শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন
ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকুলী প্লাবিত; বাঁধ ভাঙ্গার আতঙ্কে ৩০ হাজার মানুষ
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাগর ও পায়রা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকুলীয় এলাকা আমতলী ও তালতলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়ী ও পুকুর তলিয়ে গেছে। মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ এবং পার্শ্ববর্তী সাইক্লোণ সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। আমতলী উপজেলার ৩০ হাজার মানুষ বাধ ভেঙ্গে পানিতে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে।
আমতলী পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানাগেছে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াস ও আমবশ্যার জোঁর প্রভাবে সাগর ও পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপদসীমার ৩ ফুট উপরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকুলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘর-বাড়ী ও পুুকুর তলিয়ে গেছে। কুকুয়া ইউনিয়নে পুর্ব কৃষ্ণনগর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার। তিনি ওই বাধ সংস্কার কাজ শুরু করেছেন। মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ এবং পার্শ্ববর্তী সাইক্লোণ সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে উপকুলীয় অঞ্চলে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। হালকা দমকা বাতাসের সাথে ভারি বজ্র বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পায়রা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী-পশুরবুনিয়া ও ডাঙ্গার খাল এলাকায় ৫’শ মিটার, চাওড়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঘটখালী এলাকায় ২’শ মিটার, গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা এলাকায় ৩’শ মিটার, হলদিয়া ইউনিয়নের পুর্ব চিলা এলাকায় ২’শ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ঝুকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এতে ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ আতঙ্কে বাঁধ এলাকায় বসবাস করছে।
আমতলী ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রে সুত্রে জানাগেছে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াস পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দুরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীতে দুই নম্বর হুসিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগরে ৬৫ দিনের মাছ শিকার বন্ধ থাকায় জেলেরা কিনারে অবস্থান করছে। কিন্তু মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাগরে ট্রলার ও জেলে নৌকা অবস্থান করে থাকলে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দু’উপজেলার সাগর ও পায়রা নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরে বালিয়াতলী, ঘোপখালী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, লোচা, আমতলী পৌরসভার ফেরিঘাট, শ্মশাণঘাট, পানি উন্নয়ন বোর্ড, আঙ্গুলকাটা, গুলিশাখালী, গুলিশাখালীর জেলে পল্লী, পঁচাকোড়ালিয়া, ছোটবগী, মৌপাড়া, গাবতলী, চরপাড়া, তালতলী, খোট্টারচর, তেঁতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা, নলবুনিয়া, ফকিরহাট, নিদ্রাসকিনা ও আমখোলাসহ উপকুলের অধিকাংশ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরের নিম্নাঞ্চল পানিয়ে তলিয়ে গেছে। ওই নিম্ন অঞ্চলে বসবাসরত ঘর-বাড়ী ও পুকুর তলিয়ে গেছে। মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ এবং পার্শ্ববর্তী সাইক্লোণ সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।তালতলী ফকিরহাট বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোঃ ছালাম হাওলাদার বলেন, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব সাগর ও নদী উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধের বাহিরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। নিম্নঅঞ্চলের মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
গাবতলী আবাসনের আব্দুল ছত্তার হাওলাদার, জালাল ও লাইলি বলেন, জোয়ারের পানিতে আবাসন তলিয়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের উপরে অবস্থান করছি।
আমতলী পৌর শহরের আমুয়ার চর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পানিতে ঘর-বাড়ী তলিয়ে গেছে।
আমতলী ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী সহকারী পরিচালক এম মাহতাবুল বারী বলেন, ঘুর্ণিঝড় ইয়াস পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দুরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ইয়াস মোকাবেলায় ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। মানুষকে নিরাপদে আনতে ইতিমধ্যে সেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ঘুর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় মানুষকে সচেতন ও জেলেদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলার সকল সাইক্লোণ সেল্টার খোলা রাখা রয়েছে। সাইক্লোণ সেল্টারগুলো পরিষ্কার পরিছন্ন করে বসবাস উপযোগী করা হয়েছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম বলেন, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পায়রা নদীতে বিপদসীমার উপরে ৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা রক্ষায় কাজ চলছে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply