাড়াও সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও এক শ্রেণির শিক্ষকদের উদাসীনতাও ঝরে পড়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। কতিপয় শিক্ষক ক্লাশে পাঠদান রেখে সরাসরি রাজনীতিসহ ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েও ব্যস্ত থাকছেন।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply