গলাচিপায় জীবন যুদ্ধে হার মানে নি মাহিনুর বেগম | আপন নিউজ

মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
গলাচিপায় বিটিএফ স্কুলের শতভাগ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের এমপির সংবর্ধনা গলাচিপায় কালবৈশাখী আতঙ্কে তরমুজ চাষিরা তালতলীতে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ঘর-জমি পাচ্ছেন ৩০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন বামনা উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা বুধবার কলাপাড়া আইনজীবী কল্যাণ সমিতির নাথুরাম সভাপতি, আনোয়ার সম্পাদক নির্বাচিত গলাচিপায় অবশেষে বিয়ে করলেন আরিফ-মারিয়া গলাচিপায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ গৃহ উদ্বোধন বিষয়ে ইউএনও’র প্রেস ব্রিফিং এসো মিলি ইতিহাসের আঙিনায় স্মৃতিমন্থনে জেলার শ্রেষ্ঠ থানা মহিপুর, শ্রেষ্ঠ ওসি আবুল খায়ের গলাচিপায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ে গনসচেতনতা মূলক মাঠ মহড়া
গলাচিপায় জীবন যুদ্ধে হার মানে নি মাহিনুর বেগম

গলাচিপায় জীবন যুদ্ধে হার মানে নি মাহিনুর বেগম

সঞ্জিব দাস, গলাচিপাঃ
অভাবী সংসারের হাল ধরে স্বচ্ছলতা অর্জন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মাহিনুর বেগম। বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন এনজিও’র প্রকল্প এর পরামর্শক্রমে নারী হয়েও জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আজ গড়ে তুলেছেন হাঁস, মুরগী ও গরুর খামার। প্রতিমাসে খামার থেকে আয় করছেন এখন লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন এলাকার নানা বয়সের নারী-পুরুষ ওই নারীর খামার প্রদর্শন করে অনেকেই খামার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং তার কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ গ্রহন করছেন। সরজমিনে দেখা যায় পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর তীরে অবস্থিত বড় চৌদ্দকানি নামক গ্রামে বসবাস করেন মাহিনুর বেগম। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। স্বামী-স্ত্রী ও ৩ জন পুত্র সন্তান এবং শ্বাশুড়ী। মাহিনুর বেগমের ২০০১ সালে ১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়। লেখাপড়া মাত্র ১০ম শ্রেণি। স্বামী দিনমজুর অন্যের জমিতে কাজ করেন, তবে মাঝে মাঝে কৃষিকাজ করে কোন রকমে সংসার চলত। এক পর্যায়ে সংসারের ব্যয় এবং সন্তানদের পড়াশুনার খরচ চালানো একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। চিন্তা করলেন নিজেদের ভাগ্যের চাকা কিভাবে ঘুরানো যায়। শুরু হয় মাহিনুর বেগমের সাথে অভাবের যুদ্ধ। তিনি নিজ উদ্যোগে বাড়ীতে হাঁস-মুরগী পালন শুরু করেন। তবে হাঁস-মুরগী পালনে বিশেষ জ্ঞান না থাকার কারণে সফলতা পাচ্ছিলেন না। বড় পরিসরে ফার্ম করার চিন্তা করলে তার মূলধণ ও সাহস খুঁজে পাচ্ছিলেন না। নিজের বাড়ীর আঙিনায় ছোট একটি ঘর তুলে কিছু মুরগীর বাচ্চা পালতে থাকেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে এই উদ্যোগ বেশি দিন ধরে রাখতে পারেন নি। ভাগ্যের চাকা উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করলে ২০১৬ সালে সকল মুরগী নিউমোনিয়া ও রানীক্ষেতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মাহিনুরের কষ্টার্জিত অর্থ আর স্বপ্ন যেন ভেঙ্গে গলেও হাল ছাড়েননি মাহিনুর বেগম। আবারো ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালের মে মাসে সুশীলনের মেকিং মার্কেট ওয়ার্ক ফর উইমেন প্রকল্পের অধীনে বড় চৌদ্দকানি এলএফএস দলের সদস্য পদ লাভ করেন। দলের সদস্য হওয়ায় মাহিনুর বেগম প্রকল্প হতে মার্কেটিং লিটারেসি, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব উন্নয়ন, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়াও হাঁস-মুরগী পালন, গবাদি পশু-পাখির টিকা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণসহ আরও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক জ্ঞান লাভ করেন। তার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ অনুযায়ী প্রথমে ২০টি মুরগী ও ১টি মোরগ কিনে ব্যবসায়িক আকারে শুরু করেন। পরবর্তীতে ৫শত টি ব্রয়লার মুরগীর খামার করে পালন করতে থাকেন। কিন্তু এখানেও স্বপ্নের ভাগ্যের চাকা, প্রথম চালানে মুরগীগুলো বার্ডফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এমতাবস্থায় হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। তখনই ফিল্ড ফেসিলিটেটর তাকে হাল না ছাড়তে বলেন এবং সাহস যোগান। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ফিল্ড ফেসিলিটেটর এর সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ব্রাক এর মাইক্রোফাইন্যান্স প্রকল্প হতে ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। প্রথম চালানে লেয়ার পালন করে ২৫ হাজার টাকা লাভ করেন। পরবর্তীতে তার ১০ শতক জমিতে ৫টি ঘর তুলে ৩ হাজারটি লেয়ার মুরগী আর গলেস্টিয়ান প্রজাতি গাভী নিয়ে ব্যবসায়িক আকারে শুরু করেন। মাহিনুর বেগম জানান, বর্তমানে তার খামারে ৩ হাজার ৫ শতটি লেয়ার মুরগী, ২ শত ৮০টি হাঁস ও ৪টি হলেস্টিয়ান জাতের গাভী রয়েছে। প্রতিদিন খরচবাদে হাঁস-মুরগীর ২ হাজার ৭ শতটি ডিম ও গাভীর ১২ লিটার দুধ পাইকারদের কাছে বিক্রি করে ১১ হাজার টাকা আয় করেন। মাসিক আয় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও বছরে ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৫ জন শ্রমিক নিয়মিত তার খামারে কাজ করেন। তিনি ভবিষ্যতে এলাকায় সফল খামারিদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুলবেন যাতে করে সবাই এ কাজে এগিয়ে আসেন এবং গুণগত মান সম্পন্ন উপকরণ সহজে ও অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনতে পারেন এবং উৎপাদিত ডিম সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করতে পারেন। মাহিনুর বেগম বলেন, প্রবল ইচ্ছা শক্তি, ধৈর্য্য ও সঠিকভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে আজ আমি খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছি। তিনি সকল বেসরকারি এনজিও সুশীলন ও ব্রাকের কাছে চিরঋনী। কারণ তারা সার্বক্ষণিক আমাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার মাহিনুর বেগমের খামার পরিদর্শন করেছি এবং ফার্মের হাঁস-মুরগী ও গাভীর সুস্থতার জন্য পরামর্শসহ নিয়মিত ওষুধ ও টিকা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেছি। আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন সফল খামারি।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By MrHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!