বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৭ অপরাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধিঃ ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন নিজেই সহ-সুপার পদে নিয়োগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ভুয়া নিয়োগে তিনি এমপিওভুক্ত হয়ে গত তিন বছর ৮ মাসে সরকারী ১০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ঘটনা ঘটেছে বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসায়। মঙ্গলবার মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
আমতলী ইউএনও অফিস সুত্রে জানাগেছে, ২০০৪ সালে কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস মাষ্টার সহ-সুপার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই বছর ২১ ডিসেম্বর আমতলী ইউএনও অফিসে ইউএনও মোঃ মঞ্জুরুল হক ভুইয়াকে সভাপতি করে ওই মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় মনিরুল ইমলাম, মোঃ আবুল কালাম ও ইব্রাহিম খলিল নামের তিনজন অংশ নেয়। ৫০ নম্বরে মধ্যে ২৮ নম্বর পেয়ে আবুল কালাম নির্বাচিত হন। পরে আবুল কালাম ওই মাদ্রাসায় যোগদান করে দুই বছর চাকুরী করেন কিন্তু মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২০০৬ সালে তিনি সৌদি আরবে চলে যান। এ সুযোগে গোপনে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি তৎকালিন ইউএনও মোঃ মঞ্জুরুল হক ভুইয়াসহ নিয়োগ বোর্ডের সকল সদষ্যদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করেছেন। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ওই নিয়োগ পরীক্ষায় মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন তার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মোঃ ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা মোঃ মানজুরুল হককে দেখান। কিন্তু মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা মানজুরুল হক ওই পরীক্ষায় অংশ নেয়াতো দুরের কথা আবেদনই করেননি বলে তারা দাবী করেন। ওই দুই জনকে ভুয়া প্রার্থী দেখিয়ে তাদের স্বাক্ষর জাল করে আলাউদ্দিন সহ-সুপার পদে নিয়োগ নিয়েছেন। ওই নিয়োগ বোর্ড সম্পর্কে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা কেই অবগত নন। ওই ভুয়া নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন ও শিক্ষক নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল সিটে নিয়োগ কমিটির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস মাষ্টার ও জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন। খোজ নিয়ে জানাগেছে, আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসে সহ-সুপার পদে মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের কোন নথি সংরক্ষিত নেই। এদিকে ২০১৯ সালের পয়েলা জুলাই ওই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়। ওই সময়ে সহ-সুপার পদে মাওলানা আলাউদ্দিন এ ভুয়া নিয়োগের কাগজপত্র দিয়ে গোপনে উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এমপিওভুক্ত হন। বর্তমানে তার ইনডেক্স নম্বর গ-০০০১৬৩৯। এই ভুয়া নিয়োগের মাধ্যমে তিনি গত তিন বছর ৮ মাসে সরকারী ১০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৩৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মাওলানা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন ভুয়া নিয়োগের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতওে ২০১৯ সালে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তিন বছর ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি এর কোন প্রতিকার পায়নি।
অভিযোগ রয়েছে সহ-সুপার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বিভিন্ন দপ্তরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে মাওলানা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন ভুয়া নিয়োগের অভিযোগ করেছেন।
কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন ইউনুস মাস্টার বলেন, সহ-সুপার পদে মাওলানা আলাউদ্দিনের নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। ২০০৪ সালের ২১ ডিসেম্বর আমতলী ইউএনও অফিসে নিয়োগ পরীক্ষায় আবুল কালাম নির্বাচিত হয়ে দুই বছর বিনা বেতনে চাকুরী করেছেন। কিন্তু মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তিনি সৌদি আরব চলে যান। এ সুযোগে ওই বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ বোর্ডকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে আলাউদ্দিন ভুয়া নিয়োগ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা মোঃ আলাউদ্দিন নিয়োগ বোর্ড ভুয়া হতে পারে স্বীকার করে বলেন, এগুলো আপনে ( সাংবাদিক) দেখার কে? কোন তথ্য দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার মোঃ মাহবুব আলম নাশিরের মুঠোফোনে (০১৭১১১৩৫৯৩১/০১৩০৯১০০০৬৪) যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত বোর্ড গঠন পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তৎকালিন আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঞ্জুরুল হক ভুইয়া বলেন, অফিসে সংরক্ষিত নথির নিয়োগই সঠিক।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply