রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
নুরুল আমিন, বার্তা সম্পাদক, আপন নিউজ।। অবশেষে সম্ভাবনা-ই সত্যি হল। ঈদুল আযহার শেষ দিনে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজারো পর্যটকদের ঢল নেমেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরী বিহীন ঝামেলা মুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থার কারনেই কুয়াকাটায় এই বিপুল সংক্ষক পর্যটক সমাগম হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারনা। তারা জানান, কুয়াকাটায় পর্যটক আগমনের দিক দিয়ে ইতিপূর্বে অনসিজন ও অফ সিজন নামে দুটি মৌসুম চালু ছিল। মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই ৫ মাস ছিল কুয়াকাটা পর্যটক আগমনের মৌসুম। অপর দিকে এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এখানে তেমন পর্যটক সমাগম হত না। ফলে ওই সময় অধিকাংশ হোটেল মোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিরুপায় হয়ে মালিকদের বন্ধ রাখতে হত। যা ছিল কুয়াকাটা বিশ্বমানের পর্যটন শিল্প বিকাশের অন্যতম অন্তরায়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারনে সেই প্রতিবন্ধকতা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। বৃষ্টি-বর্ষা উপেক্ষা করে ভর আষাঢ়েও নেমেছে পর্যটবদের ঢল। কুয়াকাটা সৈকত ম্যানেজমেন্ট কমিটির দেয়া তথ্যমতে এবার কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে কুয়াকাটায় বিপুল পরিমান পর্যটক সমাগম হয়েছে। যা ইতি পূর্বে জুন জুলাই মাসে আর কখনও হয় নাই। এখানে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত, রাখাইনদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা স্থাপত্য নিদর্শন, দৃষ্টি নন্দন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, সমুদ্র নির্ভর জেলেদের ব্যতিক্রমধর্মী জীবন জীবিকা সর্বোপরি প্রকৃতির অপরুপ লীলা নিকেতন খুব সহযেই দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। তাই পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো ঈদের লম্বা ছুটি উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন। ফেরি বিহীন কুয়াকাটা ভ্রমণে এবারের ঈদে পর্যটকের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। এ কারণে কুয়াকাটার একাধিক পর্যটন স্পট পর্যটকদের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে শতভাগ হোটেল মোটেলের কক্ষ আগামী ১৫ই জুলাই পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে, বুকিং করা পর্যটক ইতিমধ্যে আসতে শুরু করছে বলে হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি সাগর সৈকতে ছাতার নিচে বসে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ অবলোকনের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না ভ্রমণ পিপাসুরা। পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমণের সকল রেকর্ড এবার ছাড়িয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে। খুশির ছোঁয়া দেখা গেছে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে, ইতিমধ্যেই পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনোমুগ্ধকর ১৮ কিলোমিটার বেলাভূমি, জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক), শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার ঘুরে দেখেন। এ ছাড়া কুয়াকাটার পশ্চিমে সমুদ্র পথে ফাতরার বন, গঙ্গামতি, লাল কাঁকড়ার চর, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লীও ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবার ঈদুল আযহার শেষ দিনেও অগণিত পর্যটকের সমাগম হয়েছে । ইতোমধ্যে হোটেল মোটেল ও রিসোর্টগুলোর শতভাগ ভাগ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবাদানে আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত। ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, আগত পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। সব মিলিয়ে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে কুয়াকাটা ভ্রমণ করতে পারবে পর্যটকরা। তিনি আরো জানান, অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিসের টিম রয়েছে কুয়াকাটা সৈকতে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply