রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
’ঘূর্নিঝড়’ ইয়াসে নির্ঘুম রাত কেটেছে উপকূলের মানুষের; ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা
গোফরান পলাশ, বিশেষ প্রতিবেদকঃ ’ঘূর্নিঝড়’ ইয়াস আতংকে নির্ঘুম রাত কেটেছে উপকূলের কয়েক লক্ষ মানুষের। পাউবো’র ২৩.৫ কি.মি. বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৪৫ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। উপড়ে গেছে অসংখ্য
গাছপালা। অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে ২৬ শ’ ৩২ টি পুকুর ও ৫ শ’ ৯০ টি মাছের ঘের। মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার। কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার পানিবন্দি মানুষের
ঘরে গতকাল থেকে উনুন জ্বলেনি। এরপরও আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা ছিল নগন্য। তবে বুধবার সকাল থেকে উপকূলে চলছে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি, থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত সহ ঝড়ো হাওয়া বইছে।
নদীর পানি বিপদ সীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এত পানিতে তলিয়ে গেছে উপকূলের অর্ধশত চর। জেলার সব ফেরীঘাটের গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুপুর পর্যন্ত ফেরী চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পাউবো কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্র জানান, কলাপাড়ার ৫১৫ কি.মি. বেড়িবাঁধের ২৩.৮০০ কি.মি. সিডর, আইলা ক্ষতিগ্রস্ত। বেড়িবাঁধ নেই ১৪.৩৫০ কি.মি. এলাকার। ঘূর্নিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর, কোমরপুর ৪৭/১ পোল্ডার, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়াতলা এলাকার ৫০ মিটার করে দু’টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, লালুয়া ইউনিয়নের ৪৭/৫ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ এমনিতেই নেই, তারমধ্যে নতুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৮ কি.মি. বাঁধ, ধানখালী ইউনিয়নের ৫৪/এ পোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত, চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, ধূলাসার ইউনিয়নের ৪৭/৪ পোল্ডারের ১০০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত সহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮কি.মি. বেড়িবাঁধ। রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা এবং চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডা, চরমন্ডল ও নয়ারচর সহ ৫.৫ কি.মি. বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে ২৬ শ’ ৩২ টি পুকুর ও ৫ শ’ ৯০ টি মাছের ঘের। এতে মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার। কলাপাড়া মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, কলাপাড়ার ১৬০০ মাছের পুকুর এবং ৬১৬ একর জমিতে চাষকৃত ২৮২টি ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, বনবিভাগের গঙ্গামতি, কুয়াকাটা ও খাঁজুরা বনাঞ্চলের অন্তত: ২০০ গাছ উপড়ে গেছে ইয়াস’র তান্ডবে।
জেলা দুর্যোগ ও ত্রান কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, জেলার কলাপাড়া উপজেলার বাইনবুনিয়া, পশরবুনিয়া, চারিপাড়া, নয়াকাটা, নাওয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, মুন্সীপাড়া, মঞ্জুপাড়া, চান্দুপাড়া, পূর্ব গৈয়াতলা, জালালপুর, সুধিরপুর, কোমরপুর, নিজামপুর, দক্ষিন দেবপুর, খাঁজুরা,
নাইওরীপাড়া, চর ধূলাসার, গঙ্গামতি ও বালিয়াতলি এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া, চরলতা, চরমোন্তাজ, চর আন্ডা, চরমন্ডল ও নয়ারচর গ্রাম
পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে ৪৫ গ্রামের অন্তত: ২০ হাজার মানুষ। এসব এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র সহ নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র গুলো সহ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া মানুষের মাঝে। কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া এলাকার পানিবন্দি মানুষের মাঝে দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া দুর্যোগ ও ত্রান কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী জানান, বুধবার দুপুর ১২টায় বিপদ সীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছে আর মঙ্গলবার যা ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার। তবে পানি আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বুধবার সকাল থেকে দুর্দশাগ্রস্ত এলাকার মানুষের পাশে ত্রান সামগ্রী বিতরন করেছেন স্থানীয় সাংসদ অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান ও জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিএম সরফরাজ। তারা ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন সহ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রান বিতরন
করেছেন।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ঘূর্নিঝড় ’ইয়াস’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল থেকে অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। পায়রা বন্দরে ০৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে। সকাল ৬ টা দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ১২.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply