দূর্যোগ প্রশমন দিবসের সূফল পাচ্ছে না উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ | আপন নিউজ

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন

প্রধান সংবাদ
কলাপাড়ায় অর্ধ কোটি টাকা লোপাটের পর এবার ইউসিসি’র পকেট কমিটি গঠন! তালতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গণ’ধ-র্ষ’ণ মামলা আমতলীতে পুষ্টিসম্মৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত সম্প্রসারণে কৃষক মাঠ দিবস কলাপাড়া উপজেলা পর্যায়ে সার্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা কলাপাড়ায় গ্রামীণ জনপদের ৮৮ কিলোমিটার পাকা সড়কের বেহাল দশা আমতলীতে বজ্রপাতে হাফেজ ছাত্রের মৃ-ত্যু আমতলীতে প্রতিবন্ধীর প্রশিক্ষণ ভাতা প্রধান শিক্ষকের পেটে! আমতলীতে পুষ্টিসম্মৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত সম্প্রসারণে কৃষক মাঠ দিবস আমতলীতে ১০ হাজার কৃষক পেল কৃষি উপকরণ গলাচিপা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: তীব্র গরম উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে
দূর্যোগ প্রশমন দিবসের সূফল পাচ্ছে না উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ

দূর্যোগ প্রশমন দিবসের সূফল পাচ্ছে না উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ

মোঃ জসিম উদ্দিন সিকদার, আমতলী প্রতিনিধি: আজ ১৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) আর্ন্তজাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস। এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “দুর্যোগে আগাম সতর্কবার্তা, সবার জন্য কার্যব্যবস্থা”। সমুদ্র তীরবর্তী আমতলী ও তালতলীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে লক্ষাধীক মানুষ। এ প্রান্তিক জনগোষ্ঠি দুর্যোগ প্রশমন দিবস, সুনামী, ভুমিকম্প, বর্জ্রপাত, সাইক্লোণ ও জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে সচেতনতা থেকে বি ত। উপকুলীয় অঞ্চল প্রয়োজনের তুলনায় সাইক্লোণ সেল্টার অপ্রতুল। দুর্যোগে আশ্রয়ে উপকুলীয় অ লে আরো সাইক্লোণ সেল্টার প্রয়োজন। এ দিবস পালন উপলক্ষে আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস র‌্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

জানগেছে, সমুদ্র উপকুলীয় বুড়িশ্বর ও আন্ধারমানিক দুটি বৃহৎ নদীর মধ্যবর্তী স্থানে আমতলী ও তালতলী উপজেলা। তালতলীর পচাঁকোড়ালিয়া, কড়াইবাড়িয়া, শারিকখালী, ছোটবগী, বড়বগী, নিশানবাড়িয়া ও সোনাকাটা ইউনিয়ন সমুদ্র এবং আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া, আমতলী সদর, পৌরসভা ও গুলিশাখালী ইউনিয়ন পায়রা নদীর তীরবর্তী চরম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এ উপকুলীয় অ লে অনাদিকাল সাইক্লোণ, ঝড়, জলোচ্ছ¡াস,ঘূর্ণিঝড় আঘাত করায় ব্যাপক জান মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর আমতলী ও তালতলীর উপর দিয়ে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¦াস বয়ে যায়। এ জলোচ্ছ¡াসে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এবং শত কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আবার ২০০৭ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে আমতলী ও তালতলীর ২৯৭ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে এখনো ৪৯ জন নিখোজ রয়েছে। ২৫০০ জন আহত হয়। প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে তালতলীর বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী নিদ্রা, সখিনা, আশারচর, জয়ালভাঙ্গা ও ফকির হাট এলাকায় সবচেয়ে প্রাণহানী ঘটে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ সাগরে অবস্থানরত জেলেরা। জেলেদের অসচেতনতার জন্য এত প্রাণহানী বলে জানান সচেতন নাগরিক সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল হোসেন বিশ্বাস।

আমতলী ও তালতলী উপজেলার লক্ষাধীক মানুষ সমুদ্র উপকুলীয় অ লে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। এদের প্রধান পেশা নদী ও সাগরে মাছ শিকার। এ উপকুলীয় অ লের মানুষ সচেতনতা নেই বললেই চলে। এদের মধ্যে বেশীর ভাগ প্রান্তিক জেলে।

আমতলীতে নিবন্ধিত জেলে ৬ হাজার ৭’শ ৮৯ ও তালতলীতে ৭ হাজার ৮ শ’২১ জন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নিবন্ধনের বাহিরে অর্ধলক্ষ জেলে রয়েছে। নিবন্ধনের বাহিরে অধিকাংশ জেলে সাগর ও সাগর মোহনায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। এদের মধ্যে অনেকেই ঘূর্ণিঝড়, সুনামী, ভুমিকম্প, বর্জ্রপাত, সাইক্লোণ ও জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে সচেতনতা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে দূর্যোগ প্রশমনে সচেতনতা তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও উপকুলবাসী তা থেকে বি ত বলে অভিযোগ উপকুলবাসীর।

উপকূলীয় অঞ্চল বেড়িবাঁধ উঁচুকরণ, দুর্যোগকালে সমুদ্রে জেলেদের সাথে যোগাযোগের উন্নত মাধ্যম ব্যবহার, কমিউনিটি রেডিও চালুকরণ, সচেতনতা অনুষ্ঠান জোরদারকরণ, আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, বন্যাপ্রবণ এলাকায় কিল্লা নির্মাণ, বন্যা প্রতিরোধে সবার করণীয় নির্ধারণ করে গাইডলাইন নির্মাণের ওপর গুরুত্বরোপের দাবী জানান সচেতন নাগরিক সমাজ।

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় ১২৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২৪ আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার অনুপোযোগী। ওই আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে সাগর ও নদীর তীরবর্তী মাত্র ২০টি।

তালতলীর আশারচরের জেলে শাহাজাদা মিয়ার কাছে সুনামী, সাইক্লোণ ও জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনামী কি? বইন্যায় মোরা সাগরে জাল বাই আল্লায় মোগো বাঁচায়”। মোগো আর কেউ না থাকলেও আল্লায় আছে।

সখিনা গ্রামের জেলে নজরুল ইসলাম ও ছত্তার বলেন, সাগর সংলগ্ন আশারচরে মৌসুম ভেদে জাল ফেলি। এ জীবনে বহুবার বন্যার কবলে পরেছি কিন্তু সুনামী কি তা জানিনা। তারা অভিযোগ করে বলেন, কেউ কোন দিন জেলেদের ঝড়, সাইক্লোণ ও জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে সচেতন করতে আসেনি।
আশারচরের মন্টু বিশ্বাস ও সাইদুল ইসলাম বলেন, গত ২০ বছর ধরে সাগরে হাজার হাজার জেলে বন্যার কবলে পরতে দেখেছি। অনেক জেলেকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করেছি। নিজে বন্যার কবলে পরেছি কিন্তু কেউ কোন দিন সাইক্লোণ, জলোচ্ছ্বাস সুনামী, বর্জ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে সচেতন করতে আসেনি। তারা আরো বলেন, আশারচরে প্রায় ৫০ হাজার জেলে রয়েছে। এ সকল জেলেদের কেহ খোঁজ খবর নেয়নি, সচেতন করাতো দুরের কথা। আশার চরের জেলেদের বন্যা, সুনামী, বর্জ্রপাত, সাইক্লোণ, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতন করে তোলার দাবী জানান তারা।

সোনাকাটা ইউপি সদস্য আবদুস ছালাম হাওলাদার বলেন, সাগরের জেলেরা যুদ্ধ সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। তারা বন্যা, সুনামী, সাইক্লোণ, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতন নয়। এগুলো সম্পর্কে সচেতন করলে তারা উপকৃত হতো। সরকার তা না করে উপজেলা শহরের সচেতন মানুষকে সচেতন করছে। প্রান্তিক জেলে ও সাগর পাড়ের প্রতিটি অসচেতন মানুষকে সচেতন করলে দূর্যোগ প্রশমন দিবসের সুফল পাবে উপকূলবাসী। তিনি আরো বলেন, বর্তমান মৌসুমে যে পরিমান জেলে আশারচর এলাকায় অবস্থান করছে ওই পরিমান আশ্রয়কেন্দ্র এখানে নেই। সকল জেলেদের আশ্রয় দিতে হলে আরো আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন।

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসাইন বলেন, উপজেলায় ১২৩ টি সাইক্লোণ সেল্টার রয়েছে। এর মধ্যে ২৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার অনুপোযোগী। ঘুর্ণিঝড়ের সময় উপকুলীয় অ লের মানুষের আশ্রয় নেয়ার জন্য আরো সাইক্লোণ সেল্টার প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সাদিক তানভির (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, উপকুলের অ লের জনগোষ্ঠিকে সচেতন করতে কাজ করছি। উপকুলের মানুষকে রক্ষায় সাইক্লোণ সেল্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!