রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৮ অপরাহ্ন
মেজবাহ উদ্দিন মাননুঃ কলাপাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার বোঝা এখন আর বইতে পারেছেন না। সারা বছর প্রাইভেট কিংবা ছোট ছোট ব্যাচভিত্তিক কোচিং নির্ভরতার কারণে এমন বেহাল দশায় পড়েছেন এসব পরিবার। তাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে এখন তারা পড়েছেন চরম দুরাবস্থায়। কতিপয় শিক্ষকদের অতিমাত্রার শিক্ষাবাণিজ্যের মানসিকতার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় এখন আর স্কুল নির্ভরতা নেই। স্কুলের কতিপয় শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে। তাদের নিয়ন্ত্রিত কিংবা মালিকানাধীন ব্যাচভিত্তিক সেন্টারে পড়তে হবে- নইলে পরীক্ষার ফলাফল পর্যন্ত উল্টে যায়। চিহ্নিত এক শ্রেণির শিক্ষক এভাবে কলাপাড়ার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়–য়া শিক্ষার্থীরা এমন দশায় পড়েছে। আর অভিভাবকরা আছেন জিম্মি দশায়। অবস্থা এমন হয়েছে যে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পর্যন্ত ওইসব নির্দেশ না মানলে মানসিকভাবে হয়রাণী করার এন্তার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষুদে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের স্যারদের কাছে প্রাইভেট কিংবা তাদের ব্যাচভিত্তিক কোচিং সেন্টারে পড়তে না গেলে পরীক্ষার ফলাফল পাল্টে দেয়া হয়। আর যারা প্রাইভেট কিংবা কোচিংএ পড়ছে তারা পরীক্ষায় ভাল না করলেও ফলাফল ভাল করে দেওয়া হয়। কৌশল পাল্টে শিক্ষকরা কোন শিক্ষার্থীর বাসায় ৫-১০ জনের ব্যাচভিত্তিক কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসুত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কলাপাড়ায় মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ২০ হাজার ১২৫ জন। এর অন্তত শতকরা ৫০ ভাগ প্রাইভেট কিংবা ব্যাচভিত্তিক কোচিং সেন্টারে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অন্তত ১০ হাজার শিক্ষার্থী প্রাইভেট কিংবা কোচিংএ আটকে পড়েছে। গড়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিন শ’ থেকে এক/দেড় হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রয়েছে ১৪ হাজার ৫৭৩ জন। আর মাদ্রাসায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ১০ হাজার ১৪২ জন। যার মধ্যে শতকরা অন্তত ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট কিংবা ব্যাচভিত্তিক কোচিং সেন্টারে পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ব্যয় হচ্ছে দুই থেকে দশ হাজার টাকা। ক্ষুদে এক চায়ের দোকানি জানান, এখন আর সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয় বহন করতে পারছি না। অবস্থা এমন হয়েছে যে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারের কাছে তার সন্তানদের লেখাপড়া এখন কঠিন বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। আর প্রাইভেট কিংবা কোচিং নির্ভরতার কারণে ক্লাশের পাঠদান এখন খুব নিম্নমানের। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। কলাপাড়া পৌর শহরের খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ১২শ ৬৩ জন সেখানে ক্লাশে উপস্থিত ছিল ৮৮০ জন। মহিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল পাঁচ শ জন। বুধবারের দৃশ্য ছিল এটি।
অসংখ্য অভিভাবক এ প্রতিনিধিকে জানান, লেখাপড়া এখন প্রাইভেট কিংবা ব্যাচভিত্তিক কোচিং নির্ভর হয়ে গেছে। কলাপাড়া পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন ফ্রি-স্টাইলে চলছে কোচিং ও প্রাইভেট শিক্ষার বাণিজ্য। শহরের প্রত্যেকটি সড়কে দু’একটি বাসায় ব্যাচভিত্তিক মিনি কোচিং সেন্টার রয়েছে। এসব প্রাইভেট ব্যাচভিত্তিক কোচিং সেন্টারগুলো বিকাল থেকে রাত নয় টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জমজমাট উপস্থিতি। শিক্ষকদেরও সেখানে সরব উপস্থিতি রয়েছে। তাদের পাঠদান করানোর আন্তরিকতাও শতভাগ। যেন নিজেকে উজাড় করে পাঠদান করছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদ্বয় জানান, এ সব কিছুই অনিয়ম। যা রোধে তারা সচেষ্ট রয়েছেন। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানালেন তারা। তবে সন্তানদের শিক্ষাজীবন সচল রাখতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এখানকার সকল অভিভাবকরা। তারা ক্লাশে পাঠদানের মান বৃদ্ধির দাবি করেছেন। তবে একাধিক শিক্ষক জানান, এখন আগের মতো শিক্ষার্থীদের শাসন করা যায় না। ফলে ক্লাশে উপস্থিতি কমে গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, বার্ষিক পরীক্ষা সামনে থাকায় বাসায় পড়াশোনা করছে অনেকে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply