মঙ্গলবার, ১৭ Jun ২০২৫, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
সঞ্জিব দাস, গলাচিপাঃ সকালবেলায় যখন সমবয়সীরা স্কুলের ইউনিফর্ম পরে বই-খাতা হাতে রওনা দেয়, তখন শুভর হাতে থাকে রিকশার হ্যান্ডেল। তার স্কুল নেই, বই নেই, নেই অবসর কিংবা খেলাধুলার আনন্দ। দশ বছর বয়সেই জীবিকার ভার তুলে নিয়েছে সে। শুভ এখন গলাচিপা শহরের রাস্তায় ছুটে চলে, পেছনে যাত্রী, সামনে অনিশ্চয়তা।
শুভর বাড়ি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের টিএনটি রোডে। বাবা আবুল হোসেন পেশায় রিকশাচালক, তবে তিনিও এখন তেমন কাজ করতে পারেন না। মা কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। তিন ভাই-বোনের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। মা-বাবার কষ্ট কিছুটা লাঘব করতেই শুভর এই কঠিন পথে নামা।
এর আগে সে স্থানীয় একটি হোটেলে দৈনিক ২০০ টাকায় কাজ করত। কিন্তু সেখানে বেশিদিন টিকতে পারেনি। এখন ছোট্ট শরীরে রিকশার ভার টানতে হয় প্রতিদিন। প্রতিটি প্যাডেলে জড়িয়ে থাকে ক্লান্তি, ক্ষুধা আর জীবনের কঠিন বাস্তবতা।
শহরের পোস্ট অফিস রোড, বাসস্ট্যান্ড, কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই দেখা যায় শুভকে রিকশা চালাতে। কিশোর নয়, সে এখন পরিণত এক জীবনের যাত্রী।“ভাই, বাড়িতে অনেক কষ্ট। দুইটা ছোট বোন আছে, আমিই চালাইলে খাইতে পারে। প্রতিদিন ৮০ টাকা এই শর্তে আজ পাঁচদিন ভাড়ায় রিকশা চালাই। ছোট বলে অনেকেই রিকশায় উঠতে চায় না, তাই রোজকার কম,” কথাগুলো বলার সময় শুভর চোখে-মুখে ছিল না কোনো আবেগ, ছিল কেবল বাস্তবতার চাপা রঙ।শুভ কেবল একজন শিশুশ্রমিক নয়, বরং সে আমাদের সমাজব্যবস্থার এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। এমন হাজারো শিশু আজ বেড়ে ওঠে না, বড় হয়ে যায় অভাব, দায়িত্ব আর সমাজের উদাসীনতায়। তাদের জন্য এখনই সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাবা উচিত।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply