শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদকঃ
কলাপাড়ায় নেছার উদ্দীন সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য সহ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ ডিসেম্বর মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ডিজি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের খেপুপাড়া নেছার উদ্দীন সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ ও লাইব্রেরিয়ান নিয়োগের জন্য সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নভেম্বরের ২৯ তারিখ নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সেই তারিখ পরিবর্তন করে ৩০ নভেম্বর নির্ধারণ করে নিয়োগ বোর্ড। পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ১০টায় ওই নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু লিখিত পরীক্ষা শুরু হয় বেলা সোয়া ১১টায়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ পরীক্ষার দিন সকাল ১০টায় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। এর পর নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তথা স্থানীয় এমপির পূর্ব নির্ধারিত অধ্যক্ষ প্রার্থী নাসির উদ্দিনকে সেই প্রশ্নপত্র দিয়ে উত্তর শেখানো হয়। এতে নির্ধারিত সময়ে লিখিত পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। একইভাবে লাইব্রেরিয়ান প্রার্থীকেও প্রশ্ন দিয়ে সহায়তা করা হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অধ্যক্ষ নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫ জন উপস্থিত ছিলেন। অন্য দুজনকে ‘ম্যানেজ’ করা হয়। যে ৫ জন উপস্থিত ছিলেন এর মধ্যে তিনজন ছিলেন মো. নাসিরের সমর্থনে এবং লিখিত পরীক্ষায় শুধু নাসির উদ্দিনকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। নিয়োগ বিধি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষায় কমপক্ষে তিনজন উত্তীর্ণ হতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই বিধান মানা হয়নি।
এরআগে ঘুষের টাকায় বোর্ডের সভাপতি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল আহসানকে নিয়ে বিমানে ঢাকা থেকে বরিশাল যান। সেখান থেকে কুয়াকাটা যান তারা। নিয়োগ পরীক্ষা ৩০ তারিখ হলেও তারা যান একদিন আগেই অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর। নিয়োগ বোর্ডে ইসলামিক ইউনিভার্সিটির পক্ষে প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগে প্রফেসর মো. আবদুল্লাহ মারুফ ছিলেন। তবে তার কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না বলে জানা গেছে। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. আবুল কালাম আজাদ।
মাদ্রাসার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিবের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’টাকা লেনদেনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থী উত্তীর্ণ হওয়া এবং এ ক্ষেত্রে আইনি জটিলতার বিষয়টি বোর্ডের দৃষ্টিতে আনার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।’
এদিকে একই দিনে মৌখিক পরীক্ষা, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ, রেজুলেশন এবং পরেরদিন যোগদান দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী, প্রার্থী তার পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে রিজাইন করা এবং নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদানে নিয়োগের অফার পাওয়া এসব নিয়ম কিছুই মানা হয়নি। এছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মো. আবদুর রাজ্জাক, মো. জসিমউদ্দিন ও মো. নজির আহমেদ এর আবেদন এবং ব্যাংক ড্রাফট কলাপাড়া সোনালী ব্যাংক হতে করা। তাদের বাড়ি এক একজনের একেক এলাকায় হলেও এই তিন প্রার্থী একইদিন একই ব্যাংকে পর পর ড্রাফট করেন।
মো. আবদুস শাকুর নামের এক প্রার্থী লিখিত অভিযোগে বলেন, নিয়োগ বিধিতে আছে, কোনো ব্যক্তি এক প্রতিষ্ঠান হতে অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পূর্বে পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠান হতে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু নাসির উদ্দিন ১/১২/১৯ তারিখ সকাল ১০টায় অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেছেন। পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠান হতে নাসির উদ্দিন ছাড়পত্র গ্রহণ করেননি বলেও অভিযোগ তার।
নিয়োগপ্রাপ্ত মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন বলেন, টাকা লেনদেন হয়নি। আর নিয়োগ বৈধভাবেই হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
মাদ্রাসা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জিয়াউল আহসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয়টি জানেন না। তবে একজন লিখিত পরীক্ষায় পাস করায় তাকে নিয়োগ দেয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, বিষয়টি তিনি এমপির সঙ্গে কথা বলে জেনে জানাবেন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply