রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদন।। মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন, ভূমিহীনদের তালিকার সঙ্গে ৪২ বিত্তবানের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৭২ একর খাস জমি দলিল করে দেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক’র সই স্ক্যানিং করে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির এমন অপকর্মের মূল হোতা বলে উপজেলা প্রশাসন নিশ্চিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিষয়টি কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বক্কর সিদ্দিকী নামজারি করতে গেলে তার দৃষ্টিগোচর হয়। এর প্রেক্ষিতে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক রোববার তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক খাস জমিসহ সেমিপাকা একটি ঘর প্রদানের লক্ষ্যে তিনটি স্মারকে ১৯৫টি বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরকে ক্ষমতা প্রদানপূর্বক তার স্বাক্ষর সত্যায়ন করে খেপুপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির তিন দফায় আরও ৪২টি বিত্তবান শ্রেণির কথিত ভূমিহীনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নামে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাস জমির দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন। এ বছরের ১৯ এপ্রিল ২২টির স্থলে ৩১টি, ২৪ এপ্রিল ১২০টির স্থলে ১৩২টি এবং ১৯ মে ৫৩টির স্থলে ৭৪টি কবুলিয়ত দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয় সার্ভেয়ার হুমায়ুন। এই ৪২টি দলিলে সর্বোচ্চ তিন একর থেকে নিচে এক একর করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে। ৬০ এর দশক থেকে ২০০২-২০০৩ দশকের তালিকার কেস নম্বর থেকে ৪২টি নামে এই পরিমাণ খাস জমি মুজিবশতবর্ষের তালিকায় ঢুকিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। কবুলিয়তের দুই শতক লেখা জায়গায় হাতের লেখায় কাটাছেঁড়া করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, তার সই স্ক্যান করে এসব কবুলিয়ত ফরমে ব্যবহার করা হয়েছে। তালিকার নিচে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। তাকে অফিসেও পাওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। কারণ মুজিব শতবর্ষের সকল কবুলিয়ত রেজিস্ট্রিতে দুই শতক খাস জমি দেওয়ার কথা লেখা থাকলেও কীভাবে একে একে ৪২টি কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন একর খাস জমির। বর্তমানে এই ৭২ একর খাস জমির মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। সার্ভেয়ারের এমন জালিয়াতির ঘটনায় আর কে কে জড়িত তা এখন অফিসপাড়ায় মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে।
সাবরেজিস্ট্রার রেহেনা পারভিন বলেন, ‘যেহেতু ভূমিহীন গৃহহীনদের দলিল ছিল, ইউএনওর সই ছিল। সার্ভেয়ার তাড়াহুড়া করে নামজারির কথা বলেছে। তাই সরল বিশ্বাসে প্রত্যেক পাতা দেখিনি। এখন তো দেখি এই অবস্থা।’ তবে ওই ৪২টি কবুলিয়ত দলিল বাতিল করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক আরও জানান, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply