শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৪০ অপরাহ্ন
আপন নিউজ ডেস্কঃ
কলাপাড়ার নীলগঞ্জে সম্পত্তির দখল বুঝে চাওয়ায় আপন ভাই ও তার ছেলেরা ষাটোর্ধ বৃদ্ধা শেফালী বেগমকে নির্মম নির্যাতন করে দুই পা গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসী। শনিবার দুপুরে কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়কের মোস্তফাপুর বাজারে এ মানববন্ধন করেন। এদিকে ঘটনার আটদিন অতিবাহিত হলেও আর্থিক সংকটে উন্নত চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রনায় ছটফট করছে শেফালী বেগম। তবে কলাপাড়া থানা পুলিশ জানায় এ ঘটনায় দুই পক্ষই মামলা দায়ের করেছ। পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনা তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ আসামি জামিনে রয়েছে।
গত ৮ অক্টোবর সন্ধায় অসুস্থ পুত্রবধুর জন্য ওষুধ কিনতে ঘর থেকে বাইরে বের হয় শেফালী বেগম। এ সময় সম্পত্তির নিয়ে আপন বড় ভাই মগরব আলীর সঙ্গে পূর্ব থেকে বিরোধের জের ধরে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তাকে চুল ধরে ঘরের মধ্যে টেনে নেয় মগরব আলী ও তার ছেলেরা। তারা এ সময় শেফালী বেগমের মুখে গামছা গুঁজে বেধড়ক নির্যাতন করে। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রড দিয়ে পিটিয়ে দুই পা হাটুর নিচ থেকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। চাকু দিয়ে পায়ের গোড়ালী খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শেফালী বেগমের পুত্রবধু পারভীন ও প্রতিবেশী সাইদুল ইসলাম জানান, শেফালী বেগমের চিৎকার যাতে প্রতিবেশীরা শুনতে না পারে এজন্য তার মুখে গামছা ঘুঁজে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন শেষে পা গুঁড়িয়ে দেয়ার পর তাকে ফেলে রেখে গেছে। এ সময় তাকে বাঁচাতে স্বজনরা এগিয়ে এলে তাদের উপরও হামলা করা হয়।
এদিকে ঘটনার আটদিন হলেও হামলাকারী গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। শনিবার দুপুরে ঘটনায় জড়িত মগরব আলী ও তার স্বজনদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে।
সভায় শেফালী বেগমের বোন নুর জাহান বেগম ও নারী নেত্রী লাইলী বেগম বলেন, এর আগেও শেফালী বেগমকে একাধিকবার নির্যাতন করা হয়েছ। ডোবার পানিতে চুবানো হয়েছে। জমির দাবি তুললেই নেমে আসতো নির্যাতনের খড়গ। কিন্তু অসহায় এ বৃদ্ধা জীবনের শেষলগ্নে পৈত্রিক সম্পত্তিতে এসে আশ্রয় নিলেও সম্পত্তির দখলের জন্যই তাকে বার বার নির্যাতন সইতে হচ্ছে।
ইউপি সদস্য মাহিনুর বেগম ও আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার আটদিন অতিবাহিত হলেও এখনও আর্থিক সংকটে শেফালী বেগমের উন্নত চিকিৎসা শুরু করা যায়নি। পায়ের ক্ষত নিয়ে সে এখন বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রনায় ছটফট করছে। অথচ হামলাকারীরা এ মামলা থেকে বাঁচতে উল্টো শেফালী বেগমের স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, প্রতিদিন শেফালী বেগমের চিকিৎসার জন্য পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তার অপারেসনের জন্য অন্তত দুই লাখ টাকা। অথচ বাজার থেকে চাঁদা তুলে তার এখন চিকিৎসা চলছে। তারা শেফালী বেগমের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয়রা বলেন, কলাপাড়ার বর্বোরোচিত এ হামলায় জড়িতদের শাস্তি না হলে নারী নির্যাতন বেড়েই চলবে। সম্পত্তির জন্য আপন ভাই তার বোনের উপর যে নির্মম নির্যাতন করেছে এতে পঙ্গু হওয়ার পথে শেফালী বেগম। শেফালী বেগম প্রায় ত্রিশ বছর ঢাকায় ইটভাঙ্গা কাজ করে করোনা মহামারিতে কর্মহীন হয়ে গত সাত মাস আগে পিতার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘর করে এক ছেলে ও পুত্রবধু নিয়ে বসবাস করে আসছিলো। পৈত্রিক সম্পত্তিতে ঘর তুললেও শেফালীর সাত কড়া জমি দখল করে রাখে ভাই মগরব আলী ফকির। এমনকি বাড়িতে আসা যাওয়ার রাস্তাও আটকে দেয়। এ কারণে গোটা বর্ষায় ধান ক্ষেত দিয়ে হাঁটু পানি পেড়িয়ে তাদের চলাচল করতে হয়েছে। এ নিয়ে গত মাসে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠকও হয। সালিশে মগরব আলীকে চলাচলের রাস্তার জন্য ছয় ফুট জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু বোন ও ভাগ্নের চলাচলের রাস্তা ছাড়েনি সে। এ সম্পত্তির দখল বুঝে চাওয়ায় তার উপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শেফালী বেগমের আল আমিন হাওলাদার বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮ জনের বিরুদ্ধে রোববার রাতে এ মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ইতোমধ্যে ১০ জন আদালত থেকে জামিনে রয়েছে। অন্যরা পলাতক রয়েছে। এ ছাড়া শেফালী বেগমের স্বজনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেছে মগরব আলীর স্বজন কাসেম ফকির। পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দুটি মামলাই তদন্ত করছে বলে জানান।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply