আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বরগুনার আমতলী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ১১ এপ্রিল। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন পেতে তৃণমুল নেতাকর্মী ও দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৃণমুল ডেলিগেটদের (প্রতিনিধি) টাকা দিয়ে সমর্থন আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন ও কালোটাকার মালিক প্রার্থীরা টাকা দিয়ে দলীয় ডেলিগেটদের সমর্থন আদায় করছেন। এছাড়াও তৃণমুল নেতাকর্মীদের মতামত ছাড়াই দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে চুড়ান্ত তালিকা তৈরির অভিযোগ রয়েছে। এতে জনপ্রিয় প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন তৃণমুল নেতাকর্মীরা। তৃণমুল কমিটির মতামত ছাড়া তালিকা তৈরিতে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রæত এর বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তারা।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৮ মার্চ, বাছাই ১৯ মার্চ ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২৪ মার্চ ও নির্বাচন ১১ এপ্রিল। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে উপজেলা আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছেন। ছয়টি ইউনিয়নে ৩৮ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ছয়টি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য উপজেলা কমিটি তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ইউনিয়নে ইউনিয়নে বিশেষ বর্ধিত সভার আহবান করেন। শনিবার গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নে বর্ধিত সভা সম্পন্ন করেছে। কিন্ত অনিবার্য কারনবসত হলদিয়া ইউনিয়নের বর্ধিত সভা স্থগিত করেছে উপজেলা কমিটি। কেন্দ্রিয় কমিটির নির্দেশ রয়েছে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কমিটির সকল সদস্য ও ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির (ডেলিগেট) প্রতিনিধিরা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থন জানাবেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী তালিকা প্যানেল করে জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ। তৃণমুল প্রতিনিধিদের সমর্থন পেতে অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনিসহ দুই প্রার্থী তাদের টাকা ও উপহার সামগ্রী দিয়ে সমর্থন আদায় করেছেন বলে অভিযোগ করেন গুলিশাখালী ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আসাদুর রহমান আসাদ মৃধা। এদিকে বর্ধিত সভায় গুলিশাখালী ইউনিয়নে তৃণমুল নেতাকর্মীদের সমর্থনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন তালিকা চুড়ান্ত করা হলেও আঠারোগাছিয়া ও কুকুয়া ইউনিয়নে তৃণমুল কমিটির মতামত নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমুলের কয়েকজন নেতাকর্মী। এতে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অপর দিকে চাওড়া ইউনিয়নের বর্ধিত সভায় কন্ঠ ভোটে বর্তমান চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খানকে সমর্থন দিয়েছেন তৃণমুল নেতারা। প্রত্যক্ষ কন্ঠ ভোটে সমর্থন দেয়ায় কিছু নেতা কর্মীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান মনোনয়ন প্রত্যাশী আলমগীর কবির মোল্লা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলিশাখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কমিটির কয়েকজন বলেন, গত পাঁচ বছরে কেউ খবর দেননি। এখন তারা দলীয় সমর্থন নিতে আমাদের টাকা দিয়েছেন। আমরা টাকা নিয়ে দুই জনকে সমর্থন দিয়েছি।
গুলিশাখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনয়ন প্রত্যাশী মোঃ আসাদুর রহমান আসাদ মৃধা বলেন, অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনিসহ দুই প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির প্রতিনিধিদের টাকা দিয়ে সমর্থন নিয়েছেন।
কুকুয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সদস্য চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মাওলানা মোঃ ফজলুল হক বলেন, আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে ক্রম অনুসারে মনোনয়ন তালিকা করতে উপজেলা কমিটির কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম কিন্তু উপজেলা কমিটি আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মতামত না নিয়ে তাদের ইচ্ছামত দলীয় প্রার্থী তালিকা করেছেন।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক চাওড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মোঃ আলমগীর কবির মোল্লা বলেন, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সাত জনের মধ্যে ছয় জনে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়ন তালিকা চুড়ান্তের পক্ষে মত দিয়েছিলাম কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খান তৃণমুল নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটের প্রস্তাব দেন। যার কোন বিধান নেই। তিনি আরো বলেন, উপজেলা কমিটি চার জনের তালিকা করে জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তারা ওই বর্ধিত সভায় কারো নাম প্রকাশ করেনি।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট এমএ কাদের মিয়া বলেন, দলের সুবিধার সার্থেই তৃণমুল নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েই চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন তালিকা করেছি। ওই তালিকা জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত মনোনয়ন দিবেন। এখানে উপজেলা কমিটির হাতে কিছুই নেই।
Leave a Reply