শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন
মো. বেল্লাল হাওলাদার
সৌদি আরব থেকে এক বয়স্ক লোক হজ করে দেশে আসলেন। ওনাকে এলাকার লোকজন জিজ্ঞেস করলেন মুরুব্বি হজে গিয়ে কি কি দেখে আসলেন.?
বয়স্ক লোক বললেন, সৌদিরা সবকিছু ওনারা ওনাদের মতো কাজকর্ম করে ও কথা বলে। শুধু আজান দেয় আমাদের বাংলায়! এটা শুনে এলাকার লোকজন হেসে বললো আসলে কি তাই.? তখন মুরুব্বিকে তারা বুঝিয়ে বললেন, আজান মূলতঃ আরবি ভাষায় দেয়া হয়। আমরা আজান শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। তাই মনে করি এটা আমাদের বাংলা ভাষায় দিচ্ছে। মুরুব্বি বললেন তাই নাকি। তাহলে তো সৌদিরা ওদের মতই ওরা। কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে মদিনার সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছি মন ভরে।
আমাদের দেশে-ও ঠিক মুরুব্বির ওই বাক্যের মতো। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ও যেমন দেশে দখল লুটপাট অনিয়ম অস্থিরতা ছিল ঠিক ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকার পালানোর পরেও তেমন চলছে। কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। শুধু হাত বদল আর মাঝখানে যে সৌন্দর্য্য তা হল বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব, নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাঁর সুন্দর সুন্দর বক্তব্যে দেশের মানুষকে আপ্লুত ও অভিভূত করেছে। তাঁর সরকার চেষ্টা করছেন সংস্কার করে দেশের অন্যায় দুর্নীতিসহ সকল জঞ্জাল শেষ করে দেশকে শৃঙ্খলাবদ্ধ সুন্দর পরিবেশ, ন্যায়ভিত্তিক, সত্যনিষ্ঠ বাংলাদেশ রূপান্তর করতে। চাচ্ছেন শোষণ-নিপীড়ন ও নির্যাতনমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে। তাদের এই পদক্ষেপে দেশের গণমানুষের মনে অনেক আশা জাগিয়েছিল এবং স্বপ্ন বুনছিলো। কিন্তু সে আশা ও স্বপ্ন দেখতে পাওয়া মানুষগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে কি পেলো.? লক্ষণীয় বিষয় দীর্ঘ এক মাসেও সরকার প্রশাসনযন্ত্রকে সক্রিয় করতে পারেনি। দেশের জননিরাপত্তা বিধান করা যাদের দায়িত্ব, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনী এখনও বিপর্যস্ত। তাদের সক্রিয়ও করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বাহিনী আত্মবিশ্বাসহীন ভীরু-দুর্বল এক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাদের এই দুর্বলতার সুযোগে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ লুটপাট, দখল, মারামারি, ভাঙচুর চালাচ্ছে। রাস্তাঘাটে বের হলে দেখা যায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। ট্রাফিক সিগন্যাল দিলেও মানছে না অধিকাংশ মানুষ। যে যেভাবে পারছে ছুটছে, এতে সৃষ্টি হচ্ছে জ্যামজট। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু জায়গায় ট্রাফিক পুলিশকে দেখা যায় একেবারে নিরব দর্শকের ভূমিকায়। নেই কোনো শৃঙ্খলা ফেরাতে পদক্ষেপ।
আমাদের সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলছে। বিশেষ করে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে বলেই মানুষ স্বাধীন হয়েছে এজন্য একে দ্বিতীয় স্বাধীনতা ভাবছে। আসলে কি তাই.? দেখা যাচ্ছে পূর্বের যে সমস্ত জায়গায় অনিয়ম, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ছিল তা আবার অন্য একটি গোষ্ঠী শুরু করছে। তারমানে কি দাঁড়ালো দেশে.? আওয়ামী লীগ পতনের পর যে জায়গাগুলো খালি হয়েছে সে জায়গাগুলোর শূন্যস্থান পূরণ করে দখল হয়েছে, শুধু মানুষের রূপ পরিবর্তন ঘটেছে মাত্র। দেশের অনিয়ম, চাঁদাবাজি ও দখলের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এতে দেশের অনেক মানুষ হতবাক হয়েছে, নির্বাক হয়েছে। এই ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান এবং রক্তদানের আদর্শের সাথে একেবারেই বেমানান।
সারাদেশে একটি গোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে অন্য আরেকটি গোষ্ঠীর লোকজনদের ওপর হামলা দখলের দৃশ্য দেখে এলাকার খোঁজ খবর জানতে বিএনপির এক ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এলাকার পরিস্থিতি কেমন.? সে আমাকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন বিগত দিনে এই আসন থেকে আমাদের নেতারা এমপি হতে পেরেছিলেন.? আমি বললাম তুমি এই প্রশ্ন কেন করলে.? বিএনপির তো এখন গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি। তোমরা তো এবারের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে। ক’দিন আগে দেখলাম এবিএম মোশারফ হোসেন কলাপাড়ায় আগমন উপলক্ষে হাজার হাজার জনতার উল্লাস-আনন্দধ্বনি, শ্লোগান আর একের পর এক মিছিলে মিছিলে উৎসবে পরিণত হয়েছিল পুরো কলাপাড়ায়। তাতে তো বুঝাই যাচ্ছে বিএনপি এবার এককভাবে ক্ষমতায় আসছে। সে বলল ক্ষমতায় আসলেও এই আসন থেকে এমপি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এখানে যা হচ্ছে তা আমিই সমর্থন করতে পারছিনা। সাধারণ মানুষ বর্তমান চিত্র দেখে বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ছোট ভাইয়ের এই কথা শুনে পরে আমি আরো দু’একজনের কাছে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম কথাগুলো বাস্তব সত্যিই বলছে ছোটভাই। তবে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছেন। অনেকে আবার ছিলেন বাড়ি ছাড়া। কেউ কেউ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে লিয়াজু করেও চলেছেন। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
আরো শুনতে পেলাম মহিপুর প্রেসক্লাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ওখানকার স্থানীয় সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন, ফলপ্রসূ কিছুই হয়নি। এখনও তাদের দখলে। আমি মনে করি একটি ক্লাবের সবাই যে দলীয় থাকে এমনটা নয়, অবশ্যই কিছু থাকে নিরপেক্ষ বা বাস্তব সত্য উপস্থাপন করে থাকে। এরা কোনো দলের বা গোষ্ঠীর নয়। তাহলে তো বস্তুনিষ্ঠ বলতে কিছুই থাকে না দেশে। যে সকল সাংবাদিক অন্যায়, দুর্নীতি ও অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু প্রেসক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অধিকার কোনো দলের হতে পারে না। এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করার সামিল, এটা শুভ লক্ষণ নয়।
এমন চিত্র শুধু কলাপাড়া-মহিপুরে নয় সারাদেশেই চলছে। এরা মনে করছে তারাই এখন ক্ষমতায়। দেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে। তারা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নিপীড়ন-নির্যাতনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, শিল্পকারখানায় আগুন, কখনও কখনও পিটিয়ে মারার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন। বাদ যায়নি মুক্তিযোদ্ধাও। বরগুনার বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতির ছেলে যুবদল নেতা এক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে প্রকাশ্য দিবালোকে গায়ে হাত দিয়ে হেনস্তা করেছে। যা রীতিমতো নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। আমার ব্যক্তিগতভাবে শাওন মোল্লাকে চেনা জানা আছে। তার কারণ আমি বরগুনায় ছিলাম দীর্ঘদিন। তখন বিএনপি ক্ষমতায়, আর বরগুনা সদরের এমপি ছিলেন স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত মরহুম মোঃ দেলোয়ার হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন। তখন আমি দেখছি শাওন ছাত্রদলের ছিলেন, তখন তার বাবা জেলা বিএনপির সভাপতি তখনও খুব বেপরোয়া, উল্টোপাল্টা আচরণ দেখেছি শাওনের। তিনি এখন যুবদলে আছেন, ভবিষ্যতে মূলদলে যাবেন। হয়তো প্রথম সারিতে থেকে জেলার নেতৃত্ব দিবে আর তার দ্বারা এই ঘৃণিত কাজ মানুষ আশা করে না। তাই তার একটু বুদ্ধি-বিবেচনা খাটিয়ে পথ চলা উচিত ছিল।
এভাবে ঢাকাসহ সারাদেশেই তাণ্ডব চলছে। ১৬ সেপ্টেম্বর নগর ভবনে ঈদুল মিলাদুন্নবী (সঃ) দোয়া অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে গিয়েছিলাম সেখানে। দেখলাম আর এক কান্ড! হুজুরের দোয়া চলাকালীন সময় এক লোক হুজুরের কানে কানে বললেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া করতে। হুজুর দোয়া করতে একটু বিলম্ব হয়েছে, কেবল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের জন্য করছেন, এরমধ্যে আবার সেই লোক হুজুরের কানে কানে এসে বললেন দোয়া করছেন না কেন.? পরে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করলেন। মোনাজাত শেষ সবাই যে যার মত যাচ্ছে এরই মধ্যে পেছন থেকে এসে হুজুরকে বিএনপি’র কিছু লোকজন ধরে ফেললেন। কেন জিয়াউর রহমানের জন্য দোয়া করা হলো না। এ কারণে হুজুরকে হেনস্তা করা শুরু করল। কি আজব তাই না!
এতে প্রশ্ন আসতেই পারে দেশ চালাচ্ছে ড. ইউনূস, নাকি বিএনপি, না ছাত্রজনতা! আমাকে আমাদের এলাকার এক সাংবাদিক ফোন করে বলেই ফেলল যে বিএনপি এখন ক্ষমতায় তাই নিউজ দিবো বিএনপির, ধরবেন কিন্তু। আমি বিস্ময় হয়েছি তার কথায়। অথচ তাকে দেখা গেছে গত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ওমুক-তমুক নেতাদের সাথে তাল মিলিয়ে ভাগাভাগি করে খেতে। আর এখন শুরু বিএনপির সাথে। সেদিন দেখলাম তাকে একটা ভিডিওতে কিছু বিএনপির (সম্ভবত স্বেচ্ছাসেবক দলের) নেতাকর্মীদের সাথে হাতে লাঠি নিয়ে একজনকে পেটাচ্ছে। এরা অতিউৎসাহী, সুযোগ সন্ধানী নেতাকর্মী। এদের কারণেই বিএনপির জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে।
আবার একটা গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙছে। ধর্মপ্রচারকদের স্থাপনা গুড়িয়ে দিচ্ছে! এটা কেন.? তারমানে সুযোগে যে যেখানে পারছে সেখানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর করছে। এমনকি গুজব-অপপ্রচার ফেক নিউজেও থেকে নেই। তেমনি সম্প্রতি এক গুজব ও অসত্য নিউজ প্রকাশ পেয়েছে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ফাতিমা তাসনিমকে নিয়ে। তিনি নাকি ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার বোন পরিচয় কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে চাকরি পেয়েছেন। যার কোনো সত্যতা নেই, একটি ফেক নিউজ হিসেবে প্রমাণ মিলেছে। যা স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা দেখা দিয়েছে। ফাতিমা তাসনিমকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভালো করেই চিনি। তাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার, তিনি আমাদের কলাপাড়া উপজেলার সন্তান, দুঃসময়ের রাজপথের অগ্নিকন্যা ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যমনা ও প্রজ্ঞাবান। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের এক সাহসী নারী নেত্রী হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। রাজপথের মিছিলে সম্মুখপানে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমার জানামতে তিনি নম্র ভদ্র, তাঁর সৃজনশীল কথাবার্তা ও মানবিকতার জুড়ি মেলা ভার। পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। অভ্যুত্থানের পরে আমাদের এলাকায় যখন দখল, লুটপাট, ভাঙচুর, ভাগাভাগি আর অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তখন দেখেছি নিরপরাধ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে তাকে। তাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে অসত্য নিউজের মাধ্যমে কলাপাড়া তথা দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয়তা হ্রাস যাতে পায় সেজন্য তাকে হেনস্তা করার জন্য মূলতঃ এই পথ বেছে নিয়েছে। এই সমস্ত ঘটনাবলিতে কিসের ইঙ্গিত বহন করে.? রাজনৈতিক বৈষম্য কি শেষ হয়েছে বলে মনে করেন? বলা বাহুল্য যে দেশের মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। এ অবস্থায় আতঙ্কিত দেশের সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রের কাছে মানুষের সবেচেয়ে বড় চাওয়া হচ্ছে নিরাপত্তা। অন্তর্বর্তী সরকার তা কতটুকু দিতে পেরেছেন তা সময়ের সাথে স্পষ্ট হয়েছে দেশবাসীর কাছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের নামে গণহারে মামলা হচ্ছে, অন্যদিকে জেলে বন্দী থাকা দাগী আসামিদের জামিন দেওয়ার ঘটনায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের বাড়তি আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো-ছাত্ররা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না বলে আন্দোলন করতে গিয়ে শেষমেশ সচিবালয়ে ঢুকে পড়লো। আনসার বাহিনী দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে আন্দোলন করতে গিয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। যা ইতিহাসে এটাই প্রথম মনে হচ্ছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক নিয়োগ ক্ষেত্রে বঞ্চিতদের অভিযোগ যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তারা আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধাভোগী। এই নিয়ে তুমুল হট্টগোল চলছিল সচিবালয়ে। জাতি দেখে আসছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দলবাজি করে যুগে যুগে লুটপাট করেছে ঠিকই; কিন্তু বরাবরই এরা পাড় পাওয়ায় এদের মধ্যে ‘বঞ্চিত’ বা ‘সুবিধাভোগী’ বিশেষণগুলো গেড়ে বসেছে।
জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা, শালীনতা এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে এমন বাক স্বাধীনতা সংবিধানও আমাদেরকে দেয়নি। অবশ্য জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজের হাতে আইন তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁর এই আহ্বান মানছে না বিক্ষুব্ধ আক্রমণকারী চক্র। এর দায় পড়ে বা দোষ হবে অন্তর্বর্তী সরকারের এবং আমাদের সন্তানতুল্য ছেলেমেয়েদের, যাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দুঃশাসনমুক্ত হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে আওয়ামী সরকারের ছায়া থেকে প্রশাসনকে বের করে আনতে গিয়ে বা ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদমুক্ত’ করতে গিয়ে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যাকে খুশি যেখানে খুশি বসানো হচ্ছে। এমনকি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বদলি-পদায়ন হচ্ছে। এমনকি জোর জবর করে পদত্যাগ করানোর দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। এতে অবশ্য আপত্তির কিছু নেই, যোগ্য ও ভালো লোক আসুক নিয়োগ পাক মানদণ্ডের ভিত্তিতে। যাতে এমনটা না হয় বিগত সরকার যেমন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের মতো সবকিছুই করে গেছেন যা এখন সমালোচিত দেশবাসীর কাছে। তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছতার প্রশ্ন না আসে দেশের জনমানুষের মনে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল থাকা দরকার।
লক্ষণীয় বিষয় দিন যত যাচ্ছে সংকট চারদিক থেকে বাড়ছে। সাধারণ মানুষ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, সেগুলো দূর করা অতি জরুরি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বাজার সিন্ডিকেটের কারণে জিনিসপত্রের দাম আরো বেড়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি থাকবে চরমে। এদিকে সারাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। যারফলে লোডশেডিং হচ্ছে ব্যাপকহারে। ভারতের আদানি গ্রুপ বকেয়া পরিশোধের জন্য কড়া বার্তা দিয়েছে। রিজার্ভের পরিমাণ ভালো নয়। বিগত সরকারের ঋণের পরিমাণও অনেক। রাজস্ব আয় স্থবির, বকেয়া পরিশোধ কিভাবে হবে?
আসল কথা হলো, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ একটা কঠিন সংকটকাল পার করছে। এই মুহূর্তে সরকারের রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিত দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা। সব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। অবশ্যই ড. ইউনূসের সরকার সেজন্য দেশবাসীর সহায়তা চাচ্ছেন, তিনি পুরো দেশকে একটা পরিবার করার চেষ্টা করছেন। তাতে যথেষ্ট ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করা যায়নি। কারণ এ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কালচারটা প্রতিষ্ঠিত মুদ্রার নেতিবাচক এপিট-ওপিট। তবে দেশের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেই সৎ, দেশপ্রেমিক এবং নিবেদিত অনেক মানুষ রয়েছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার ভিন্ন আঙ্গিকে সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে জনমানুষের সেবক হিসেবে ইতিহাস গড়তে পারাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ।
লেখক: কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply