আমতলীতে বিএডিসির বীজে সিন্ডেকেট; ৬৭০ টাকার বীজ ধান ৭’শ ৫০ টাকা বিক্রি! | আপন নিউজ

সোমবার, ১৪ Jul ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ন

প্রধান সংবাদ
কলাপাড়ায় গৃহে ডা’কা’তি ও গৃহবধূকে ধ’র্ষ’ণের অভিযোগ: লু:টে নেয় প্রায় ২৪ লাখ টাকার মালামাল পটুয়াখালী এনসিপি’র পদযাত্রা সোমবার; কলাপাড়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার ও প্রস্তুতি আমতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় সান কোম্পানীর সেলসম্যান নি’হ’ত আমতলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে জোরপুর্বক তুলে নেয়ার চেষ্টা; দুটি ককটেল বি’ষ্ফো’রণ; আ’হ’ত-১০ কলাপাড়ায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে গৃহবধূর মৃ-ত্যু পটুয়াখালী জেলার শ্রেষ্ঠ এএসআই নির্বাচিত হলেন কলাপাড়ার রাসেল খান কলাপাড়া প্রেসক্লাবের ১১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত ঢাকাস্থ কলাপাড়া জাতীয়তাবাদী ফোরামের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত গলাচিপায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
আমতলীতে বিএডিসির বীজে সিন্ডেকেট; ৬৭০ টাকার বীজ ধান ৭’শ ৫০ টাকা বিক্রি!

আমতলীতে বিএডিসির বীজে সিন্ডেকেট; ৬৭০ টাকার বীজ ধান ৭’শ ৫০ টাকা বিক্রি!

আমতলী প্রতিনিধিঃ আমতলী উপজেলায় আমনের সরকারী বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) বিআর-৪৯ ও বিআর-২৩ ধানের বীজ উত্তর সোনাখালী গ্রামের মধু প্যাদা নামের এক ডিলার সিন্ডিকেট করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে তিনি নিয়ননীতি উপেক্ষা করে মধু প্যাদা বরিশাল ফরিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে বীজ এনে তার গোডাউনে মজুদ করে কৃত্রিম সংঙ্কট তৈরি করেছেন। ওই বীজ তিনি আমতলী, তালতলী, রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন দোকানে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে, গত বছর ডিলার মধু প্যাদার ক্রয়কৃত বীজে ধান হয়নি। এ নিয়ে কৃষকরা আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ও তালতলী উপজেলার কচুপাত্রা বাজারে মানববন্ধন করেছেন। এ বছরও তিনি একইভাবে বীজ ক্রয় করছেন। দ্রুত মধু প্যাদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা।

উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের বিএডিসি ডিলার হুমায়ুন ঢালী বলেন, মধু প্যাদা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিএডিসির অনুমোদন ছাড়া ধান সংগ্রহ করছে। ওই ধান তিনি আমতলী, তালতলী, রাঙ্গাবালি ও কলাপাড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। তিনি আরো বলেন, মধু প্যাদার সংগ্রহ করা ধান মুদি মনোহরী, কসমেটিক্স, গার্মেন্টেস’র দোকানেও যাওয়া যায়। ওই বীজ দোকানে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসন তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে তার অনিয়মের চিত্র। তার বিরুদ্ধে বরিশাল বিএডিসি অফিসের ডিডির কাছে অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি তিনি। তিনি আরো বলেন, আমরা ডিলার হয়ে ধান লোকসানে বিক্রি করি কিন্তু মধু প্যাদার বীজ দোকানে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে।

জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় এ বছর আমন চাষাবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। ওই জমির আবাদের জন্য বীজ ধান প্রয়োজন ৫’শ ৮০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৯৫% কৃষক ফলন ভালো হওয়ায় বিআর-৪৯, বিআর -২৩ জাতের বীজ ধানের চাষাবাদ করে থাকেন। পটুয়াখালী বিএডিসি কর্তৃপক্ষ এ বছর আমতলী উপজেলায় ৫৫ মেট্রিক টন আমনের বীজ ধান সরবরাহ করেছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। এতে বীজ সংকটে পরেছে উপজেলার কৃষকরা।

সোমবার উপজেলার ডিলার ও বীজের দোকানে বিআর – ৪৯ ও বিআর-২৩ জাতের ধানের বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। বীজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছে তারা (কৃষকরা)। কিছু ধান পাওয়া গেলেও তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। বিআর-৪৯ ও বিআর-২৩ ধানের বীজ ৬৭০ টাকার বীজ ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে ডিলার মোঃ মধু প্যাদা মেসার্স রেজবি এন্টার প্রাইজ ও মেসার্স সোনালী বীজ ভান্ডার নামের দুইটি প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনুমোদন ছাড়া বিএডিসির বীজ ক্রয় করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে মধু প্যাদা গত ২৫ দিনে ৬০ মেট্রিকটন বিএডিসির বীজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বরিশাল ফরিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রয় করে আমতলী উপজেলার মহিষকাটা বাজারের তার তিনটি গোডাউনে মজুদ করেছেন। ওই বীজ তিনি কৃত্রিম সংঙ্কট তৈরি করে বেশী দামে আমতলী, তালতলী, রাঙ্গাবালি ও কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করছেন বলে জানান কৃষক নজরুল ইসলাম।

রায়বালা গ্রামের জুয়েল হাওলাদার বলেন, ১০ কেজির বিআর-২৩ ধানের একটি বস্তা দোকান থেকে ৭৫০ টাকায় ক্রয় করেছি।

কাউনিয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, মহিউদ্দিনের দোকানে বিআর-২৩ জাতের ধান বীজ ক্রয় করতে গিয়েছিলাম কিন্তু বীজ পাইনি। তিনি আরো বলেন, শহরের বেশ কয়েকটি দোকানে ঘুরেও বীজ ক্রয় করতে পারিনি।

আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আফজাল হোসেন শরীফ বলেন, ১০ কেজি বিআর-৪৯ ধানের বীজ আমতলী থেকে ৭’শ ৫০ টাকায় ক্রয় করেছি।

মেসার্স রেজবি এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ মধু প্যাদা অতিরিক্ত দামে বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি সরকারীভাবে দুইটি লাইসেন্সে ৪ মেট্রিকটন বীজ পেয়েছি। এছাড়াও বীজের চাহিদা থাকায় বরিশাল জননী টেডার্সের মালিক ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে গত ২৫ দিনে ৬০ মেট্রিকটন বিএডিসির বিআর-৪৯ ও বিআর-২৩ জাতের ধানের বীজ ক্রয় করেছি। ওই ধান বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছি। আপনী বিএডিসির অনুমোদন ছাড়া একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এতো বীজ কিভাবে ক্রয় করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএডিসির সকল কর্মকর্তা আমার বীজ ক্রয়ের বিষয়টি জানেন। তাদের জানিয়েই আমি বীজ ক্রয় করেছি।

বরিশাল জননী টেডার্সের মালিক ফরিদ মিয়া বলেন, আমতলীর মধু প্যাদার কাছে বিএডিসির অনেক বীজ বিক্রি করেছি। তবে তার কাছে এতো বীজ কিভাবে বিক্রি করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ব্যবসায়ী স্বার্থে সকল কথা বলা যাবে না।

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার রাসেল মিয়া বলেন, আমনের বীজতলার শেষ মুহুর্তে কেউ যদি বেশী দামে বীজ বিক্রি করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রির অভিযোগে একজনের ডিলারশীপ বাতিল করা হয়েছে। কোন ডিলার বিএডিসির বীজ অন্য ডিলার থেকে ক্রয় করতে পারবে না।

বরিশাল বিএডিসির উপ-পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরণ করে বলেন, মধু প্যাদাসহ সকল ডিলার বাহির থেকে বীজ ক্রয় করলে আপনাদের সমস্যা কোথায়? আপনারা এতো বাড়াবাড়ি করেন কেন? আমি আপনাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসককে জানাচ্ছি।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, বিএডিসির বীজের কৃত্রিম সংঙ্কট তৈরি করে কোন ডিলার বেশী দামে বীজ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!