
আমতলী প্রতিনিধিঃ
টাকার বিনিময়ে কলাপাড়ার চাঞ্চল্যকর নববধু চম্পা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জসিট) দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আসাদুর রহমান। মামলার প্রধান আসামী বাবুল হাওলাদারের স্বীকারোক্তিমুলক আসামীও অব্যাহতি দিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ অভিযোগপত্র বাতিল করে পুনরায় তদন্তের দাবী করেন মামলার বাদী মোঃ চান মিয়া সিকদার। বাদীর অভিযোগ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুর রহমান তার কাছে দুই লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। তার দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রধান আসামী বাবুল হাওলাদারকে অভিযোগপত্রে রেখে এজাহার নামীয় ও ঘাতক বাবুলের স্বীকারোক্তিমুলক আসামীদের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুর রহমান। রবিবার মামলার বাদী চান মিয়া সিকদার অভিযোগপত্র বাতিল চেয়ে (নারাজি) কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছেন।
জানাগেছে, এ বছর ১ জানুয়ারি তালতলী উপজেলার কলারং গ্রামের চাঁন মিয়া সিকদারের কন্যা চম্পাকে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার চাকামুইয়া ইউনিয়নের গামরীবুনিয়া গ্রামের কাদের হাওলাদারের ছেলে বাবুল হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের ১২ দিনে (১২ জানুয়ারী) মাথায় বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে নেয়ার কথা বলে স্ত্রী চম্পাকে নিয়ে যান স্বামী বাবুল হাওলাদার ও অন্য আসামীরা। এরপর থেকে নববধূ চম্পা নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় চম্পার বাবা চাঁন মিয়া সিকদার গত ১৪ জানুয়ারী তালতলী থানার জামাতা বাবুলের বিরুদ্ধে সাধারণ ডারেয়ী করেন। নিখোঁজের ১০ দিন পর গত ২২ জানুয়ারী স্থানীয়রা নববধু চম্পার স্বামী বাবুল হাওলাদারের বাড়ীর সন্নিকটে মাঠে পঁচা গন্ধ পেয়ে ইউপি সদস্য জাকির হোসেন অভিকে জানায়। পরে তিনি (ইউপি সদস্য) কলাপাড়া থানার পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে বিলের মধ্যে মাটি চাপা দেয়া অর্ধ-গলিত চম্পার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনার চম্পার বাবা চাঁন মিয়া সিকদার বাদী হয়ে ওইদিন কলাপাড়া থানায় ঘাতক বাবুল হাওলাদারকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দের মাস পর গত ৭ মার্চ পুলিশ প্রধান আসামী ঘাতক বাবুলকে গ্রেফতার করে। ঘাতক বাবুল থানায় ও আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। এ ঘটনার সাথে জয়নাল প্যাদা,রিপন সরদার, ময়না আক্তার ও রিনা বেগম জড়িত বলে জবানবন্দিতে ঘাতক প্রধান আসামী বাবুল হাওলাদার স্বীকার করেন। কিন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুর রহমান প্রধান আসামীর স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে দেয়া আসামী এবং এজাহার নামীয় আসামীদের অব্যাহতি দিয়ে শুধু প্রধান আসামী বাবুলকে আসামী রেখে গোপনে গত শুক্রবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ আছে প্রধান আসামী ঘাতক বাবুল হাওলাদার নিজের পরিকল্পনাই তিনি স্ত্রী চম্পাকে হত্যা করেছে। বাদী চাঁন মিয়া সিকদারের অভিযোগ ঘটনার পর থেকেই তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুর রহমান আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে আসছিল। এক পর্যায় তার কাছে দুই লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। ওই টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে তিনি আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সকল আসামীদের অব্যাহতি দিয়ে প্রধান আসামী ঘাতক বাবুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে আমার ও আমার মানিত স্বাক্ষিদের বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এই অভিযোগপত্রে আমি ন্যায় বিচার পাব না। ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে পুনরায় তদন্ত করার দাবী জানান তিনি। এদিকে মামলার বাদী চান মিয়া সিকদার রবিবার অভিযোগপত্র বাতিল চেয়ে (নারাজি) পুরনায় তদন্তের জন্য কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে আবেদন করেছেন। অভিযোগপত্রের খবর এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা তদন্ত কর্মকর্তার এমন নিকৃষ্ট কাজের প্রতিবাদ জানিয়ে শাস্তি দাবী করেছেন।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুর রহমান বলেন, একমাত্র আসামী বাবুলের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট আসামীদের অব্যাহতি দেয়া হয়। ঘাতক বাবুলের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে দেয়া আসামী কিভাবে অব্যাহতি দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। টাকার বিমিময়ে আপনী অভিযোগপত্র দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাদী অনেক কথাই বলতে পারে। তবে বাদী আদালতে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দিতে পারেন।
পটুয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কলাপাড়া সার্কেল) আহম্মদ আলী বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার অভিযোগপত্র সঠিক। ন্যায় বিচারের স্বার্থে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply