কুয়াকাটায় শেখ রাসেল লেক পার্ক নামে মেয়রের হরিলুটের প্রকল্প | আপন নিউজ

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
আমতলী সদর ইউপি নির্বাচনে শেষ সময়ে প্রচারনায় ব্যস্ত প্রার্থীরা; জরিপে এগিয়ে মোতাহার আমতলী একে স্কুল মহাসড়ক থেকে ৪৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কলাপাড়ায় দূর্যোগ সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় ট্রাক কেনার কথা বলে আপন ভাতিজীর টাকা নিয়ে উধাও আপন চাচা জমে উঠেছে আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন; তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস আমতলীতে ডায়েরীয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংঙ্কট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ জনের বেডে ৩১ জনের চিকিৎসা! কলাপাড়ায় ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ গলাচিপায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, শিশুর মৃ’ত্যু কলাপাড়ায় জমিসংক্রান্ত বিষয় সালিশি বৈঠক শেষে হামলা; তিনজনকে কু’পি’য়ে জ’খ’ম কলাপাড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে মা-ছেলে ও ছেলের বউকে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ
কুয়াকাটায় শেখ রাসেল লেক পার্ক নামে মেয়রের হরিলুটের প্রকল্প

কুয়াকাটায় শেখ রাসেল লেক পার্ক নামে মেয়রের হরিলুটের প্রকল্প

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

কুয়াকাটা বেড়িবাঁধের বাইরে সৈকত লাগোয়া এলাকায় কোন ধরনের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নকশা অনুমোদন, অর্থায়ন ছাড়াই ৪ কোটি টাকার শেখ রাসেল লেক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র। তার গৃহীত বায়বীয় এ প্রকল্পের পাশেই চলছে সৈকত সুরক্ষার কাজ। পৌরসভার দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের সম্পূর্ন অজ্ঞাত সারে মেয়র পরিকল্পিত লেক নির্মান প্রকল্পের নামে চলছে পরিত্যক্ত জলাধারের বালু উত্তোলন ও সরকারী খাস জায়গা ভরাট কাজ। কোন ধরনের দরপত্র আহবান বা প্রকল্পের ব্যয়ের অর্থের উৎস কিংবা নকশা অনুমোদন ছাড়াই মেয়র নিজের খেয়াল খুশিমতো লেক নির্মাণের নামে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে গণশৌচাগার ও শেখ রাসেল লেক পার্ক এবং মার্কেট নির্মাণসহ রাখাইন মার্কেটের বালু ভরাটের কাজ করছেন। এছাড়া জলাধারের পূর্বপাশে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর অভিজাত আবাসিক হোটেলের সুবিধার্থে নিজস্ব ৫০ ফুটের একটি রাস্তা নির্মাণে এ বালুর ব্যবহার করছেন। কুয়াকাটার সচেতন নাগরিক মহলের মন্তব্য, রাজনৈতিক দল ছুট নেতা কুয়াকাটা পৌর মেয়র শেখ রাসেল লেক পার্ক নামে বায়বীয় প্রকল্প নিয়ে সরকারী অনুমোদন ও বরাদ্দ বাগিয়ে সরকারি অর্থ লুট পাট করার পরিকল্পনা করছে।
এদিকে জলাধার লাগোয়া ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত ‘ট্যুরিজম পার্ক’টি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। মুজিব শতবর্ষে ২০২০ সালের ১০ মার্চ এই পার্কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। নকশা বহির্ভূত ভাবে ট্যুরিজম পার্ক নির্মিত হওয়ায় কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না পর্যটকরা। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী এ পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এটি পূর্নাঙ্গভাবে চালু না হলেও ফের এ পার্কটির পাশে সরকারি কয়েক কোটি টাকার আরেকটি লেক (জলাশয়) পরিচ্ছন্ন করার কাজে নেমেছেন নবনির্বাচিত কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার। এনিয়ে কুয়াকাটার স্থানীয় মানুষের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্য। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভ‚মি প্রশাসনের জমিতে ব্যক্তি স্বার্থে কিভাবে শেখ রাসেলের নাম ব্যবহার করে এ লেক নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব এটাই এখন দেখার বিষয়।
স্থানীয়রা জানান, ওই জলাশয়ের বেড়িবাঁধের ভেতরে ও বাইরের অংশে প্রায় ৫ একর ভূমি দখলে নিয়েছে এক প্রভাবশালী জাপা নেতা। আর ওই জলাধার জমি দখলের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন দলছুট জাপা নেতা ও বর্তমান মেয়র আনোয়ার হাওলাদার। যা দখলে নিতে অন্তত: ১৬টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। জলাধার ও উচ্ছেদকৃত পরিবারের জায়গাগুলোর মালিক পাউবো। এখন আবার বেড়িবাঁধের বাইরের জায়গায় পাউবোর অনুমতি ছাড়াই লেকপার্ক নির্মাণে নামে চলছে বহুমূখী নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প। তবে এটা কি সেই হেবি ওয়েট জাপা নেতার স্বার্থে? এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের মতে, কুয়াকাটা সৈকতের শুন্য পয়েন্টের পূর্বদিকে নারিকেল বাগানের মধ্যে খালি জায়গায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট প্রস্থ ট্যুরিজম পার্কটি পুর্নাঙ্গভাবে আগে চালু করা হোক। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে এক কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দে সাগরপারে দৃষ্টিনন্দন এ পার্কটি নির্মিত হয়েছে। ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ পার্কটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। পার্কটিতে পর্যটকের জন্য বহুমুখি সুবিধা চালুর কথা রয়েছে। সাগরে গোসল করতে নামার আগে পর্যটকরা পার্কটিতে থাকা লকার ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। যেখানে জুতো-স্যান্ডেল, মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ সবকিছু গচ্ছিত রাখতে পারবেন। নামে মাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময় এ লকার ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। অন্তত দুই শ’ লকার থাকছে। পার্কটি রয়েছে বাউন্ডারি ঘেরা। টিনশেড আধুনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ একতলা আলাদা বিশ্রামাগার থাকার কথা রয়েছে। সেখানে সোফার ব্যবহার থাকবে। পার্কে বসেই উত্তাল সমুদ্রে দৃষ্টি রাখতে পারবেন পর্যটক। সাগরে গোছল শেষে হাত-পা ধোয়ার জন্য পানির সরবরাহ লাইনসহ অসংখ্য ট্যাপ থাকবে। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদাভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পাল্টানোর মতো স্পেস নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। আলাদা প্র¯্রাবখানাসহ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত ওয়াশরুম, ৫০ সিটের কফি হাউস থাকার কথা ছিল। প্রায় ৪০ ফুট দীর্ঘ দুই সারিতে কফি হাউসের আড্ডায় বসতে পারবেন আগতরা। থাকার কথা ছিল ক্যাফে কর্ণার। এমনকি ফি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ কনসার্টের ব্যবস্থা থাকবে এ পার্কটিতে। ইতোমধ্যে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোতালেব শরীফ জানান, জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত ট্যুরিজম পার্ক নকশা অনুযায়ী নির্মাণ না করায় পুর্নতা পায়নি। পুন:রায় একই জায়গায় শেখ রাসেল লেক পার্ক নামে মেয়র প্রকল্প নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন।
কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, ’বেড়িবাঁধের বাইরে কোন প্রকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া ঝুকিঁপূর্ণ। দরপত্র ছাড়া ৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হরিলুট ছাড়া কিছুই হতে পারে না। জাপা (এ) দলের বিশেষ এক নেতা এবং প্রভাবশালী এক হোটেল ব্যবসায়ীর স্বার্থ উদ্ধারে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে তার দাবী।’ তিনি আরও বলেন, ’সম্প্রতি সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানের প্রায় ৫০ একর জমি দখলে সহযোগিতা করেছেন বর্তমান মেয়র। এখন আবার তাদের হয়ে কোন অনুমোদন ছাড়াই নতুন প্রকল্প পৌরবাসীর গলার কাটা হয়ে দাড়াবে এক সময়।’
কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক আপন নিউজ’কে বলেন, ’এ জলাধার ব্যবহারে লিখিত কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। সেখানকার অধিকাংশ জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের।’
পাউবো’র উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহেরাজ আপন নিউজ’কে বলেন, ’এ বিষয়ে তাদের কোন কিছুই অবগত করা হয়নি।
কুয়াকাটার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, কুয়াকাটা পৌরসভার সৌন্দর্য্য বর্ধনে যে সকল খাস জমি রয়েছে তাতে দৃষ্টিনন্দন কর্মকান্ড করতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতির ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি।
কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সাজেদুজ্জামান বলেন, ’শেখ রাসেল লেক পার্ক নামে কোন প্রকল্প সম্পর্কে আমি অবগত নই। এর নকশা, ফান্ড সম্পর্কেও তার কোন কিছু জানা নেই। এটি মেয়র সাহেব বলতে পারবেন।’

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!