সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধিঃ আমতলী উপজেলার পশ্চিম গাজীপুর এলাকার জিনবুনিয়া খালের ফ্লাসিং স্লুইজগেট দখল করে বাড়ী নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী বাহাদুর মৃধা তার বোন মাফুজা মৃধা । ওই এলাকার পানি নিস্কাশণে সফিকুল মৃধা, মজিবর মৃধা, মোশারফ মৃধা ও নুরজামালসহ তাদের সহযোগীরা আমতলী-গাজীপুর সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ কেটে দিয়েছে। এতে গলাচিপা উপজেলার গোলখালী, নলুয়াবাগী, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর ও হলদিয়া ইউনিয়নের শত শত যান বাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পরেছে হাজার হাজার মানুষ। দ্রুত অবৈধভাবে স্লুইজ গেট দখল করে বাড়ী নির্মাণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাটার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবী করেছেন এলাকাবাসী।
জানাগেছে, ১৯৬৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন বাসীদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নির্মাণ করেন। ওই বাঁধের ওপরে ৩০ বছর আগে সড়ক ও জনপথ পাকা রাস্তা নির্মাণ করে। ওই সড়ক দিয়ে গলাচিপা উপজেলার নলুয়াবাগী, গোলখালী, আঠারোগাছিয়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের শত শত যানবাহন ও হাজার হাজার মানুষ চলাফেরা করে। গাজীপুর এলাকার পানি নিস্কাশনের জন্য স্থানীয় সরকার গত ৩৫ বছর আগে জিনবুনিয়া খালে ফ্লাসিং স্লুইজ ইজ গেট নির্মাণ করে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী বাহাদার মৃধা, তার বোন মাফুজা মৃধা ও তাদের সহযোগী ওই স্লুইজগেট আটকে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে দেয়। পরে ওই স্লুইজগেট দখল করে বাড়ী নির্মাণ করেছেন তারা। এতে পশ্চিম গাজীপুর এলাকার পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। গত বুধবার বিকেলে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফারুক মৃধার চাচাতো ভাই সফিকুল মৃধা, মজিবর মৃধা, মোশারফ মৃধা ও নুরজামালসহ তাদের সহযোগীরা আমতলী-গাজীপুর সড়কের পশ্চিম গাজীপুর আজাহার মাষ্টার বাড়ীর সামনে থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁঁধ কেটে দিয়েছে। এতে গলাচিপা উপজেলার নলুয়াবাগী, গোলখালী, আঠারোগাছিয়া ও হলদিয়া ইউনিয়নে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পরেছে কয়েক হাজার মানুষ। দ্রুত তদন্ত করে জিনবুনিয়া খালের ফ্লাসিং স্লুইজ দখল মুক্ত এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবী করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান বাঁধ কাটায় বন্যা ও জলোচ্ছাসের হুমকিতে রয়েছে পশ্চিম গাজীপুর এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ। দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে জলোচ্ছাস হলে অত্র এলাকা তলিয়ে যাবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে দিয়েছে। দুই পাশে শত শত যানবাহন দাড়িয়ে আছে। অপর দিকে ফ্লাসিং স্লুইজ ভরাট করে বাহাদুর মৃধা ও তার বোন মাফুজা মৃধা বাড়ী নির্মাণ করেছে। স্লুইজ গেটের চিহৃ না থাকলেও মাটির গর্ত পড়ে আছে।
পশ্চিম গাজীপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, পানি নিস্কাশনের জন্য স্থানীয় সরকার গত ৩৫ বছর আগে জিনবুনিয়া খালে ফ্লাসিং স্লুইজ গেট নির্মাণ করে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী বাহাদার মৃধা, তার বোন মাফুজা মৃধা ও তাদের সহযোগীরা ওই স্লুইজগেট আটকে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে দেয়। পরে ওই স্লুইজগেট দখল করে বাড়ী নির্মাণ করেছেন তারা। পানি নিস্কাশনের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে দিয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পরেছে। তিনি আরো বলেন, ওই প্রভাবশালীরা বর্তমানে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি কেটে খাল খনন করছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, যারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে পানি নিস্কাশন করছে তারাই জিনবুনিয়া খালের ফ্লাসিং স্লুইজগেট দখল করে বাড়ী নির্মাণ করেছেন।
স্থানীয় সফিউল মৃধা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে পানি নিস্কাশনে আমরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে দিয়েছি। তবে স্লুইজগেট দখল করে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে রেখেছেন কেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি?
স্থানীয় মতি হাওলাদার ও নিজাম মৃধা বলেন, ৩৫ বছরে আগে পানি নিস্কাশনে ফ্লাসিং স্লুইজ নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই স্লুইজ দখল এবং খাল ভরাট করে বাহাদুর মৃধা ও তার বোন মাফুজা মৃধা বাড়ী নির্মাণ করেছে। ওইখানে এখন স্লুইজ চিহৃও নেই।
স্লুইজগেট দখল করে বাড়ী নির্মাণকারী মাফুজা মৃধা বলেন, অনেক আগে পানি নিস্কাশনের জন্য আমার রেকডীয় জমির ওপরে মোটা পাইপ দেয়া হয়েছিল। ওই পাইপ ভেঙ্গে যাওয়ায় খাল ভরাট হয়ে গেছে। এখন আমি ওই জমির উপরে বাড়ী নির্মাণ করেছি।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ ফারুক মৃধা বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। আপনার সঙ্গে পড়ে কথা হবে বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী (চলতি দায়িত্ব) তারেক হাসান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ, সড়ক ও জনপথ দপ্তরকে জানিয়েছি। তারা দেখে ব্যবস্থা নিবেন। আমরা তাদের সহায়তা করবো। তিনি আরো বলেন, কাটাস্থান থেকে কিছু দুরে স্লুইজ ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন কিন্তু এখন স্লুইজের চিহৃ নেই।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কোন মতেই কাটতে পারেনা। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply