মঙ্গলবার, ১৭ Jun ২০২৫, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
মেজবাহউদ্দিন মাননুঃ পায়রা বন্দরের অধিগ্রহণ করা অব্যবহৃত এক হাজার ৪০০ একর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের কাছে লিজ না দেওয়ার খবরে অন্তত তিন হাজার পরিবারে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ফলে শান্ত জনপদ লালুয়া অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকের দাবি পায়রা বন্দরের নিয়মনীতি অনুসরণ করে তারা এক বছরের জন্য এই জমি লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু পায়রা বন্দরের সার্ভেয়ারসহ একটি চক্র বাড়তি মুনাফার লোভে স্থানীয় কৃষক নয় এমন মধ্যস্বত্ত¡ভোগী গোষ্ঠীকে এই জমি লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করেছে। ফলে জীবীকার অবলম্বন চাষাবাদ হারানোর শঙ্কায় এসব কৃষক পরিবারের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন। লিজ প্রক্রিয়ায় থাকা জমির অবস্থান লালুয়া, নয়াকাটা ও চান্দুপাড়া মৌজায়।
কৃষক আনসার উদ্দিন জানান, আমরা ৫০-৬০ বছর ধরে এসব জমিজমা আবাদ করে জীবীকা নির্বাহ করে আসছিলাম। অধিগ্রহনের পর কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বাড়িঘর জমিজমা ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছেন। যেসব জমিতে পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে তা নিয়ে কেউ কোন টু শব্দ করেননি। যে জমি অব্যবহৃত রয়েছে তা যার যার মতো চাষাবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবছর থেকে এই জমি রাজস্ব আয়ের স্বার্থে এক বছরের জন্য লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরপরও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়মনীতি অনুসরণ করে লিজ নেওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কথামতো ৫০ একর জমি লিজ নেওয়ার জন্য তিনি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। পেলে অন্তত ৫০টি পরিবার মিলে চাষাবাদ করতে পারতেন। বিগত বছরের মতো খোরাকি ধান সংগ্রহ করতে পারতেন। তিনি শুনেছেন তাদেরকে জমি দেওয়া হবে না। যাদের জমিজমা নাই ক্ষতিগ্রস্ত নয়, এমন কাউকে জমি লিজ দেওয়া হচ্ছে। এটা তার কোনভাবেই মেনে নেবেন না।
কৃষকরা জানান, অধিগ্রহণের ফলে তারা শতকরা ৯৫ জন কৃষক পরিবার ২০২১ সালের পর থেকে বেকার হয়ে গেছেন। কাজ-কর্ম নাই। তারপরও বন্দরের অব্যহৃত যেটুকু জমি রয়েছে তাতে ধানসহ রবিশস্য আবাদ করে পরিবার পরিজন নিয়ে যতদিন সম্ভব জীবীকার যোগান দিবেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে তারা পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এমন আকুতি করেছেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক কৃষক যথাযথ রাজস্ব পরিশোধ করার শর্ত পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন। সেই অনুসারে তাদের মধ্য থেকে কৃষক প্রতিনিধিরা লিজে অংশ নেন। কিন্তু হঠাৎ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাদ দিয়ে একটি অকৃষকচক্রকে এই ১৪শ’ একর কৃষি জমি লিজ দেওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। তাদের সাফ কথা, যতদিন এ জমি চাষাবাদের জন্য লিজ দেওয়া হবে ততদিন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেটের খাবার মেটানোর জন্য দিতে হবে। নইলে তাদের মরণদশা হবে । জীবীকার যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন তারা।
কৃষক জসিম হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের বাব-দাদার বাড়িঘর, পুকুর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আমরা এখনো তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ জমির টাকা তুলতে পারিনি। ঘরবাড়ি গাছপালার টাকা তুলতে ৭-১২ পারসেন্ট ঘুষ দিতে হয়েছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখন লিজ মানির বিনিময় যতদিন সম্ভব চাষাবাদ করবো, তা যদি না হয় তাইলে আমরা বসে থাকবো না। দেশের উন্ননের জন্য জমি দেওয়া হয়েছে। তারা এখন রাজস্ব আয়ের নামে ব্যবসা করবে। আর যারা জমির মালিক ছিলাম তারা চাষাবাদ করতে পারবে না, তা হবে না।’ তারা চেয়েছিলেন ২৪টি ব্লকের জমি স্থানীয় ২৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের নামে লিজ দেওয়া হবে। এরপর সকল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ভাগাভিগি করে চাষাবাদ করবেন। একই অভিযোগ মকবুল হোসেন, নুর সায়েদ খান, নয়ন মৃধা, আলতাফ হাওলাদার, রেজাউল করিম দফাদার, লিটন তালুকদার, জহির খান, জসিম মোল্লা, নাহিদ মোল্লাসহ শতকরা ৯৫ জনের।
সকলের ভাষ্য, জমিজমা নেওয়ার পর থেকে বেকার হয়ে আছেন। তাই তারা চাষ করে অন্তত যতদিন সম্ভব ফসল ফলাবেন- এমন মানবিক আবেদন করেছেন। বিষয় টি বিবেচনা না করলে পথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই বলে জানান অধিকাংশ কৃষক। এভাবে মহল্লাপাড়া, মেরাউপাড়া, নয়াপাড়া, নয়াকাটা, চৌধুরীপাড়া, ছোট পাঁচ নং, বড় পাঁচ নং, মুন্সীপাড়া, নাওয়াপাড়া, হাচনাপাড়া, কলাউপাড়া, মঞ্জুপাড়া, চরচান্দুপাড়াও ধঞ্জুপাড়া গ্রামের অন্তত তিন হাজার কৃষক পরিবারে জমি চাষাবাদ না করতে পারার শঙ্কায় তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছেন।
উল্লেখ্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের অধিগ্রহণ করা অব্যবহৃত ১৪ শ’ একর কৃষি জমি এক বছরের জন্য রাজস্ব আয়ের স্বার্থে এ বছর থেকে লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। লালুয়ার তিনটি মৌজার এ জমিকে ২৪ টি ব্লকের মাধ্যমে লিজ দেওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা লিজ মানির বিনিময় এ জমি চাষাবাদের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সদস্যরা তাদের জমি চাষাবাদ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য নৌ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ ব্যাপারে পায়রা বন্দরের সহকারী পরিচালক (স্টেট) মো. ইউসুফ জানান, ২৪ টি ব্লকের এক হাজার ৪০০ একর কৃষি জমি লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে মোট ১২০টি আবেদন জমা পড়েছে। শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে বন্দরের মাননীয় চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশনায় লটারির মাধ্যমে যথাযথভাবে এই লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রত্যকটি ব্লকে একাধিক আবেদন পড়ায় লটারি করা হয়েছে। এখানে কোন রাখঢাক নেই।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply