আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
আমতলীতে ডায়েরিয়া প্রকট আকারে ধারন করায় কলেরা স্যালাইনের প্রচুর চাহিদা দেখা দিয়েছে।
গত চারদিন ধরে আমতলী উপজেলার ঔষধের দোকানে কলেরা স্যালাইন নেই। স্যালাইন না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছে উপজেলার ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী ও তার স্বজনরা। পাঁচটি ঔষধ কোম্পানী কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না করায় উপজেলাব্যাপী স্যালাইন শুন্য হয়ে পরেছে বলে দাবী করেন আমতলী উপজেলা ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ূন কবির। উপজেলার কলেরা আক্রান্ত রোগীদের বাঁচাতে দ্রæত স্যালাইন সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানাগেছে, গত ১৬ মার্চ উপজেলায় ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে। গত এক মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক হাজার ২৫ জন ডায়েরীয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান ডাঃ ইমদাদুল হক চৌধুরী। বে-সরকারী মতে ডায়েরীয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েক হাজার বলে বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে। শুরু থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ কলোরা স্যালাইন সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু গত ১ এপ্রিল থেকে উপজেলায় মহামারি আকারে ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীদের সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৬ হাজার স্যালাইন মজুদ করে। কিন্তু গত ২১ দিনে ৫ হাজার তিন’শ স্যালাইন শেষ হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে দিন দিন ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কলোরা স্যালাইনের প্রচুর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ওরিয়ন, অপসোস্যালাইন, লিবরা, বেক্সিকো ও স্কয়ার কোম্পানী প্রয়োজনের তুলনায় কম স্যালাইন সরবরাহ করছে বলে দাবী করেন ঔষধ ব্যবসায়ীরা। গত ১৫ দিন ধরে উপজেলায় ডায়েরিয়া মহামারি আকার ধারন করছে। উপজেলা হাসপাতাল থেকে রোগীদের চাহিদামত স্যালাইন সরবরাহ করছে না বলে দাবী করেন রোগীর স্বজনরা। এতে কোম্পানীর কলেরা স্যালাইনের প্রচুর চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু পাঁচটি কোম্পনাী চাহিদামত স্যালাইন সরবরাহ করছে না। কোম্পানীগুলো চাহিদামত সরবরাহ না করায় বাজার শুন্য হয়ে পড়ে কলেরা স্যালাইন। শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত আমতলী উপজেলার ঔষধের দোকানে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ দাবী করেন প্রয়োজনীয় কাচামাল না থাকায় চাহিদামত উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে সরবরাহ কমে গেছে।
রোগীর স্বজন সুলতান মিয়া বলেন, হাসপাতালের সামনের সকল ঔষধের দোকান ঘুরেও একটি স্যালাইন পেলার না। রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। স্যালাইন সংগ্রহ করতে না পারলে কি হয় আল্লায় জানে।
ফাতেমা নামের একজন বলেন, শহরের অধিকাংশ ঔষধের দোকান ঘুরেও স্যালাইন পাইনি। রোগীর অবস্থা খারাপ। হাসপাতাল থেকে দুটি স্যালাইন দিয়েছে তাতো শেষ হয়ে আসছে।
বুধবার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে আব্দুল্লাহ মেডিকেল হল, নাছরিন মেডিকেল হল, রায় মেডিকেল হল, আল আমিন মেডিকেল হল ঘুরে কোন স্যালাইন পাওয়া যায়নি। রোগীর স্বজনরা হুমরি খেয়ে ঔষধের দোকান ঘুরলেও স্যালাইন পাচ্ছে না।
আব্দুল্লাহ মেডিকেল হলের মালিক মোঃ রাসেদুল হাসান রাসেল বলেন, চারদিন ধরে স্যালাইন নেই। পাঁচটি কোম্পানী স্যালাইন সরবরাহ করে থাকেন কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করে পাচ্ছি না। ঔষধ কোম্পানীর সকল প্রতিনিধি মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, কি করবো রোগীর স্বজনরা এসে পিরাপিরি করছে।
নাছরিন মেডিকেল হলের মালিক মোঃ কামাল মিয়া বলেন, স্যালাইন নেই। রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছে। কোম্পানীগুলো ফোন বন্ধ করে রেখেছে। রোগীর স্বজনদের যন্ত্রনায় অস্থির।
আল আমিন মেডিকেল হলের মালিক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, কোন স্যালাইন নেই। রোগীর স্বজনদের পিরাপিরিতে আমরা দিশেহারা। তিনি আরো বলেন, এমন কলেরা স্যালাইন শুন্য আমতলীতে গত ১০ বছরে হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মোনায়েম সাদ আপন নিউজকে বলেন, এ মাসের শুরুতে ৬ হাজার স্যালাইন সংগ্রহ করেছি। গত ২১ দিনে ৫ হাজার ৩০০ স্যালাইন খরচ হয়েছে। অবশিষ্ট ৯০০ স্যালাইন দিয়ে চলতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারী স্যালাইনের পাশাপাশি কোম্পানীর স্যালাইন রোগীর স্বজনদের সংগ্রহ করতে বলা হলেও তারা তা পাচ্ছে না। বাজারে কোম্পানীর স্যালাইন সরবরাহ নেই।
Leave a Reply