আমতলী প্রতিনিধিঃ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় পোল্ট্রি শিল্পে ধব নেমেছে। পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন। তারা সরকারের কাছে সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণসহ আর্থিক সহযোগীতার দাবী জানিয়েছেন। অঘোষিত লকডাউনের কারণে দুই উপজেলার খামারিরা উৎপাদিত হাস-মুরগি-ডিম বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন। ধারাবাহিক লোকসানের মুখে একের পর এক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে এই শিল্পে জড়িত অন্তত সহ¯্রাধীক মানুষ বেকার হয়ে পড়ছেন।
প্রাণী সম্পদ অফিস সুত্রে জানাগেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ছোটবড় মিলে চার শতাধিক পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এসব খামারের সঙ্গে সহ¯্রাধীক মানুষ জড়িত। গত ফেব্রæয়ারী মাসে এসব খামার বেশ জমজমাট ছিল এবং ভালো আয় হতো। বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে এ সব খামারে আর্থিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। দুঃসময় পার করছেন পোল্ট্রি খামারিরা। তাদের উৎপাদিত হাস-মুরগি-ডিম বিক্রি করতে পারছেন না, এতে বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেক খামারী লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এ শিল্পকে রক্ষায় সরকারের কাছে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণসহ আর্থিক সহযোগীতার দাবী জানিয়েছেন খামারিরা।
বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন পোল্ট্রি খামার ঘুরে দেখাগেছে, খামারে মুরগী রয়েছে কিন্তু ক্রেতা না থাকায় বিক্রি করতে পারছে না। দুই দিকেই তারা লোকসান দিচ্ছেন। একদিকে খামারে মুরগীর খাবার দিতে হচ্ছে। অন্য দিকে দামও কম। অনেক খামারী লোকসানে মুরগী বিক্রি করে দিয়েছেন।
তালতলী উপজেলার লেমুয়া গ্রামের তালহা পোল্ট্রি ফার্মের মালিক মোঃ রহিম কাজী বলেন, এক লক্ষ ষাট হাজার ব্যয়ে এক হাজার সোনালী মুরগী লালন পালন করছি। কিন্তু মুরগী বিক্রির উপযোগী হলেও করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিক্রি করতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, বর্তমান অবস্থায় পোল্ট্রি শিল্পকে বাচিয়ে রাখতে হলে সরকারের কাছে স্বল্প সুদে ঋণের দাবী জানাই।
একই উপজেলার কলারং গ্রামের জালাল আকন বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ১’শ ২০ টাকা কেজির পোল্ট্রি মুরগী ৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। দুই লডে এক হাজার মুরগীতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লোকসান দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষগুলো পোল্ট্রি মুরগী ক্রয় করে। তাদের আয় বানিজ্য বন্ধ থাকার কারনে পোল্ট্রি মুরগী কেউ কিনছে না। এতে পোল্ট্রি শিল্পে ধস নেমেছে।
একই গ্রামের দেলোয়ার সিকদার বলেন, আরো ভাই আর কইয়েন না। ৬০ টাহা কেজিতে মুরহা বেচচি। সরকার সাহায্য না হরলে মোরা শ্যাষ।
আমতলী উপজেলার উত্তর রাওঘা গ্রামের খামারী জাহিদুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ২ হাজার ৮’শ মুরগী অন্তত দেড় লক্ষ টাকা লোকসানে বিক্রি করেছি। এই লোকসান কিভাবে কাটিয়ে উঠবো সেটা নিয়ে চিন্তিত। দ্রæত সরকারের কাছে সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণের দাবী জানাই।
গাজীপুর বন্দরের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী শাহীন হাওলাদার বলেন, ব্যবসায়ে ধস নেমেছে। ইতিমধ্যে ৮৫ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছি। সরকার আমাদের বিশেষ প্রনোদনা দিলে আমরা ঘুড়ে দাড়াতে পারতাম।
আমতলী উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমেছে। এ শিল্পকে বাচিয়ে রাখতে হলে বিশেষ প্রনোদনার প্রয়োজন।
তালতলী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. সৈয়দ আলতাফ হোসেন বলেন , পোল্ট্রি শিল্পকে বাচিয়ে রাখতে হলে বিশেষ প্রনোদনার প্রয়োজন। বর্তমান অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের নগদ প্রনোদনা দিলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে।
Leave a Reply