রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী সংবাদদাতা।। প্রেমের সালিশে কিশোরীকেই বিয়ে করলেন বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের বিবাহিত চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার (৬০)। তার এ বিয়ে নিয়ে গোটা উপজেলাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনা ঝড় বইছে।
প্রেমঘটিত একটি সালিশ-বৈঠকে ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে পছন্দ হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ে করেন।
শুক্রবার (২৫ জুন) সকালে উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটে।
এদিকে সালিশ-বৈঠকে গিয়ে নিজের প্রেমিকাকে হারানোর ঘটনায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কিশোর। পরে রাতেই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার কনকদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার প্রথম স্ত্রী আছে। সেই সংসারে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বিবাহিত।
স্থানীয়রা জানান, কিশোরীর সঙ্গে এক কিশোরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে তারা দুজন পালিয়ে যায়। বিষয়টি কিশোরীর বাবা কনকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানানো হয়। এরপর চেয়ারম্যান আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেয়ার কথা বলে শুক্রবার কনকদিয়া ইউপি কার্যালয়ে ছেলে ও মেয়ের পরিবারকে যেতে বলেন। সে অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে দুই পরিবারের সদস্যরা ইউনিয়ন কার্যালয়ে যান। সেখানে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয় ওই চেয়ারম্যানের। তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান। ওই ছেলে এবং মেয়ের বিয়ের বিষয়ে আর কেউ কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
স্থানীয় লোকজন ও কিশোরীর পরিবারের ভাষ্য, কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। বিয়ের কাবিননামায় কিশোরীর জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল। কিন্তু বিদ্যালয়ে দেয়া জন্মনিবন্ধন ও পঞ্চম শ্রেণি পাসের সনদ অনুযায়ী, তার জন্মতারিখ ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল। বিয়ের পর কিশোরীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান চেয়ারম্যান। তবে বাড়িতে তার প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে প্রেমিকার বিয়ের খবর শুনে কিশোর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে পরিবারের সদস্যদের দাবি। অচেতন অবস্থায় শুক্রবার রাতেই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. ফিরোজ আলম।
শনিবার (২৬ জুন) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বেডে শুয়ে আছেন ওই কিশোর। তিনি এ প্রতিবেদককে দেখে বলেন, ‘ওকে আমার কাছে এনে দেন। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না।’
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমার সামনে লোক আছে। এখন কিছু বলব না।’ তবে তার মেয়ের সঙ্গে কিশোরের সম্পর্ক এবং চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় কাজি মো. আবু সাদেক বিয়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মেয়েটির জন্মনিবন্ধন দেখে আমি বিয়ে পড়িয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘নিজের প্রয়োজনে খুবই গরিব ঘরের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছি। কাউকে মেরে ফেলার হুমকি কিংবা জোর করার বিষয়টি সত্য নয়।’ তার নববিবাহিত স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তা সঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply