শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন
মতামত ডেস্কঃ
মৃত্যুদূত কোভিড-১৯ ভাইরাসটি সুযোগ পেলে যে কোন দেশে এবং যে কোন সম্প্রদায়ের শিশু ও পরিবারের মধ্যে বিস্তার লাভ করতে পারে। এ ভাইরাস প্রশমনে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পরিবার ও শিশুদের এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এ বিষয় সরকারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ের সহযোগী সংস্থাগুলো বাচ্চাদের করোনা আক্রান্ত থেকে মুক্ত রাখার জন্য একসাথে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিশুদের মনে করিয়ে দেয়ার বিষয়টি শুধু উদ্বেগ প্রশমনের সাথে সম্পর্কিত নয়। ছোট শিশুরা খুব কৌতূহলী হয়। তারা সবকিছু ছুঁয়ে দেখে। যেমন তারা যখন স্কুলে যায় তখন দেখা যায় বন্ধুদের সাথে খাবার ও পানীয় আদানপ্রদান করে। সাধারণত এটি রোগ জীবাণু ছড়ানোর অন্যতম কারণ। তাদেরকে পরিচ্ছন্নতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া, মানে চারপাশের মানুষজনকেও নিরাপদে থাকতে সাহায্য করা। শিশুদের উদ্বেগের অন্যতম উৎস হতে পারে তাদের অভিভাবকরাই, কারন ছোটরা যদি দেখে তাদের বাবা-মায়েরা নিজেরা উদ্বিগ্ন, তারা তাদের নানা ধরনের আলাপচারিতা শোনে এবং সেখান থেকে নিজেদের তথ্য সংগ্রহ করে। বাবা-মায়েরা শিশুদের সাথে কেমন আচরণ করবেন সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিৎ। সহপাঠীদের থেকে কী শুনছে সেটির উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখা খুব মুশকিল। তারা খবরের জন্য অভিভাবকদের উপর কম নির্ভরশীল। তথ্যের ব্যাপারে তারা তাদের বন্ধুদের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। এই মহামারি থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখতে ঘরে রাখার বিকল্প নাই। এই মুহূর্তে সকল বন্ধুবান্ধবদের থেকে আলাদা রাখতে হবে।
সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ বাড়ছে। এই রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকলেও বাঁচতে হলে তাদের এসব বিষয় সম্পর্কে জানাতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো– কোমলমতি শিশুরা করোনাভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। আর তারা অনেক কিছু বুঝতেও চায় না।
আসুন জেনে নিই শিশুকে কীভাবে বোঝাবেন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে?
শিশুদের বোঝাতে হবে, আমাদের যেমন ঠাণ্ডা লাগে, পেট খারাপ হয় ও বমি হয়, এই ভাইরাস তেমনি।
নিয়মিত হাত ধোয়ার বিষয়টি শিশুদের শেখাতে হবে। প্রয়োজনে শিশুকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ সকল স্বাস্থ্য সচেতনতা গল্প ছলে শিখাতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস আক্রান্ত এক-তৃতীয়াংশ শিশুর শরীরে সেভাবে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই সতর্ক থাকাটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি।
শিশুদের ক্ষেত্রে করোনা রোগের উপসর্গঃ
সাধারণ শিশুরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা, বমি ভাব, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগে।
শিশুদের শরীরে যেভাবে ভাইরাস প্রবেশ করে
শিশুদের সংক্রমণ সাধারণত দুভাবে হয়ে থাকে–
১.করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকে রোগ ছড়াতে পারে। আবার করোনা রয়েছে এমন জায়গায় ঘুরে আসার পরও এই রোগ সংক্রমণ হতে পারে।
২.আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে হাঁচি, কাশির মধ্যে দিয়ে নির্গত থুতুর ড্রপলেট অথবা কোনো সারফেস থেকে আসা ভাইরাস হাতের মাধ্যমে চোখ, নাক, মুখ দিয়ে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
শিশুদের থেকে কীভাবে রোগ ছড়াতে পারে?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ২৮ শতাংশের যেহেতু কোনো লক্ষণ সেভাবে দেখা যায় না। তাই বাড়ির অন্যরা মনে করেন তাদের সন্তান সুস্থ রয়েছে।
বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে তারা রোগ সংক্রমিত করতে থাকে। তাই অল্প লক্ষণ রয়েছে এমন শিশুরাও হাঁচি-কাশি ও হাতের মাধ্যমে অন্যদের রোগ সংক্রমিত করতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা যায় শতকরা ২৯ শতাংশ করোনা আক্রান্ত শিশুর মলের নমুনায় এই ভাইরাস এর অস্তিত্ব মিলেছে। তাই শিশুরা মলের মাধ্যমেও রোগজীবাণু ছড়াতে পারে।
শিশুর ফ্লু হলে কী করবেন-
★শিশুদের ফ্লু হলে তাদের ব্যবহৃত সব বাসনপত্র ও গামছা আলাদা করুন। দু’দিন পর খেয়াল করুন শিশুর কোনো রকম শ্বাসের সমস্যা হচ্ছে কি না। শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।
★টেস্ট পজিটিভ হলে ভয় না পেয়ে তাকে কোয়ারেন্টিনে রেখে সুস্থ করে তোলার কাজে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।
★সাধারণ ফ্লু হলে শিশুদের কয়েকদিন পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। যে ব্যক্তি শিশুর যত্ন নেবেন তিনি মাস্ক ব্যবহার ও ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন।
★বাড়ির বয়স্কদের থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।
★শৌচাগার ব্যবহারের পরে শিশুকে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়াতে হবে।
★শিশু যেন চোখ-নাক-মুখে হাত না দেয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন।
★শিশুদের শাকসবজি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।এছাড়া পরিমাণমতো পানিও পান করাতে হবে।
★শিশু ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। ভাল করে ঘুমোলে শিশুর ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে ও রোগের সঙ্গে তারা লড়তে পারবে।
মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে শিশুসহ পরিবারের সবাইকে করোনা সংক্রমণ রোধে কষ্টকর হলেও লকডাউন মেনে চলতে হবে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে বিরক্তিকর লকডাউন উত্তম।।
মো. আবু ইউসুফ (প্রভাষক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ) সরকারি মোজাহারউদ্দিন বিশ্বাস কলেজ, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply