রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
এইচ,এম,হুমায়ুনকবিরঃ
পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে পর্যটকদের ভ্রমনে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারনে পর্যটক শুন্য এমন দৃশ্য কুয়াকাটার সৈকতে। বিশ্বব্যাপী এখন আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এর ফলে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকত এখন পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সৈকতের বেলাভূমে দুই চারজন স্থানীয় মানুষ ছাড়া কোন পর্যটকের পদচারনা নেই। সাগরের মৃদু ঢেউ শো শো শব্দে কিনারে আছড়ে পড়ছে। বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি দোলনার মতো যখন দুলে দুলে তীরে আসতে থাকে তখন পূর্ব আকাশে সূর্যে হালকা রক্তিম বৃওটা ক্রমেই স্পষ্ট হতে থাকে। তখন প্রথম সূর্যোদয়ের আলোতে আলোতিক হয়ে পাল্টে যায় কুয়াকাটার সমুদ্রের নীলাভ জল বর্ন। লাল বর্ণ সূর্যটা অল্পক্ষণের মধ্যেই পূর্ণ বৃত্তে রূপ নেয়। এই নতুন সূর্য পুব আকাশে নিয়ে আসে এক অপরূপ শোভা। আকাশের ক্যানভাসে সদ্য ওঠা সূর্য, নিচে সমুদ্রের নীল জল, সুদীর্ঘ বেলাভূমি আর পাশে ঘন সবুজ ঝাউবনের সমন্বয়ে কুয়াকাটা সৈকত ফিরে পায় অপরূপ সৌন্দর্য। কারণ বীচে নেই কোন কোলাহল। নেই ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালকদের যাতনা। যতদুর চোখ যায় ততদুর শুধু প্রকৃতির এই লীলাভূমির দেখা মিলছে। পর্যটক না থাকায় বন্ধ রয়েছে দোকানপাট রয়েছে আবাসিক হোটেল-মোটেল খাবার রেষ্টুরেন্টগুলো গুলো। একই স্পটে দাড়িয়ে সুর্যোদয়-সুর্যাস্তের মতো বিরল প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকনের সৈকত কুয়াকাটার দৃশ্য এটি।
সন্ধ্যার পরে মানুষ শুন্য কুয়াকাটায় রাস্তাঘাটে নামলে গা ছম ছম করে। মরণব্যাধি, ঘাতক করোনা প্রতিরোধে সরকারের সর্বোচ্চ সতর্কতার কারণে কুয়াকাটার এমন দৃশ্য বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামায় পর্যটন নির্ভর হাজার হাজার ব্যসায়ীসহ সাধারণ মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে এখন বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা। পর্যটন স্পট গুলোও রয়েছে ফাঁকা। কোথাও নেই পর্যটকের কোলাহল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৮মার্চ) পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কুয়াকাটায় সৈকতে পর্যটদের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ। করোনা ভাইরাস থেকে সাবধান থাকার জন্য আগত পর্যটকদের স্ব স্ব বাড়ি ফিরে যাওয়াার জন্য মাইকিং করে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। একই সঙ্গে সৈকতের সকল দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই পর্যটক শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। পর্যটকদের ভ্রমনে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় হোটেল-মোটেলসহ খাবার রেষ্টুরেন্টগুলো বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে চীনের উহান শহর থেকে মরণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে দেড় শতাধিক দেশে। প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। করোনা ভাইরাস জনিত কারনে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৩ জনরে মৃত্যু হয়েছে।
কুয়াকাটা সী ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস‘র পরিচালক জনি আলমগীর জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে সৈকতে মাইকিং করার পর সকল ট্যুরিজাম অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া এখন কুয়াকাটায় কোন পর্যটক নেই। তাদের ভ্রমন তরীগুলো ঘাটে বাঁধা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সমুদ্র বাড়ি রিসোর্ট’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, উপজেল প্রশাসনের নির্দশনার পর আমাদের হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হোটেলের কর্মচারীদের ছুটি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনসহ পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশ পেয়েছি। জেলা প্রশাসন বলেছে, হোটেল-মোটেল থেকে দ্রুত পর্যটকদের চলে যেতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনো পর্যটককে কুয়াকাটায় আবাসিক সুবিধা না দেওয়ার বিষয়েও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে। এমন নির্দেশের বিষয়টি আমরা কুয়াকাটার শতাধিক আবাসিক হোটেলের মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।’
কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি জহিরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী মাইকিং করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকায় এই উদ্যোগ নিয়েছে কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ। এছাড়া হোটেল মোটেল গুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হোটেলে কক্ষ বুকিং না রাখার অনুরোধ করা হয়েছে হোটেল মালিকদের।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মুনিবুর রহমান জানায়, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার সতর্ক অবস্থা জারি করেছে। তার অংশ হিসেবে সকল ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুয়াকাটায় সমগ্র দেশের মানুষের সমাগম হয়, সে কারনে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের গন্তব্যে যেতে বাধ্য করছে বলে তিনি জানান।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply